ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক—বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। জেলার ১ হাজার ১০৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৮টিতে শহীদ মিনার আছে। বাকিগুলোতে শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ ৩৬৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৬৯টিতে শহীদ মিনার নেই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার বানিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। আবার কোনো কোনোটিতে শহীদ মিনারের অভাবে একুশে ফেব্রুয়ারির কোনো আয়োজনই হয় না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১ হাজার ১০৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণাবড়িয়া সদরে ৫টি, কসবায় ১২টি, সরাইল ও আখাউড়া উপজেলায় ১টি করে, বাঞ্ছারামপুরে ৭টি, নাসিরনগরে ৫টি, আশুগঞ্জে ৩টি ও বিজয়নগর উপজেলায় ৪টিসহ মোট ৩৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকিগুলোতে নেই।
গত রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকরি কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজ, পৌর ডিগ্রি কলেজ, সাবেরা সোবহান সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গভ. মডেল গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এদিকে জেলায় কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ৯২৮টি। এর মধ্যে জেলা শহরের হালদারপাড়ার সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেনেই শুধু শহীদ মিনার আছে। অন্য কিন্ডারগার্টেনসহ ব্যক্তিমালিকানাধীন কোনো বেসরকারি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার দেখা যায়নি।
গত শনিবার নাসিরগনর উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নাসিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাহাজোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলায় মেয়েদের জন্য থাকা একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নাসিরনগর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই।
নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ঋষিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সঞ্চয় কুমার দেব বলেন, বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পতাকাস্ট্যান্ডের পাশে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। সেখানে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ ছাড়া দিবসটিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন ভট্টাচার্য বলেন, জায়গার অভাবে জেলায় ব্যক্তিমালিকানাধীন মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজগুলোতে শহীদ মিনার তৈরি করা যাচ্ছে না। তবে দিবসটি যথাযত মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, জেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নেই। সরকারিভাবে তেমন বরাদ্দ না পাওয়ায় শহীদ মিনার নির্মাণ সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় ব্যক্তিদের উদ্যোগে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি পালন করেন।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র বলেন, জেলার সব সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।