বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামুখী শিক্ষা চাই - Dainikshiksha

বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামুখী শিক্ষা চাই

সাব্বির রহমান কাউসার |

সাধারণত আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে করা হয় জ্ঞান অর্জনের জায়গা। কিন্তু আদতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জনের জায়গা নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। এখানে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি হবে। এখানে পৃথিবী বিখ্যাত দার্শনিকদের থিওরিগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হবে। নতুন নতুন থিওরি দেওয়া হবে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এ কাজটা আরো সহজ হয়ে এসেছে এখন। জ্ঞান সৃষ্টির জন্য দরকার উন্নত গবেষণা, গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, গবেষণার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। এখন আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকানো যাক।

বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। এখানে প্রধান তিনটি অনুষদ হচ্ছে কলা, ব্যবসায় শিক্ষা এবং বিজ্ঞান অনুষদ। কলা অনুষদের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। এখানে গবেষণা হচ্ছে একদমই কম যেটা না হওয়ারই মত। এখানের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে থেকে অথবা তারও পরে। তবে  দুয়েকজন ব্যতিক্রম আছে। আবার  কিছু কিছু বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা মনে করে তাদের বিভাগে পড়াশোনা করে চাকরির বাজারে তেমন কোনো চাহিদা থাকে না । তাই তারা একাডেমিক পড়াশোনা অনেকটাই বাদ দিয়ে দেয় এবং শুরু থেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরা মূলত জ্ঞান সৃষ্টি দূরে থাক, জ্ঞান অর্জনই করে না। আশ্চর্যের বিষয়, কিছু কিছু বিভাগে খুবই স্বল্প পড়াশোনায় অনেকেই প্রথম বিভাগ পেয়ে পরের সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হয়।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ হচ্ছে এখানকার অন্যতম আকর্ষণীয় একটা অনুষদ। প্রযুক্তির ছোঁয়া স্পষ্ট এ অনুষদে। এখানকার প্রায় প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকরা স্লাইড দেখে দেখে পড়ান। অভিযোগ রয়েছে এখানকার বিভাগগুলোতে এসাইনমেন্ট শিক্ষকরা ভালোভাবে পড়ে মার্কিং করেন না। এছাড়াও এই অনুষদে মার্ক দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসীম ক্ষমতা রয়েছে। কারণ এখানে কোনো সেকেন্ড এক্সামিনার খাতা দেখেন না। এই অনুষদেও দুয়েকটা বিভাগ বাদে অনেক বিভাগেই ছাত্র-ছাত্রীরা খুব সহজেই প্রথম বিভাগ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

বিজ্ঞান অনুষদে কিছুটা গবেষণা হয়। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। তারা কিছুটা স্বকীয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। তবে দিন দিন এই অনুষদও গবেষণায় পিছিয়ে পড়ছে। এই অনুষদে এখন আর সত্যেন বোস তৈরি হয় না।

এই অবস্থার কারণ কি?  এক.  এর কারণ হচ্ছে চাকরিমুখী পড়াশোনা।  আমাদের এই ভূখণ্ড একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিলো। ব্রিটিশরা আমাদের মূলত এমন একটা শিক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে গেছে যে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য চাকরি। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি যোগাড় করতেই হবে।  নইলে সমাজের কাছে মুখ দেখানো যাবে না। অভিভাবক আর সমাজের উচ্চাকাঙ্ক্ষাই ছাত্র-ছাত্রীদের চাকরিমুখী শিক্ষায় নিয়োজিত করে।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে মেধার মূল্যায়ন না হওয়া। অনেক সময় প্রকৃত মেধাবীরা মূল্যায়িত হয় না ফলে তারা গবেষণাবিমুখ হয়ে পড়ে। তৃতীয়ত পর্যাপ্ত গবেষণা বরাদ্দ না থাকা।  প্রতিবারই বাজেটে শিক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ দেওয়া হয় না। শিক্ষায় উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের শিক্ষার বাজেট তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের চাইতে খুব একটা কম নয়। মূলত শিক্ষায় বরাদ্দকৃত বাজেট হচ্ছে বিনিয়োগ করা, খরচ করা নয়। গবেষণায়  এক টাকা বিনিয়োগ করলে সেটার তিন টাকার ফল পাওয়া সম্ভব। তবে শিক্ষায় বরাদ্দ দেওয়া মানে যে বিনিয়োগ করা এই ধারণাই আমাদের দেশে নেই।

আরেকটি বিশেষ কারণ হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থায় অতিমাত্রায় রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনীতির প্রভাবে মাঝে মধ্যেই অযোগ্য লোকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়ে যান। এটা যে সবসময়ই হয় তা নয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির কারণে সম্মানিত শিক্ষকগণ  লাল দল-নীল দলে বিভক্ত। ফলে অনেক সময় তারা গবেষণার চাইতে রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়াই হয় গবেষণা করার জন্য। অথচ একটা বই খুঁজতে হাতড়ে বেড়াতে হয় লাইব্রেরির এ কোনা থেকে ও কোনা। তার চেয়েও বড় বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় একটা লাইব্রেরিই নেই।

এছাড়াও আনুষঙ্গিক আরো নানান বিষয় আছে যেগুলোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণামুখী হচ্ছে না। তাই অবিলম্বে এ সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বাড়ানো উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বরাদ্দ। একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামুখিতাই আমাদের একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে পারে।

 

লেখক:শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004148006439209