গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাতেও আন্দোলনে মুখরিত ক্যাম্পাস। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এ আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে প্রশাসনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উপাচার্যের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে রাতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়া হয়েছে। এ সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বিরোধী স্লোগান দিয়ে অবস্থান করে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না তারা। তবে গতকাল রাতে ১৪টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ভিডিও দেখুন: ভিসির পদত্যাগের দাবিতে রাতেও উত্তাল বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
এর মধ্যে অন্যতম হলো- সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাক স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হবে এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ছাড়া বহিষ্কার করা হবে না, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ডেকে এনে অপমান করা যাবে না। ফেসবুক স্ট্যাটাস ও কমেন্টকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হবে না।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই আশ্বাসকে প্রত্যাখ্যান করে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ফের বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এমনকি তাদের বিক্ষোভের মুখে নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করেছে প্রশাসন।
এদিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করেছে শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করে এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই হাজার-হাজার শিক্ষার্থী তাতে স্বাক্ষর করে।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী জানান, জাতির পিতার জন্মভূমিতে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা কোনো দুর্নীতিবাজকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই না। নিয়োগ দুর্নীতি, ভর্তি বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ মোট ২০টি কারণে আমরা তার পদত্যাগ চাই। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানান এই শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সমর্থিত কিছু শিক্ষার্থী দ্বারা অনশনকারীদের আন্দোলন বন্ধ করাসহ বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, যাতে করে আন্দোলনকারীরা বাড়ি চলে যায় তার জন্য গোপালগঞ্জের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বাস সার্ভিস আজ ফ্রি ঘোষণা করা হয়েছে। এসময় শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের বাড়ি চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নুরুদ্দিন আহমেদ বলেন, অনিবার্য কারণে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ কী’ এই বাক্যটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও দ্যা ডেইলি সানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ, অমানবিক, স্বাধীন মতপ্রকাশের প্রতিবন্ধক ও সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খন্দকার নাসির উদ্দিনের বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্চাচারিতার জন্য তার পদত্যাগ দাবি করে শিক্ষার্থীরা।
এর আগেও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করার দায়ে ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।