বেসরকারি পলিটেকনিকের মালিকই কারিগরি বোর্ডের ভর্তি পরামর্শক! - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি পলিটেকনিকের মালিকই কারিগরি বোর্ডের ভর্তি পরামর্শক!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ভর্তির আবেদন শুরুর প্রথম দিনেই বিতর্কের মুখে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ভর্তি বিষয়ে যাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনি নিজেই একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মালিক। ফলে এই পরামর্শক ইচ্ছা করলে সব তথ্যই তার নিজের কাছে নিয়ে ইচ্ছামতো ভর্তিপ্রক্রিয়া চালাতে পারেন বলে জানিয়েছেন বোর্ডসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

জানা যায়, সাধারণ বোর্ডগুলোর অধীনে ভর্তি হয় প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে ভর্তি হয় সোয়া এক লাখ শিক্ষার্থী। সাধারণ বোর্ডগুলো কোনো পরামর্শক না রেখেই কাজ চালাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কারিগরি বোর্ডে লক্ষাধিক টাকা বেতন দিয়ে পরামর্শক রাখারই বা কী দরকার? আর যিনি পরামর্শক তিনি সাধারণত ভর্তির দুই মাস কাজে ব্যস্ত থাকেন, বছরের বাকি ১০ মাস এককথায় ঘুরে ফিরেই কাটান।

কারিগরি বোর্ডের ভর্তিবিষয়ক পরামর্শক ড. শেখ আবু রেজা। পেশায় প্রকৌশলী এই পরামর্শক রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (আইআইএসটি) মালিক। তবে আইআইএসটির ওয়েবসাইটে তাকে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা উপদেষ্টার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরামর্শক হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাস্তবে যেই জায়গায় এই প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেই জায়গার একজন মালিক তিনি। বোর্ডে কমিটির যে তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে, সেখানে রয়েছেন আবু রেজা ও তার পরিবারের সদস্যরা।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী আবু রেজা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যানের পছন্দ অনুযায়ী আমাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইআইএসটি নামে আমার ছোট ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান আছে। ভাইয়ের কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে নিজে কারিগরি বোর্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারব না, এমন কোনো নিয়ম আমার জানা নেই। আর আমি পরামর্শক হলেও ভর্তির সব তথ্য থাকে বুয়েটের কাছে।’

তবে কারিগরি বোর্ড সূত্র জানায়, ভর্তিতে বুয়েট কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু বোর্ডের যারা ভর্তির কাজে জড়িত তাদের হাতেও সব তথ্য থাকে।

অভিযোগ রয়েছে, গত বছরও বোর্ডের ভর্তিবিষয়ক পরামর্শক ছিলেন আবু রেজা। তিনি তখন সব শিক্ষার্থীর তথ্য তার প্রতিষ্ঠানের কাছে পাচার করেছেন। পরে তার নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের ফোন দিয়ে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করতে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কারিগরি বোর্ডেরও কনসালট্যান্ট। আর এই তথ্য পাচারে কারিগরি বোর্ডের কারিকুলাম বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন।

জানা যায়, প্রায় সব শিক্ষার্থীর সব তথ্য হাতে থাকায় ওই পরামর্শকের প্রতিষ্ঠানসহ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গত বছর নানা কাণ্ডকীর্তি করে ভর্তি প্রক্রিয়ায়। তারা শিক্ষার্থীদের মতামত না নিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে প্রথম চয়েজ দিয়ে অনেকের পক্ষে আবেদন পূরণ করে রাখে। অর্থাৎ একজন ভর্তিচ্ছু জানলই না যে কাগজে-কলমে সে উমুক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করে রেখেছে। পরে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিপদে পড়ে যায়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষার্থী তার এসএসএসি বা সমমানের মূল মার্কশিট দিয়ে যেই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে সেখান থেকেই সে রেজিস্ট্রেশন পাবে। কিন্তু এখানেও হয়রানির ফাঁদ তৈরি করা হয়। দেখা গেছে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে সার্টিফিকেট জমা দিয়ে এক বছর ধরে পড়ালেখা করে এখনো অনেক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি।

রাজধানীর একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত সফিক মিয়া নামের ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ২০১৮-১৯ সেশনে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মূল মার্কশিট জমা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠান এখনো রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পারেনি। অথচ অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে ফোন করা হচ্ছে তাদের ওখানে নতুন করে ভর্তি হওয়ার জন্য। এখন কী করব বুঝতে পারছি না। তাহলে কী আমার একটা বছর নষ্ট হবে?’

সূত্র জানায়, ভর্তির তথ্য চুরি ও মার্কশিট জমা দিয়েও রেজিস্ট্রেশন না পাওয়ার পেছনের সিন্ডিকেটে কাজ করছেন কারিগরি বোর্ডের একজন পরামর্শক ও কারিকুলাম বিভাগের একজন পরিচালক। তাদের সন্তুষ্ট করতে না পারলে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া সম্ভব নয়।

এসব ব্যাপারে নবনিযুক্ত কারিগরি বোর্ড চেয়ারম্যান ড. মোরাদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। নীতির বাইরে আগেও আমি কোনো কাজ করিনি, এখনো করব না। তবে ভর্তিবিষয়ক পরামর্শক নিজেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক হলে তা দেখতে খারাপ দেখায়। তার পরও নিয়ম-নীতি জেনে আমার এ বিষয়ে মন্তব্য করতে হবে অথবা ব্যবস্থা নিতে হবে।’

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039939880371094