মুজিববর্ষ ও কিছু কথা - দৈনিকশিক্ষা

মুজিববর্ষ ও কিছু কথা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

বাঙালি জাতি ইতোমধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষে প্রবেশ করেছে। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা এটি উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছি। এ ঐতিহাসিক বছরটি প্রত্যক্ষ করতে পারছি। এ নিয়ে দু’ চার কথা লিখতে পারছি। আমাদের যারা দুনিয়া ত্যাগ করে পরকালের বাসিন্দা হয়েছেন, তারা বছরটি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি। আগামী প্রজন্মের অনেকে ঐতিহাসিক মুজিববর্ষ দেখতে না পারার জন্য আফসোস করবে। এটি এক সার্বজনীন বছর। দলমত নির্বিশেষে সব বাঙালির এক মাহেন্দ্র ক্ষণ।

ভাগ্যিস, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ক্ষমতার বলয়ে আছে। তা না হলে মুজিববর্ষটি নিশ্চিতরূপে মিস করতে হতো। মহান মা’বুদের অপার লীলা যে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় অবস্থান এবং মুজিববর্ষ- আজ এক ও একাকার। একই সমান্তরালে বিশেষ এই মুহূর্তগুলো সরল রেখায় মিলিত হতে পেরেছে।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বছর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দকে টার্গেট করে রূপকল্প-২১ বা ভিশন-২০২১ স্থির করে দেশ এক নিশ্চিত পথ ধরে অদম্য গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তার তরতর করে এগিয়ে যাওয়া দেখছে পৃথিবীর সব মানুষ। অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে তারা দেখছে বাংলাদেশকে। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ির দেশটি’ আজ অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ। ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে উন্নত দেশে উন্নীত হবার স্বপ্নে এখন বিভোর। এটি আমাদের জন্য পরম করুণাময়ের এক অপার রহমত।

মুজিব কারো একার আত্মীয় নন। সবার আত্মজ জন। বাঙালির হাজার বছরের আরাধ্য ধন। জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাঙালির প্রাণ পুরুষ। মুজিব মানে একটি বাংলাদেশ। মুজিব মানে বাঙালির স্বাধীনতা। একজন মুজিব মানে এক বিশাল রক্ত সাগর সাঁতরে পাড়ি দেয়া। মুজিব মানে লাল সবুজের প্রিয় পতাকা। মুজিববর্ষ তাই আলাদা এক অন্য মহিমায় সমোজ্জ্বল একটি বছর। সার্বজনীন এক ঐতিহাসিক বছর।

যে ঘাতকেরা শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা উপলব্ধি করতে পারেনি একজন জীবিত মুজিবের চেয়ে একজন মৃত মুজিব কত জনপ্রিয় হতে পারেন? একজন জীবিত মুজিবের চেয়ে একজন মৃত মুজিব কত শক্তিধর? সেই ঘাতকেরা আজ কোথায়?

খন্দকার মোশতাকের নাম আজ কয়জন মানুষে জানে? কয়জনে চেনে তাকে? তারা আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার হাতেগড়া দলের নাম গন্ধ আজ মুছে যেতে বসেছে। এসব নিয়তির নির্মম পরিহাস। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট যাদের ভয়ে কেউ নিহত মুজিব ও তার স্বজনদের জন্য ‘ইন্নালিল্লাহ’ টুকু পড়ার সাহস পায় নাই, তারা আজ গেল কোথায়? এদের অস্তিত্ব পর্যন্ত আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রকৃতির এ এক অমোঘ বিধান। খোদার লীলা বুঝা মুশকিল। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ব্যতীত কারো পক্ষে কোনো কিছু সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস করা সম্ভব নয়।

আজ শেখ মুজিবের নাম কেবল বাংলাদেশের ইতিহাসে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি আজ বিশ্ব ইতিহাসের এক অপরিহার্য অধ্যায়। আব্রাহাম লিংকন, নেপোলিয়ন, মাও সেতুং, গান্ধী, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, নেলসন ম্যাণ্ডেলা প্রমুখ বিশ্ব নেতার নামের সাথে সমান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় আজ বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবের নাম দুনিয়ার সর্বত্র উচ্চারিত হয়। বঙ্গবন্ধু এখন কেবল বঙ্গবন্ধুই নন, তিনি  বিশ্ববন্ধু। জাতিসংঘ তাঁকে নিয়ে এমন ভাবনাই ভাবছে বলে জানা যায়।

আন্তর্জাতিক পরিসরে বঙ্গবন্ধুর পরিচিতি বিশ্বের সর্বত্র আজ। ইউনেস্কো এ বছর আমাদের সাথে মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কেবল শেখ মুজিবকে সম্মানিত করেনি, বিশ্ব দরবারে জাতি হিসেবে আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। শেখ মুজিবকে বিশ্ব নেতার আসনে সমাসীন করেছে। মুজিববর্ষ উদযাপনের যথার্থতার স্বীকৃতি নিয়েছে। এ আমাদের এক অনাবিল গৌরব ও সম্মানের বিষয়। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের কোন ম্যাসেজটি দিতে চেয়েছে, সেটি আজ ভেবে দেখা একান্ত অপরিহার্য একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাতিসংঘ বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ববন্ধু আখ্যা দিয়েছে। ইউনেস্কো মুজিববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এখন উপলব্ধির সময় হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আর কোনো বিতর্ক নয়। জাতির পিতা ইস্যুতে কোনো দ্বিমত নয়। এ বিষয়ে আর কোনো তর্কের অবকাশ থাকে না।

মুজিববর্ষ কারো একার নয়। সব বাঙালির। বাংলাদেশের সব মানুষের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কেবল আওয়ামী লীগের নন। সব বাঙালি আপামর জনতার। আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতা কর্মীদের এই সত্যটি উপলব্ধি করার এখন উপযুক্ত সময়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের চার দেয়াল পেরিয়ে পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যদি কেবল নিজেদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে আটকিয়ে রাখতে চায়, তবে মুজিববর্ষ উদযাপনের কোনো মানে থাকে না। কেবল ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি, সাথে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানও মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করেছে। ‘তোমার নেতা, আমার নেতা- শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ বলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাত ধরাধরি করে সবাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আজ শেখ মুজিবকে জাতির পিতা মানতে যাদের কষ্ট হয়, তাদের এ দেশে বসবাসের অধিকার নেই। মুজিববর্ষেই তাদের এদেশ ছেড়ে চলে যাওয়া সমীচীন।

মুজিববর্ষ নিয়ে সারা বছর লেখালেখি হবে। আজ একটি বিষয়ে সামান্য আলোকপাত করে লেখাটির ইতি টানতে চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে পিতা মুজিবের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের শপথ আমাদের নিতে হবে। তাঁর স্বপ্নের ক্ষেত্রগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রগুলোর একটি হলো শিক্ষা। শিক্ষা ছাড়া দুনিয়ার কোনো জাতি উন্নতির সোপানে আরোহণ করতে পারে না। দক্ষ মানব সম্পদ তৈরি হয় না। বঙ্গবন্ধু এই সত্যটি অনুধাবন করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য কুদরাত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা স্তর সরকারিকরণ করে দিয়েছিলেন। গোটা শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের সূত্রপাত করেছিলেন।

শিক্ষা সরকারিকরণের সেই ধারাটি আর অগ্রসর হতে পারেনি। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর ধরে উল্লিখিত স্তরটি সরকারিকরণ করে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা সরকারিকরণের প্রক্রিয়াটি চলমান রাখা আজ আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। তা না হলে মুজিববর্ষ উদযাপন সফল ও সার্থক হবেনা। এটি সফল না হলে আমরা যতটুকু না এগিয়েছি, তার চেয়ে বেশি পিছিয়ে যাবো। সে আমাদের কারো কাম্য নয়।

লেখক : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035197734832764