রাজধানীর পল্লবীতে মাদ্রাসাছাত্র হাফিজুর রহমান (৯) হত্যা মামলায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার হলেও অন্য তিন আসামি এখনো পলাতক। হাফিজুরের বাবা দুলাল খানের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা নেই।
তবে পুলিশ বলছে, আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে। আর শিশু হাফিজুরকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি সে আত্মহত্যা করেছে, সেটা নিশ্চিত হতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি তদন্ত চলছে।
গত ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মিরপুরের পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের মারকাজুল তারতীলীল হাফিজিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জুনায়েদ বিন ইসহাকের কক্ষ থেকে হাফিজুরের লাশ উদ্ধার করে পল্লবী থানার পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়। সেদিন লাশের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রভাষক সোহেল কবির বলেন, হাফিজুরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য মরদেহ থেকে বিভিন্ন ধরনের কোষসহ (টিস্যু) বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে।
মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জুনায়েদের বিরুদ্ধে হাফিজুরকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করার অভিযোগ করেন বাবা দুলাল খান। তিনি বলেন, ঘটনার ২২ দিন আগে তাঁর ছেলেকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করান। থাকা-খাওয়াসহ মাদ্রাসায় বেতন ছিল প্রায় তিন হাজার টাকা। হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে ২ আগস্ট সকালে নাশতা কিনে নিয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। এ সময় হাফিজুর তাঁকে জুনায়েদের বিরুদ্ধে মারধরের কথা জানায় এবং হাঁটুর ওপরে রক্ত জমাটের চিহ্ন দেখায়। তিনি ফেরার সময় হাফিজুর তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে মাদ্রাসা থেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। এরপর ৫ আগস্ট হাফিজুরের মা খাবার নিয়ে তাকে দেখতে যান। কিন্তু শিক্ষকেরা বলেন, শিশুটি মায়ের সঙ্গে চলে আসতে কান্নাকাটি করতে পারে। তাই মা খাবার রেখেই চলে আসেন।
দুলাল খান বলেন, ছেলের মৃত্যুর খবর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়নি। অন্যদের কাছ থেকে শুনে মাদ্রাসায় যান তিনি। সেখানে দেখেন, পুলিশ হাফিজুরের লাশ উদ্ধার করছে। দুষ্টুমি করার জন্য রাতে মাথায় আঘাত করে ছেলেটিকে হত্যা করা হয়—অভিযোগ দুলাল খানের। এ ঘটনায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. জুনায়েদ বিন ইসহাক, তাঁর স্ত্রী, বড় ভাই ইয়াহিয়া খান ও মাদ্রাসার কর্মচারী মোস্তাফিজুর রহমানকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন তিনি। জুনায়েদকে গ্রেপ্তারের পর দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর আদালতে আবারও জুনায়েদকে হাজির করা হলেও পুলিশ নতুন করে রিমান্ড আবেদন করেনি বলে জানান দুলাল খান। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, পুলিশের কাছে জানতে চাইলেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ার কথা বলে। পলাতক আসামিদের ধরার কোনো তৎপরতা যেমন নেই, তেমনি তদন্তেও গড়িমসি চলছে। অধ্যক্ষ জুনায়েদকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদনও করেনি পুলিশ।
তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করেন পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির। পলাতক আসামিদের ধরতে তৎপরতা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি। আর শিশুটি আত্মহত্যা করেছে, নাকি তাকে খুন করা হয়েছে, তারও কোনো আলামত ছিল না। তাই সবই এখন নির্ভর করছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনর ওপর।