বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দরকার - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক সংগঠনের হালচালবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

'দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানরা মেধার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হন শিক্ষকতায়। সেরা মেধাবী হলেও সেরা বেতন দেওয়া হয় না তাদের। বিশ্ববিদ্যালয় মানে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জায়গা। তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত গবেষণা। অথচ গবেষণা খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল। বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের স্কলারশিপ প্রাপ্তির জায়গা খুব সীমিত। ভালো মানের শিক্ষক হতে গেলে প্রয়োজন দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থাই নেই দেশে।'

কথাগুলো বলছিলেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলোর ফেডারেশন 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনে'র সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিরও সভাপতি। শুক্রবার (৩১ মে) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সাব্বির নেওয়াজ।

তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একজন শিক্ষক হবেন প্রকৃত অর্থেই গবেষক। সে জন্য রাষ্ট্রকে তার অনুকূলে সহায়তা দিতে হবে। কারণ, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে গেলে দক্ষ শিক্ষক দরকার। দেশে ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন চালু রয়েছে। এগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষক কর্মরত আছেন। এই শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের তাদের শ্রমের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা এখনও দেশের সেরা মেধাবীদের কাছে আকর্ষণীয় চাকরি। তবে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এটি এখনও আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেনি।' 

অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, 'পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির সঙ্গে উচ্চশিক্ষার বিষয়টি সম্পৃক্ত। এম.ফিল, পিএইচডি ডিগ্রিধারী হলে পদোন্নতিতে সুবিধা পাওয়া যায়। অথচ উচ্চশিক্ষা নিতে দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনের তুলনায় স্কলারশিপের অপ্রতুলতা রয়েছে। এখানে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধীনে শিক্ষকদের বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আরও বেশি করে বিদেশি স্কলারশিপের অফার আনতে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।' 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও গবেষণার সুযোগ খুব কম। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পর দেশে ফিরে এসে একজন শিক্ষক কাজে যোগ দেওয়ার পর নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েন, তা হলো, অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর জন্য যে নিত্য-নতুন গবেষণা করা দরকার, সে অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ নেই। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য যে বাজেট থাকে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই জরুরিভাবে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে আমার সুস্পষ্ট অভিমত হলো, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে অথবা পুরনো ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার থেকে সরাসরি গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়লে শিক্ষকরা অবশ্যই গবেষণাতে বেশি করে উৎসাহিত হবেন। 

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, 'প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকলে একজন শিক্ষক নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন কীভাবে?' তিনি বলেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনার্স শেষ করেই শিক্ষার্থীরা সরাসরি শিক্ষকতায় প্রবেশ করছেন। আর সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স শেষ করে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়ে ক্লাসে যেতে হয়। তাহলে একজন নবীন শিক্ষক কীভাবে শিখবেন পাঠদান কৌশল, খাতা দেখা, কারিকুলাম ডেভেলপ করাসহ উচ্চতর গবেষণার বিষয়ে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ইউজিসির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটা সময়ের দাবি। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল দায়িত্ব পালন করছেন দ্বিতীয়বারের মতো। এর আগে ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে একবার দায়িত্ব পালন করেছেন। লক্ষ্মীপুরে জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং আর্থ ও পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। মাস্টারদা সূর্য সেন হলের প্রভোস্ট। তিনি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে প্রকৌশল ভূতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি শ্রেণিকক্ষ শিক্ষা, একাডেমিক গবেষণা এবং পরামর্শ ও পেশাদার পরিসেবা কাজের মাধ্যমে একাধিক সেক্টরে উন্নত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল শহুরে ঝুঁকি কমানোর বিশেষজ্ঞ হিসেবে এবং বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শুরু হওয়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রামে (সিডিএমপি) ভূমিকম্প ও সুনামি প্রস্তুতি বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ভূমিকম্প সচেতনতা ও প্রস্তুতি বিশেষজ্ঞ গ্রুপ এবং সার্ক দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা পরিষদের জাতীয় কমিটির সদস্য। তিনি বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো)-এর একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবেও কাজ করেন।

বর্তমানে তিনি 'বাংলাদেশ সোসাইটি অব জিও ইনফরমেটিক্স' এর সভাপতি এবং 'জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ' এর সাধারণ সম্পাদক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির তিনবারের সভাপতি ও তিনবারের সাধারণ সম্পাদক। তিনি টানা চারবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ও পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন নির্বাচিত হয়েছেন, এর মধ্যে তিনবারই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। 

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রধান দাবি তাদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল চালু করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই তা আছে। সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু রয়েছে। নেপালেও সরকারি অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন উচ্চতর। বাংলাদেশে আমরা শ্রীলংকা ও নেপালের উদাহরণ থেকে নিয়ে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করতে পারি। যতদিন পর্যন্ত স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চালু করা না যায়, ততদিন অন্তত শিক্ষকদের অন্যান্য ভাতাদি বাড়িয়ে দিয়ে সম্মানজনক করা যেতে পারে।' তিনি বলেন, অনেক শিক্ষক বাড়তি আয়ের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঝুঁকেছেন। এটা করা গেলে প্রত্যেক শিক্ষক স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়েই তাদের সবটুকু শ্রম দেবেন। তারা আরও বেশি করে গবেষণা ও জ্ঞান সৃষ্টিতে আত্মনিয়োগ করবেন।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059640407562256