“অবশেষে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদান) শিক্ষক-কর্মচারীরাও নতুন জাতীয় স্কেলে বেতন হাতে পেতে যাচ্ছেন। প্রথম দফায় গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া টাকা আগামী বেতনের সঙ্গে হাতে পাবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ লক্ষ্যে গতকাল সোমবার প্রায় দুই হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ছাড় করে অর্থ মন্ত্রণালয়।”
‘সরকারি অংশের বেতন-ভাতা’কে অনুদান/সহায়তা’ লেখা হয়েছে- দৈনিক ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ, যায়যায়দিন…> ২৯ মার্চ ২০১৬।
অনুরূপ খবর প্রকাশ করা হয়েছে আরো অনেক পত্র পত্রিকায়। ব্যতিক্রম দৈনিকশিক্ষাডটকম।
অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১১ জুলাই ১৯৯৪ তারিখের স্মারক নং- শা:/১১/দাবি (শি:) -১/৯৪ (ঋছগ-১)/৩১৯ (২০)-শিক্ষা আদেশে বলা হয়েছে ”বর্তমান অর্থ বছর হইতে সংশ্লিষ্ট সকল নথি ও যোগাযোগ পত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত ‘সরকারি অনুদান’ শব্দের পরিবর্তে’ ‘বেতন ভাতাদি’র সরকারি অংশ’ উল্লেখ করিতে হইবে।” – সেই থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এমপিও
আদেশে লেখা হয় বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের সরকারি অংশের বেতন-ভাতা। বেসরকারি শিক্ষকগণ কি বিনাকাজে টাকা চাচ্ছেন যে তাদেরকে প্রদত্ত সরকারি টাকাকে বেতন-ভাতা না বলে অনুদান-সহায়তা বলা হচ্ছে? অনুরূপ ভাষায় সার্কুলার জারি করায় আগেও তীব্র ক্ষোভ প্রয়াশ করেছেন শিক্ষক সমাজ সহ অনেক বিবেকবান মানুষ। যেমন, গত ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে জারি করা
একটি প্রজ্ঞাপনে লেখা হয়েছিল- “এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করিয়া তাহাদের যোগ্যতা ভিত্তিক অনুদান-সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগ কর্তৃক মূল্যায়নক্রমে প্রাপ্য অনুদান-সহায়তা নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের তারিখ অর্থাৎ ১ জুলাই ২০১৫ তারিখ হইতে কার্যকর করা সমীচীন হইবে।”হয়ত সরকারি আমলাদের জারি করা সার্কুলারের অনুরূপ ভাষাই ব্যবহার করছে পত্র পত্রিকা। তাই তাদের দোষারোপ করছিনা।
বার বার শিক্ষকদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করার এহেন অপচেষ্টা করে সরকারের উপর অসন্তুষ সৃষ্টির পিছনে কোন বিশেষ আমলা/নেতাদের কারসাজি আছে কি না এমন প্রশ্ন জাগা এখন নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক নয়? তা না হলে, যা হবার তা সঠিক সময়ে
না করে এবং যা না হবার তা বার বার করে কেনো ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে শিক্ষক, কর্মচারি, শিক্ষার্থী, অভিভাবক তথা শিক্ষাক্ষেত্রের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে? শিক্ষাক্ষেত্রে এত এত শুভ কাজ করার এবং হাতে নেওয়ার পরেও কেন বার বার বিতর্কিত হয়ে, জনরোষে পড়েতে হচ্ছে সরকারকে?
মন্ত্রণালয় যদি মনে করে, কোন আইনগত জটিলতার কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের এমপিও এর মাধ্যমে প্রদত্ত পারিশ্রমিককে বেতন-ভাতা বলা সঠিক নয়; তো তা পরিস্কার ব্যাখ্যা দিয়ে বলে দেওয়াই কি উত্তম নয়? এবং সেই সাথে গত
১১ জুলাই ১৯৯৪ ইং তারিখে জারিকৃত সার্কুলারটি বাতিল করা উচিত নয় কি আরো একটি সংশোধনী সার্কুলার দিয়ে। যদি তাও করা সঠিক না হয়, তো একটি সরকারি সার্কুলারের সেটেল্ট বক্তব্য/ ঘোষণা পরিবর্তন করে প্রকাশ করার মাধ্যমে দেশের পুরো শিক্ষক সমাজের মনে অহেতুক ক্ষোভ তৈরি করার কারণ কি?
সবই যদি দেওয়া হলো, তো বেতন-ভাতাকে অনুদান সহায়তা/সাহায্য বলে অহেতুক আঘাত করা হচ্ছে কেন শিক্ষকগণের সম্মানে? সরকারি আমলারা যে পারিশ্রমিক নেয় সেটিওতো জনগণেরই টাকা। সংশ্লিষ্টরা অতি দ্রুত এই বিতর্কের অবসান ঘটাবেন আশা করি।
অহেতুক এইরূপ বিতর্ক সৃষ্টি করা ও জিয়িয়ে রাখা কারোর জন্যই সুখকর হবার কথা নয়।
মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষাবিদ এবং অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।