বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চালু রাখতে চাই : জাবি উপাচার্য - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চালু রাখতে চাই : জাবি উপাচার্য

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দীর্ঘ ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ১৯তম উপাচার্য হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। এর আগে গত ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আটজন প্রার্থীর মধ্যে ৪৬ ভোট পেয়ে ২য় হন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য, সিনেট সদস্য, সিন্ডিকেট সদস্য, হল প্রভোস্ট, ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিভাগীর সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনসহ বহু গুরুত্বপূূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। দৈনিক ভোরের কাগজকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধি নুর হাছান নাঈম।

প্রশ্ন : আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এরপর শিক্ষক এবং পাঁচ মাস সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাময়িক এবং নির্বাচিত উপাচার্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা?

নূরুল আলম : ছাত্রজীবন এবং শিক্ষকতা জীবন মিলিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪৭ বছর ধরে কাজ করে আসছি। এ দীর্ঘ সময়ে হলের আবাসিক শিক্ষকের পদ থেকে প্রায় সব পদে দায়িত্ব পালন করেছি শুধু ট্রেজারার পদ ছাড়া। শেষে এসে প্রাথমিক পর্যায়ে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব, অতঃপর সাময়িক দায়িত্ব পেয়েছিলাম। সাময়িক উপাচার্য এবং নির্বাচিত উপাচার্যের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো পরিকল্পনা প্রণয়ণ এবং কাজের ক্ষেত্রে স্বাচ্ছন্দ্য। নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে আমাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ায় বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষা, গবেষণার গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা যাবে।

প্রশ্ন : উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ফলে আপনার মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় গণতান্ত্রিক চর্চা চালু হয়েছে। এ বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?

নূরুল আলম : সিনেটরদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। খুব স্বল্প সময়ের আয়োজনে তারা স্বঃতস্ফুর্ত সাড়া দিয়েছেন। আমি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু থাকুক, সেটা আমি চাই। দায়িত্ব নেয়ার পর শুরুতেই ঘোষণা দিয়েছি ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ক্ষেত্রে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পরিবেশ চালু রাখতে চাই। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রশ্ন: এ বছর ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিট সংখ্যা ৯টি থেকে কমিয়ে ৫টিতে আনা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ থেকে আপত্তি ছিল কিনা?

নূরুল আলম : এজন্য ফ্যাকাল্টি মেম্বার এবং ডিনদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এটাকে কঠিন বলছি এজন্য যে ৯টি থেকে হঠাৎ করে পাঁচটি ইউনিটে পরীক্ষা নেয়া সহজ ছিল না। আমাদের জন্য কাজটি কঠিন হলেও শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হয়েছে। তাদের দিক থেকে খুব ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন : বর্তমানে উপউপাচার্য (শিক্ষা) পদটি শূন্য আছে। এ বিষয়ে কী ভাবছেন?

নূরুল আলম : নিয়োগ দেবেন আচার্য। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে আমার পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হলে আমি দ্রুতই ব্যবস্থা নেব।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৫ম সমাবর্তন হয়েছে। আপনার সাময়িক দায়িত্বকালে শিক্ষার্থীদের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে কতদূর এগিয়েছেন?

নূরুল আলম : ইতোমধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের এ চাওয়ার প্রতি আমি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী বোর্ড সিন্ডিকেট সভায় এটি উপস্থাপন করেছি এবং নীতিগতভাবে সবাই সমর্থন করেছেন। এ আয়োজনটা একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপতির কাছে একটা তারিখ চেয়ে শিগগিরই আমি ৬ষ্ঠ সমাবর্তনের জন্য একটা চিঠি দেব।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি সেশনজট মুক্ত করতে আপনার পদক্ষেপ কেমন হবে?

নূরুল আলম : সেশনজট দূর করতে করোনা মহামারির মধ্যেও আমরা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছি। তারপরও কিছুটা সেশনজট রয়ে গেছে। বর্তমানে সেটা কাটিয়ে ওঠতে সব বিভাগকে ক্লাস পরীক্ষা নিতে এবং দ্রুত খাতা মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশের অনুরোধ করেছি। আশা করছি, ক্রমান্বয়ে সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পারব। ইতোমধ্যেই ডিনদের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট মুক্ত করতে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মানোন্নয়ন এবং এ খাতে উৎসাহ বাড়াতে কেমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত?

নূরুল আলম : গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যারয়ের একাডেমিক প্রাণ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত বাজেট একজন গবেষকের ভালো মানের গবেষণার জন্য অপ্রতুল। এক্ষেত্রে আরো কাজ করার সুযোগ আছে। গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করতে আমি সাপোর্টগুলো অ্যারেঞ্জ করার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন : ছাত্রছাত্রীদের তিনটি করে নতুন ছয়টি হলের নামকরণ এবং উদ্বোধন কবে নাগাদ হতে পারে?

নূরুল আলম : হলগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন ভেতরের কাজ চলছে। ইলেকট্রিসিটি, পানি এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন চলমান। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে হলগুলোর নামকরণ করা হবে। আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে অথবা নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে ছেলেদের একটি হল এবং মেয়েদের একটি হল প্রকল্প অফিস থেকে আমাদের বুঝিয়ে দেবে। বাকি চারটিও এ বছর বুঝিয়ে দেবে। তখন আর আবাসিক সংকট থাকবে না এবং গণরুম সংস্কৃতিও থাকবে না।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের বিষয়ে কিছু বলুন?

নূরুল আলম : শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। লাইব্রেরির ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের দাবি এবং আমারও একটা চিন্তা যদি বর্তমান লাইব্রেরি ভেঙে ফেলি তাহলে এই যে আমাদের ১৫ হাজার শিক্ষার্থী আছে তারা দুই তিন বছর কোথায় যাবে। আমরা এটিকে চিন্তা করে বর্তমান লাইব্রেরি না ভেঙে এর পশ্চিম পাশে লাইব্রেরি করার চিন্তা করছি।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু শাখায় অনেকদিন থেকে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কার্যক্রম চলছে। এসব পদ ভারমুক্ত করে পূর্ণকালীন নিয়োগের বিষয়ে কিছু বলেন?

নূরুল আলম : আমি চেষ্ট করব, প্রত্যেকটি পদে সৎ এবং যোগ্য লোককে দেয়ার। ভারপ্রাপ্ত আর পূর্ণকালীন এ দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য তো আছেই। যত দ্রুত সম্ভব এসব জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করব।

প্রশ্ন : জাকসুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মেয়াদোত্তীর্ণ পর্ষদের নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

নূরুল আলম : জাকসু আয়োজন একটা মহাযজ্ঞ। তবে আমি নির্বাচনমুখী মানুষ। তাই সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।

প্রশ্ন : আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে বর্তমানে দুটি অংশে বিভাজন দৃশ্যমান। এক্ষেত্রে ভেদাভেদ ঘুচিয়ে আবার ঐক্য হবার সম্ভাবনা দেখছেন কিনা?

নূরুল আলম : দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান এ ধারা মোটেও কাম্য নয়। এখানে উভয় অংশের আলাদা আলাদা কমিটি আছে। উভয় অংশের নেতৃস্থানীয়রা চাইলে ভেদাভেদ কমানোর নিশ্চয়ই চেষ্টা করব। কারণ, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করি। গত ২৪ তারিখে দুইটা অংশকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি।

প্রশ্ন : বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অভ্যন্তরীণ আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং আয় বাড়াতে বলছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

নূরুল আলম : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকার অদূরে হলেও এর অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো উৎস নেই। বিশ্বের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় চলে তাদের এলামনাইদের সহযোগিতায়। আমাদেরও অনেক এলামনাই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সুপ্রতিষ্ঠিত। এ ব্যাপারে আমি এলামনাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করব যাতে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। টিচার্স ক্লাবের পাশে একটা কনভেনশন সেন্টার হবে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ওখান থেকে একটা ভালো আয় আসবে।

প্রশ্ন : অবসর সময় কীভাবে কাটান?

নূরুল আলম : প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের স্বার্থে কাজ করলে অবসরের সুযোগ কোথায়। তবুও যতটুকু সময় বাসায় থাকি পরিবারের সঙ্গে কাটাই।

প্রশ্ন : আপনাকে ধন্যাবাদ।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035490989685059