বেসরকারি শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট বিড়ম্বনা ও কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট বিড়ম্বনা ও কিছু কথা

বিশ্বজিৎ রায় |

আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ শতাংশ বেসরকারি ধারায় পরিচালিত। আর এখানে নিযুক্ত আছেন প্রায় ৫ লাখের অধিক শিক্ষক ও কর্মচারী। এখানে যারা কর্মরত আছেন তারা সরকারি বিধি বিধান মেনে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন। আবার ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের এনটিআরসিএ চালু হওয়ার ফলে একটি ছাকুনির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছিল। আবার সেটিকে আরো যুগোপযোগী করে এসআরও সংশোধন করে আরো মেধাবীদের প্রবেশের সুযোগ তৈরি হচ্ছে যেটি চলমান রয়েছে।

কিন্তু বেসরকারি স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যে সুযোগ সুবিধা তাতে মেধাবীরা আকৃষ্ট হবে কিনা সন্দেহ আছে। যেখানে একজন বিএবিকম বা বিএসসি পাশ শিক্ষক চাকরি শুরু করছেন ১২ হাজার ৫০০ টাকা স্কেলে এবং সর্বসাকুল্যে তার বেতন থাকছে ১২ হাজার ৫৫০ টাকা। সেখানে বিএবিকম বা বিএসসি পাশ একজন কর্মকর্তা পাচ্ছেন তার দ্বিগুন বা তিনগুন অন্য কম্পানী বা অন্যান্য পর্যায়ে চাকরি করে। হঠাৎ করে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ এমপিও তে ইনক্রিমেন্ট তুলে নেয়া হল।

এ ধরনের খোড়া ইনক্রিমেন্ট বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য মোটেও কাম্য ছিল না যা নিয়ে বেসরকারি শিক্ষক সংগঠন গুলো বিভিন্ন সময়ে আপত্তি তুলেছে। অবশ্য জাতীয় বেতন গেজেট ২০১৫ তে ইনক্রিমেন্ট বিষয়টি জটিলতার জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রবর্তন করা হয়েছে স্কেল ভেদে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি। সেটা কার্যকারী হবে ১ জুলাই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে। প্রজাতন্ত্রের সকল সরকারি আধাসরকারি স্বায়ত্বশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারী জাতীয় বেতন গেজেট ২০১৫ অনুযায়ী বাড়ীভাড়া মেডিকেল ও স্কেলভেদে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি পাবেন।

ব্যতিক্রম বেসরকারি স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষদের আন্দোলনের ফলে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে এক প্রঞ্জাপনের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া ১’শ টাকার পরিবর্তে ৫’শ টাকা ও মেডিকেল ১’শ ৫০ টাকার পরিবর্তে ৩’শ টাকা প্রার্তন করা হয়। তারা ১ জুলাই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে মেডিকেল ৩’শ টাকার পরিবর্তে ৫’শ ও বাড়িভাড়া ৫’শ টাকার পরিবর্তে ১ হাজার টাকা পেতে যাচ্ছে যার প্রজ্ঞাপন ইত্যোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বার্ষিক প্রবৃদ্ধি পাওয়ার কোন আলামত এখনও পর্যন্ত পরিদৃষ্ট হয় নাই।

২১ জুলাই ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জুলাই এমপিও ২০১৬ এর মিটিং হয়ে গেল। নতুন ডিজি ড. এস.এম ওয়াহিদুজ্জামান মহোদয়ের সভাপতিত্বে শিক্ষক সমাজ আশা করেছিল ঐ মিটিং এ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির বিষয়টি এ্যাজেন্ডায় থাকবে কিন্তু অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি, যা শিক্ষক সমাজকে ব্যথিত করেছে। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সবসময় ডিজি অফিসে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রেষণে কাজ করার কথা বলছে কারণ বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মাথা ব্যাথা কম।

আরো পরিতাপের বিষয় এই যে, গত ১৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ পালিত হয়ে গেল। বাংলাদেশের সরকারি-আধা সরকারি স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠান এনজিওতে যারা কর্মরত তারা সকলেই ১লা বৈশাখের ২০শতাংশ নববর্ষ ভাতা পেয়ে মহাখুশীর মধ্য দিয়ে ১ম বারের মত নববর্ষ পালন করলেন। বাদ থাকল শুধু হতছাড়া বেসরকারি শিক্ষক সমাজ। ৫ লাখ শিক্ষক কর্মচারী বাদ গেল না, বাদ গেল তার পরিবারের সদস্যরা। তারা দেখল শিক্ষক হিসেবে পিতা-মাতার বঞ্চনা।

প্রজাতন্ত্রের অন্য সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর সদস্যরা যখন আনন্দে উল্লাসে ব্যস্ত তখন শিক্ষক সমাজের সদস্যরা হতাশাগ্রস্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ৮ম জাতীয় পে-স্কেলে বৈশাখী ভাতার প্রচলন ঘটিয়ে ছিলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সবাই মিলে এ নববর্ষ উৎসব পালন করব কারণ এ উৎসবে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু সেটি হলো না। শুধুমাত্র বেসরকারি শিক্ষকরাই ১লা বৈশাখ পালন করতে পারল না। বেসরকারি শিক্ষকরা নববর্ষ ভাতা ২০ শতাংশ পাবে কিনা আজও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন বিবৃতি প্রিন্ট বা ইলেকট্রিক মিডিয়ায় আসে নাই।

অন্যদিকে ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপনে মাধ্যমে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণের এক মাসের মূল বেতনের সরকারি অংশের ২৫ শতাংশ হারে এবং কর্মচারীদের এক মাসের মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে একটি উৎসব ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। যেটি এখনও বহাল আছে এবং আগে কোন উৎসব ভাতা পেত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। এক যুগ আগে নেওয়া সিদ্ধান্তটি পুনঃ বিবেচনা করার সময় এসেছে।

আবার ১ লা জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন আসে নাই। অমিত সম্ভবনাময়ের দেশ আমাদের এ দেশ। বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ওয়ান্ডার কান্ট্রি। আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলার। নানা প্রতিচ্ছলতা সত্ত্বেও এক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ শতাংশের বেশি যা প্রংশসা করছে বিশ্বব্যাংক। আরো আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক ২০২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে।

এবার ৮ শতাংশ জিডিপি অর্জন করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ অর্জন করবে। ১ল জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংকে নিম্ন মধ্য আয় এর তালিকায় স্থান পায় বাংলাদেশ। নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতি বিদ ড. অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের এই সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে যাচ্ছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের জন্য ৩৪ লাখ ৬’শ ৫ কোটি ডলার বাজেট পাশ হয়েছে। তার মধ্যে গত ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, মেট্ররেল নির্মাণ সহ ১০ টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে যাচেছ। বিশ্বের ১৪২ তলা বিশিষ্ট বিশাল টাওয়ার নির্মাণের অনুমতি মিলেছে।

বেসরকারি শিক্ষকতায় মেধাবীদের প্রবেশের কথা বলা হচ্ছে। একই সিলেবাস পড়িয়ে সরকারি শিক্ষক কর্মচারী যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে কিন্তু বেসরকারিদের ভাগ্যে তা জুটছে না। তাদের বঞ্চনা সর্বজন বিদিত। বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীর প্রত্যাশা বেশি নয়। অষ্টম পে স্কেল বাস্তবায়নের পর প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারী তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে কম বেশি আন্দোলন করেছেন সেখানে বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী অষ্টম পে স্কেল বাস্তবায়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। স্কেলভেদে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ব্যবস্থা ও উৎসব ভাতার শতাংশটি সন্তোষজনক পরিমাণ বৃদ্ধি করলে শিক্ষক সমাজ উপকৃত হত এবং সাথে সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করত। শিক্ষামন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি শিক্ষকদের এ দাবি পূরণ করবেন এ প্রত্যাশা সকলের।

লেখক: শিক্ষক, মৃজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালা, সাতক্ষীরা।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031089782714844