বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: সমন্বিত পরীক্ষার বিরুদ্ধে কিছু শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়েছেন কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

বাংলাদেশের সবকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আয়োজিত এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে আগামী বছর থেকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিবিসি অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  গতকাল এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর ভর্তি পরীক্ষার মান এবং সেখানে দলীয়করণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন কিছু কিছু শিক্ষক।

যে কারণে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়মে এবং সময়ে। বিষয়ভেদে এই পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি এবং সময় থাকে ভিন্ন।

অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে চাইলে তাকে তিন রকমের প্রস্তুতি এবং সময় ব্যয় করতে হয়।

অনেক সময় একই তারিখে পড়ে যায় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।

সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর একটি ছেড়ে অন্যটিতে পরীক্ষা দিতে হয়।

এসব জটিলতা দুর করার জন্য সময় এবং অর্থ ব্যয়ের কমানোর কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সিদ্ধান্ত দেয় যে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে।

মানহীন শিক্ষার্থী ভর্তি ও দলীয়করণের আশঙ্কা
কিন্তু কিছু শিক্ষক সময় এবং অর্থ বাঁচানোর জন্য এই পদ্ধতিকে স্বাগত জানালেও কয়েকটি বিষয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তৌহিদুল হক বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতির যে ঐতিহ্য রয়েছে সেটা মেনেই পরীক্ষা নেয়া সমীচীন হবে।

তিনি বলেছেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজেদের মত করে ভাবতে হবে।"

"আমাদের এখানকার শিক্ষার্থীদের যে ধরণের বৈশিষ্ট্য আমরা চাই বা কোন ধরণের শিক্ষার্থীদের আমরা নির্বাচন করবো ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে এবং তাদেরকে কীভাবে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে তৈরি করবো, সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজে চিন্তা করতে হবে।"

কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, ব্যবসা এবং কলা অনুষদে আলাদা ইউনিট ভিত্তিক পরীক্ষা হয় আবার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যেকটা বিষয়ে আলাদা করে পরীক্ষা হয়। এসব ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি থেকে বিপুল পরিমাণ আয় হয়।

এছাড়া বড় অংকের টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগও প্রায়ই পাওয়া যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়ার একটি কারণ হিসেবে দেখছেন। তবে তিনি বলছেন সমন্বিত পরীক্ষা হলে দলীয়করণের একটা শঙ্কা রয়ে যাবে।

"যেটা আমাদের উদ্বেগ, সেটা হল আমাদের সবার মধ্যে একটা অবিশ্বাস আছে যে এটা কে পরিচালনা করবে, আবার দলীয়করণের কোন ব্যাপার হবে কিনা। সেটা হলে পরে আমরা যে মানের মেধাবী শিক্ষার্থী চাই তারা আসবে না"

"কারণ এখানে যদি খুব কেন্দ্রীভূত করা হয় তাহলে দলীয়করণের সুযোগ তৈরি হবে যেটা খুব চিন্তার বিষয়", বলেন মীর্জা তাসলিমা সুলতানা।

এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদিন ধরে এই সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে আসছে।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কবির হোসেন বলেছেন তারা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।

কবির হোসেন বলেন, "আমরা অনেক আগেই পদক্ষেপ নিয়েছি এই সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার জন্য। সেই সময় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বুঝে উঠতে পারেনি।"

"বাংলাদেশে একই দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয়। তখন তারা কোন না কোন পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে যে সমন্বিত পরীক্ষা নিয়েও মেধা তালিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যায়।"

এদিকে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় চলে, তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, এই চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েট তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানান এই পদ্ধতি নিয়ে এখন দীর্ঘ আলোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।

উপাচার্য বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্নভাবে সিদ্ধান্তগুলো নির্ধারণ করে। বিভিন্ন সংস্কার বা যেকোন কিছু করতে হলে আমরা বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে আমরা এটা করি। ফলে আমাদের আইনের শাসন, গণতন্ত্রের মূল্যবোধের মত বিষয়গুলোকে সমুন্নত রেখে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটানো যায়। অনেকগুলো বিষয় আছে যেগুলো আমলে নিয়ে আমাদের এগোতে হবে।"

সারা দেশের ৪৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্যে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় পরীক্ষা দিয়ে থাকেন।

মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর  জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদেরকে যাতে আর এ ধরনের হয়রানি পোহাতে না হয় সেজন্যে সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।

এদিকে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন যে বিষয়ে একাধিক শিক্ষকের মতামত থাকবে সেটা উপেক্ষা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত হবে সেই সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানো।

ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049500465393066