বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুটি কথা - দৈনিকশিক্ষা

বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুটি কথা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঐতিহ্যবাহী বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয় পালন করছে জন্মশততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উত্সব। এই শতবার্ষিকী উৎসবকে প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের হূদয়ে চির জাগ্রত করে প্রাণে মিলনের আবদ্ধ করার একটি মহান প্রয়াসে আজ ৩ মার্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শর্তবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠান। বিশ শতকের প্রথমদিকে বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত তদানিন্তন মাদারীপুরের কালকিনির প্রত্যন্ত অঞ্চলে বীরমোহন পরগনার মানুষের সার্বজনীন কল্যাণ সাধনে বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সমাজ সেবক, দানবীর ব্রিটিশ শাসিত যুগের সেশন জজ, স্বর্গীয় রায় বাহাদুর রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় চাকরি জীবন শেষে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পরগনার নামে বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়। তার মহান উদ্দেশ ছিল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলে যাতে শিক্ষা পেতে পারে, যাতে শিক্ষার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন সকল সংকীর্ণতা, সকল হীনতার ঊর্ধ্বে একজন মহৎ প্রাণের মানুষ। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, আজ এ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় রায় বাহাদুর রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। ঐতিহাসিক এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আলোকিত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তারই ফলশ্রুতিতে তৈরি হয়েছে দেশবরেণ্য বহু ব্যক্তিত্ব, যাদের অনেকেই দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত।

বিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই উপলক্ষ্যে স্মারক গ্রন্থের লেখকরা প্রায় সকলেই বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহী বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের গৃহ নির্মাণের আগে পর্যন্ত লস্কর বাড়ির দুর্গা মন্দিরেই ক্লাস হতো। স্কুল প্রতিষ্ঠাতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িকেই লস্করবাড়ি বলা হয়। লস্করবাড়ি সংলগ্ন জমি স্কুলের নামে দান করেন লস্কর পরিবার এবং এ পরিবারের দান করা ৬ একর জমির পরিধি নিয়ে স্মৃতি হয়ে আছে সার্বজনীন অধিকারপ্রাপ্ত এ স্কুলটি। সর্বস্তরে শিক্ষা বিস্তারের সৈনিক হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠাতার পুত্রদ্বয়— রাজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও দেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়।

পেশাগত আইন ব্যবসায় যোগ্যতাসম্পন্ন হয়েও বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের হাল ধরেন বেবেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং পরবর্তীকালে প্রধান শিক্ষকের পদ অলংকৃত করেন রাজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যয়। বায় বাহাদুর রজনীকান্তের যোগ্য উত্তরসূরি পুত্রদ্বয়ের শিক্ষকতার দক্ষতায় তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে এ বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির বিদ্যালয় হিসেবে উন্নীত হয় এবং পরীক্ষার ফলাফলের যোগ্যতার মাপকাঠিতে তত্কালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সদয় সন্তুষ্টিচিত্তে তখন থেকেই বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয় স্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে। তথ্য সংগ্রহকারী লেখক ও ষাট দশকের শেষের দিকে এ বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। তখন স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে দৃশ্যপটে যা দেখেছি তা চেতনালব্ধ হয়েই আছে। ঐতিহ্যবাহী লস্করবাড়ির সবুজ-শ্যামল বাগানবাড়ি সংলগ্ন তিন দিক ঘেরা স্কুলগৃহ ও উত্তর দিকের টিন শেডের বাউন্ডারি গেট এবং মাঠের পূর্বপাশে বিশাল পুকুরের ফটলা ও বাঁধানো সিঁড়িতে শিক্ষার্থীদের জীবনের স্মৃতি জড়িত থাকলেও তা কেবল ঐতিহ্য হিসেবে আছে নামেমাত্র। সকল প্রতিষ্ঠাতা রজনীকান্তের বাগানবাড়ির সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেমন ভোগ করছে না শিক্ষার্থীরা তেমনি বাগানবাড়িতে রজনীকান্তের তনয় প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রাজেন্দ্রনাথের মৃত আত্মার স্মৃতিস্তম্ভটিরও নির্দিষ্ট ঠিকানা খুঁজে আর পাওয়া যাচ্ছে না। লস্করবাড়ির আশেপাশের প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে আরো জানা যায় যে তার মৃতদেহ দাহ করা হয়েছিল স্কুলসংলগ্ন পশ্চিম পাশের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে যা কি না বাগানবাড়ি বলেই সকলের কাছে পরিচিত। দেশ বিভাগের পরই স্কুল প্রতিষ্ঠাতা রজনীকান্তের বংশ পরিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলে তাদের স্মৃতিও বিলীন হতে থাকে।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মূল্যবান বাণী প্রদান করে স্মরণিকার শ্রীবৃদ্ধি করে আমাদের কৃতার্থ করায় আমরা তাদেরকে সশ্রদ্ধচিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা তহমিনা সিদ্দিকী। বরেণ্য প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকমণ্ডলীর সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোক এবং প্রকাশিত স্মরণিকা নতুন প্রজন্মের পাথের হয়ে থাকুক এই কামনা করি।

লেখক : কাজী সবুর, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজী পরিষদ, সাবেক সভাপতি, বীরমোহন উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066502094268799