বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে দরপত্রের প্রধান শর্ত মানছে না ৩২ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ইন্সপেকশন এজেন্ট ‘বালটিক বিডি লিমিটেড’ পরিদর্শন শেষে এমন তথ্যই জমা দিয়েছে বোর্ডের কাছে। শর্ত না মেনে এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতারণা করেছে বলে মনে করছে এনসিটিবি। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য চেয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শর্ত ভঙ্গের কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তও করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই নিজস্ব প্রেস ও নিজস্ব বাঁধাইখানা থাকতে হবে। কিন্তু ৩২টি প্রতিষ্ঠানই বই ছাপার এবং বাঁধাইয়ের কাজ অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে করছে। এদের অনেকের ছাপাখানা থাকলে বাঁধাইখানা নেই। আবার বাঁধাইখানা থাকলে ছাপাখানা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই ৩২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো প্রেস নেই। বালটিক বিডির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাধ্যমিক স্তরের কাজ পাওয়া ১৩ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রেস অথবা বাঁধাইখানা নেই। এগুলো হচ্ছে-কমলা প্রিন্টিং প্রেস, পল্টন; নিউ ফাইভস্টার, সুত্রাপুর; ফাইভস্টার, সুত্রাপুর; আল-বারাকা প্রেস, বাংলাবাজার; তকদির প্রিন্টিং প্রেস, বাংলাবাজার; অয়ন প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর; রিফাত প্রিন্টিং প্রেস, লক্ষ্মীবাজার; আলমগীর প্রিন্টিং প্রেস, জিন্দাবাজার; শামীম প্রিন্টিং প্রেস, কবিরাজ লেন, ঢাকা প্রিন্টার্স, শিরিশ দাস লেন; রাইয়ান প্রিন্টার্স, সুত্রাপুর; ক্যাপিটাল প্রিন্টার্স, গেন্ডারিয়া এবং উষা প্রিন্টার্স, জিন্দাবাজার।
এ ছাড়া বাকি ১৯ প্রতিষ্ঠানের কারো কারো নিজস্ব প্রেস থাকলেও তা নামেমাত্র। কাজ হচ্ছে অন্যখানে। এসব প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- মানামা প্রিন্টার্স, সুত্রাপুর; এস.এস প্রিন্টার্স, মুসলিমনগর; মহানগর প্রিন্টিং প্রেস, মাতুয়াইল; রেজা প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর; বৃষ্টি প্রিন্টিং প্রেস, নিমতলী; কোহিনুর আর্ট প্রেস, মাতুয়াইল; হাসান প্রিন্টিং প্রেস, বাংলাবাজার; বোরাক প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর; একতা প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর; নরুল ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস, বাংলাবাজার; হেরা প্রিন্টার্স, সুত্রাপুর; ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর; দিগন্ত অপসেট প্রেস, সুত্রাপুর; মডেল প্রিন্টিং ওয়ার্কস, সুত্রাপুর; আবুল প্রেস, আগামাসি লেন; টাংগাইল অফসেট প্রেস, সুত্রাপুর; ফেইথ প্রিন্টিং প্রেস, গেন্ডারিয়া, রাবিবল প্রিন্টিং প্রেস, সুত্রাপুর এবং মহানগর অফসেট প্রেস, মাতুয়াইল।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বিধি ভঙ্গ করে যারা কাজ নিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এরপর নিয়মানুযায়ী আর্থিক দণ্ড ও কালো তালিকাভুক্ত করারও সুযোগ রয়েছে।’
কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত: এদিকে বিধি ভঙ্গ করে বই ছাপার কাজ দেওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে পাণ্ডুলিপির সিডি সরবরাহ না করা, কার্যাদেশ দেওয়ার পরও ইন্সপেকশন না হওয়ায় কাজ শুরু করতে না পারাসহ নানা কারণে সকল বইয়ের মুদ্রণ ও বাঁধাই কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। গত সোমবার এক জরুরি বৈঠকে সমিতির সদস্যভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানের কাজ গতকাল মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।