ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নীলফামারীর ডিমলায় নামসর্বস্ব লাইফ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দিয়েছে প্রশাসন। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
গতকাল সোমবার ওই হসপিটালে অভিযান চালিয়ে নিবন্ধনের কাগজপত্র না পেয়ে ও বিভিন্ন অনিয়ম দেখতে পেয়ে ম্যানেজারকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে তা সিলগালা করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বেলায়েত হোসেন।
যৌথ মালিকানার অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ মালিক সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তারা কেউ এ সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সিলগালার আগে সেখানকার চিকিৎসাধীন রোগীদের অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান, স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ওয়াহেদুল ইসলাম, ডিমলা থানা পুলিশ।
এর আগে গত বুধবার বিকেলে হাসপাতালটিতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। নবজাতকের পরিবারের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ খড়িবাড়ি মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা আতাউর রহমানের স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তানের মা রহিমা বেগম (৩০) উপজেলা সদরের আলম প্লাজা মার্কেটের পেছনে অবস্থিত লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজার করতে ভর্তি হন। পরে বিকেল পাঁচটার দিকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসক আকতারুজ্জামান বাবু সেখানে উপস্থিত হয়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই প্রসূতিকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান। সিজারের পর নবজাতকের নাক ও মুখ দিয়ে ফেনার মত পানি বের হতে থাকলে শিশুটির মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এসময় ওই ক্লিনিকের নিবন্ধন খাতায় চিকিৎসকের স্বাক্ষরের জায়গায় নিজ স্ত্রী চিকিৎসক মারজিয়া শবনমের নামে স্বাক্ষর করে ডা. আকতারুজ্জামান বাবু দ্রুত সরে পড়েন।
শিশুটির শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার দীর্ঘ আধাঘন্টারও বেশি সময় ধরে শিশুটিকে কোনো রকম অক্সিজেন না দিয়ে ও চিকিৎসক না দেখিয়ে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ সময় নষ্ট করেন। অক্সিজেন ছাড়াই ডিমলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। অতীতেও এই ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় একাধিক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিলো। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে প্রশাসনের।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেয়ে লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিতে গেলে তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। একটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ন্যূনতম যা যা প্রয়োজন তার কিছুই না থাকায় ম্যানেজারকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে অবৈধ প্রতিষ্ঠানটিকে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এখান থেকে শিক্ষা না নিলে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে খেলতে দেয়া হবে না।