ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সমাজসেবক বিমল রায় চৌধুরী (৯৪) মারা গেছেন। শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল নয়টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ছেলে অনুপ রায় চৌধুরী।
যশোর শহরতলীর বিরামপুরের বিখ্যাত রায় চৌধুরী বংশে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন বিমল রায় চৌধুরী। তার বাবা সুরেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী জমিদার ও একজন সমাজ সংস্কারক ছিলেন। মা অনিলা রায় চৌধুরী ছিলেন একজন প্রগতিশীল নারী; যিনি গ্রামের মহিলাদের উন্নয়নে সূচিশিল্পের প্রশিক্ষণ দিতেন। আদর্শ বাবা-মায়ের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েই সমাজসেবার কাজ করেন বিমল।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিয়ে করেন কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের বিমলকৃষ্ণ ঘোষের মেয়ে শিলা রায় ঘোষকে । তিনি এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক ছিলেন।
বিমল রায় চৌধুরী যশোর জিলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জিলা স্কুলে পড়ার সময় ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগ পেয়ে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন যশোর কলেজে (বর্তমানে সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়) ভর্তি হন। এসময় তিনি মৎস্যজীবী সমিতি ও কৃষক সমিতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইএসসি (উচ্চমাধ্যমিক) পাস করেন। এ কলেজ থেকেই ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে বিএ পাশ করেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে বাঘারপাড়া ও নড়াইলের এগারখান অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল বিমল রায় চৌধুরীর। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার 'অপরাধে' তিনি গ্রেফতার হন। এক মাস তাকে কারাগারে কাটাতে হয়। মাতৃভাষা রক্ষায় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি।
শনিবার সন্ধ্যায় নীলগঞ্জ মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।