বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা, যা জানা প্রয়োজন - দৈনিকশিক্ষা

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বিড়ম্বনা, যা জানা প্রয়োজন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ফাতেমা কাশফিয়ার বাসায় লোকসংখ্যা মাত্র তিন জন। তিনি জানালেন, সবাই কর্মজীবী হওয়ায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কেউই বাসায় থাকেন না। ফলে বিদ্যুত খরচও হয় না তেমন। অথচ গত কয়েক মাসের বিদ্যুত বিলের পরিমাণ দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বসানোর পর থেকেই এতো অসামঞ্জস্যতা বলে জানান মিসেস কাশফিয়া। বুধবার (২৬ জুন) বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সানজানা চৌধুরী। 

আমাদের বাসায় বেসিক যে ডিভাইজগুলো আছে ফ্যান লাইট, টিভি, ফ্রিজ-এগুলোই চলে। কোন এসিও নাই। অথচ এখন পাঁচশ টাকায় এক সপ্তাহও চলে না। আগে এক হাজার/ ১২শ' টাকায় পুরো মাস চলতো। অথচ গত মাসেই আমরা বিল দিলাম আড়াই হাজার টাকা। পোস্ট পেইডে, এমনটা কখনোই হয়নি। সেইসঙ্গে বাড়তি ভোগান্তি হিসেবে যোগ হয় এই মিটারের বিল পরিশোধের বিষয়টি। কেননা এখনও এই সেবা সব জায়গায় না থাকায় বিল পেমেন্ট করা যায় হাতে গোনা কয়েকটি স্থানে।

মিসেস কাশফিয়া বলেন, "আমাদের মিটার বাসার বাইরে হওয়ায় আমরা কোন সিগনাল পাইনা যে কি পরিমাণ ইউজ করেছি, কতোটুকু বাকি আছে। এ কারণে মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে ক্রেডিট শেষ হয়ে কারেন্ট চলে যায়। বুঝিও না এটা লোডশেডিং নাকি মিটারের ক্রেডিট শেষ। পরে রিচার্জ করতে আবারও গরমের মধ্যে/ বৃষ্টির মধ্যে দূরে গিয়ে রিচার্জ করতে হয়।"

প্রায় একই ধরনের অভিযোগ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বাসিন্দা রোকসানা সিদ্দিকার। পোস্ট পেইডের চাইতে প্রিপেইডের মিটারে তার দ্বিগুণ বিল আসছে বলে তিনি আমাকে জানান। মাসে পাঁচশ টাকার কার্ড ভরি, কিন্তু মাস যায় না। লাইন কাইটা যায়। আগে ৪০০/৪৫০ টাকায় মাস পুরাইতো। আর এখন কার্ড ভরলেই ১৩০ টাকা কাইটা রাখে। কি জন্য কাটে জানিও না। কেউ কিছু বলেও না। এভাবেই চলতেসে।

বাড়তি বিলের কারণ কী?

সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সমন্বয়কারী সংস্থা পাওয়ার সেল-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে অন্তত ৩৩ লাখ প্রিপেইড মিটার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দেশের আড়াই কোটি গ্রাহকের মধ্যে অন্তত দেড় কোটি গ্রাহকের কাছে ২০২১ সাল নাগাদ প্রিপেইড মিটার পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানায় তারা। যার লক্ষ্য বিদ্যুতের অপচয় নিয়ন্ত্রণ এবং ভুতুড়ে বিল নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানেো।

তবে এখন থেকেই প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা যেসব অভিযোগ করছেন, সে ব্যাপারে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি- ডিপিডিসি জানিয়েছে, বিদ্যুতের লাইনে আগে থেকেই ত্রুটি থাকলে বা সিস্টেম লসের কারণে বিলের পরিমাণে তারতম্য হতে পারে।

ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, কিছু আভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকতে পারে, সেদিন এক গ্রাহকের অভিযোগ পেয়ে আমরা গেলাম, দেখি তারের যে নিউট্রালটা, মানে যেখানে দুটা তার যুক্ত হয় সেটা ঠিকভাবে সংযোগ দেয়া নাই। ফলে মিটারে একটু বেশি চার্জ হচ্ছিল। ওটা পরে আমরা মেরামত করে দেই। এছাড়া সিস্টেম লস বা লাইনে ত্রুটি থেকেও এমনটা হতে পারে। কিন্তু মিটারের মাধ্যমে বাড়তি টাকা কাটার কোন সুযোগ নেই।" তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে জানানো হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে । এছাড়া কার্ড রিচার্জের বিড়ম্বনা এড়াতে ভেন্ডিংগুলো মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কথাও জানান তিনি। সেজন্য বিভিন্ন টেলিকম ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির ভিত্তিতে সেলিং পয়েন্ট বাড়ানো হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অর্থাৎ মানুষ যেভাবে মোবাইলে ক্রেডিট রিচার্জ করে ঠিক সেভাবেই যেন বিদ্যুতের প্রি পেইড কার্ড রিচার্জ করা যায়, সেই ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।


প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কাটা হয় কেন?

এছাড়া প্রতি মাসে কার্ড রিচার্জের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে টাকাটি কেটে রাখা হয় সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছে পাওয়ার সেল।

মূলত, গ্রাহকের ডিমান্ড চার্জ, মিটারের ভাড়া এবং ভ্যাট এই তিনটি হিসেবে প্রতিমাসে একবার টাকাটা কেটে নেয়া হয়।

মিটারের ভাড়া পাঁচ বছর মেয়াদে গ্রাহকদের থেকে কিস্তিতে কেটে রাখ হয়। তবে কেউ যদি নিজে মিটার কিনে বসান, সেজন্য মিটার ভাড়ার খরচ দিতে হবে না।

মিটারের এই খরচ এর ধারণক্ষমতা হিসেবে বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন সিঙ্গেল ফেজের মিটারের জন্য গ্রাহককে মাসে ৪০ টাকা এবং থ্রি ফেজ মিটারের জন্য মাসে ২৫০ টাকা দিতে হয়।

শুধুমাত্র মিটার ভাড়া ছাড়া বাকি চার্জগুলো পোস্ট পেইড বিলেও কাটা হতো বলে জানান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন।

তিনি বলেন, "পোস্ট পেইডে যে কাগজের প্রিন্ট করা বিলটা দেয়া হয়, সেটাতে খেয়াল করে দেখবেন যে প্রতি কিলোওয়াট ২৫ টাকা করে একটি ডিমান্ড চার্জ থাকে। এখন যে যতো ওয়াট নেবে তার ডিমান্ড চার্জ ততো আসবে। কেউ যদি দুই কিলোওয়াট নেয়, তাহলে তার চার্জ আসবে ৫০ টাকা।"

"এরপরে আছে মিটারের ভাড়া আর ভ্যাট। তো এই তিনটা যোগ করে যেটা আসে, সেটা প্রতিমাসে কেটে রাখা হয়। মিটারের ভাড়া ছাড়া বাকি দুটো চার্জ পোস্ট পেইডেও দিতে হতো।"

অভিযোগ করবেন কার কাছে?

এসব খরচ বাদে যদি গ্রাহকদের কাছে মনে হয় বিল অস্বাভাবিক আসছে তাহলে সে বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে সরাসরি অভিযোগের সুযোগ রয়েছে বলে জানান কনজিউমার্স অ্যাফেয়ার্সের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান।

তিনি আরও বলন, আমাদের কমিশনের আইনানুযায়ী ভোক্তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তির সুযোগ আছে। সেক্ষেত্রে কোন ভোক্তা যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করে, তখন আমারা বিষয়টা সংশ্লিষ্ট বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাই যেন তারা সমাধান করে দেন। অনেক সময় আমাদের মিটারে সমস্যা থাকে। আবার অনেক সময় দেখা যায় একজনের লাইন আরেকজন চালায়। দুইদিকেই সমস্যা পাওয়া গেছে।

গ্রাহকরা এই অভিযোগ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বা তাদের নিকটস্থ বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানির অফিসে লিখিতভাবে জানাতে পারবেন।

এছাড়া কমিশনের ওয়েবসাইটে দেয়া ইমেইল ঠিকানা বা হেল্প লাইনের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানোর সুযোগ রয়েছে ।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0097301006317139