বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : স্থায়ী সনদ থাকার কথা ৫১টির, আছে মাত্র ৩টির - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় : স্থায়ী সনদ থাকার কথা ৫১টির, আছে মাত্র ৩টির

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে মূলত সাত বছরের সাময়িক অনুমতি নিয়ে। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী সনদ অর্জনের শর্ত পূরণ করতে না পারলে আবেদন ও তদন্তসাপেক্ষে সাময়িক অনুমতিপত্র আরও পাঁচ বছরের জন্য নবায়নের সুযোগ রয়েছে। নবায়নসহ সাময়িক অনুমতিপত্র দিয়ে ১২ বছর পার করেছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যা এখন ৫১। নিয়ম অনুযায়ী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটিরই এখন শর্ত পূরণসাপেক্ষে স্থায়ী সনদ লাভ করার কথা। কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে, এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদ পেয়েছে। সোমবার (২২ জুলাই) বণিকবার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

স্থায়ী সনদপ্রাপ্ত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো আহছানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটিকে স্থায়ী সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্টদের মতে, শর্তসাপেক্ষে স্থায়ী সনদ দেয়ার সুযোগ নেই।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৬-এ বর্ণিত ১০টি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সাময়িক অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে অনধিক ২১ ও অন্যূন নয় সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন, পর্যাপ্তসংখ্যক শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার, ল্যাবরেটরি, সেমিনার কক্ষ, অফিস কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য পৃথক কমন রুমসহ পর্যাপ্ত স্থান ও অবকাঠামো থাকা, ২৫ হাজার বর্গফুটের নিজস্ব বা ভাড়া বাড়ি, কমপক্ষে তিনটি অনুষদ ও ছয়টি বিভাগ থাকা, শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রত্যেক বিভাগ, প্রোগ্রাম ও কোর্সের জন্য কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত সংখ্যক পূর্ণকালীন যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ করা, নিবিড় পাঠ্যক্রম ও কোর্স প্রণয়ন ও আসনসংখ্যার অনুমোদন, সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে এলাকাভেদে দেড় থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা এবং কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী ও জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা না করা।

এসব শর্ত পূরণের ভিত্তিতে দেয়া সাময়িক অনুমতিপত্রের মেয়াদ সাত বছর। এ সময়ের মধ্যে আরও সাতটি শর্ত পূরণ করে স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে আইনের ৯ নং ধারায়। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এক একর, অন্য এলাকার ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকা, নিজস্ব জমিতে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ, ৩ শতাংশ আসন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও ৩ শতাংশ আসন অনুন্নত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা এবং গবেষণার জন্য বাজেট রাখা ও ব্যয় করা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদপত্রের শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও শিক্ষাসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে বলে আইনে উল্লেখ আছে। যদিও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়নি শর্ত পূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

এ বিষয়ে ইউজিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম পালন করার কোনো এখতিয়ার নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-ভর্তিসহ সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। এখন আইন প্রয়োগের দায়িত্ব হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা ব্যবস্থা না নিলে ইউজিসির কী করার থাকে?’

শর্ত পূরণ করে আবেদন করার সময় পার হলেও এখনো স্থায়ী সনদ পায়নি এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগং, ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগং, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, গণবিশ্ববিদ্যালয়, দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, পুণ্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, দ্য মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি ঢাকা, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত আশা ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করেছে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে স্থায়ী সনদ না থাকার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে। তখন সাময়িক সনদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাই স্থায়ী সনদের আবেদন বিষয়ে আমরা অস্পষ্ট একটি ধারণার মধ্যে ছিলাম। যেহেতু স্থায়ী সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, আমরা সবক’টিই অনুসরণ করছি। তাই আমরা শিগগিরই এ বিষয়ে আবেদন করে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করব।

সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) মো. আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরী বলেন, স্থায়ী সনদ দেয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হলো স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর। আমরা সে বিষয়ে অনেকদিন থেকেই চাপ প্রয়োগ করে আসছি। শর্ত পূরণ না করলে স্থায়ী সনদ না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আর আইনে শর্ত পূরণ না করলে বন্ধ করে দেয়ার কথা থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। আর যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভাবছে, তারা ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের আইনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের আইন অনুযায়ী স্থায়ী সনদের জন্য আবেদন করবে না, তারা একটি ভুল ধারণার মধ্যে রয়েছে। তাদের অবশ্যই আইন মেনে আবেদন করতে হবে।

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039758682250977