মেধাবী ছাত্র রাজীব অজানা রোগে আক্রান্ত - দৈনিকশিক্ষা

মেধাবী ছাত্র রাজীব অজানা রোগে আক্রান্ত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |

মেধাবী ছাত্র রাজীব গাইন। ছোটবেলা থেকে পড়ালেখার জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কেননা তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। জন্মের পর থেকেই বিরল রোগে আক্রান্ত। তার বাম হাতটি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সেই সঙ্গে ফেঁপে উঠেছে তার পিঠ। দীর্ঘ ১৯ বছর কেটে গেলেও এখনও তার শরীরে জন্ম নেয়া রোগের নাম রাজীবের পরিবারের অজানা। তবুও এই বিরল রোগ নিয়ে থেমে থাকেনি রাজীব গাইন। বড়দল আফতাবউদ্দীন কলেজিয়েট স্কুল ও কলেজ থেকে সফলতার সঙ্গে এসএসসি ও চলতি বছর এইচএসসি পাস করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত মাদিয়া গ্রামে বাবা কার্ত্তিক চন্দ্র গাইন, মা মমতা রানী সরকার ও এক ভাইকে নিয়ে বসবাস রাজীবের। মঙ্গলবার সকালে সঙ্গে ফোনালাপে রাজীব গাইন দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘আমিও আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই। স্কুল কলেজে গেলে অন্যরা আমাকে দেখে অনেক সময় দূর থেকে হাসি ঠাট্টা করে। কেউবা আবার সমবেদনা জানায়। আমার চলাফেরা করতে, রাতে ঘুমাতেও অনেক কষ্ট হয়। স্বাভাবিকভাবে কোন কিছুই করতে পারি না। হাতে ও পিঠে খুব ব্যথা করে। তবুও আমি কষ্ট করে আমার পড়ালেখা চালিয়ে গিয়েছি। খুব ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। আর এজন্য আমি সুস্থ হতে চাই। সাধারণ মানুষের মতো বাঁচতে চাই। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সেই সঙ্গে দেশের মানুষের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চাচ্ছি।’

এ বিরল রোগের চিকিৎসা প্রসঙ্গে রাজীব  জানান, জন্মের তিন বছর পর নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। তবে সেখানে সুচিকিৎসা হয়নি। ডাক্তাররা তার রোগের সঠিক কোন চিকিৎসা দিতে পারেননি। তবে জানিয়েছিলেন বয়স যখন ১৫ হবে তখন আপনারা নিয়ে আসবেন। এরপর অস্ত্রোপচার করলে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে অভাবের সংসারে টাকা জোগাড় হয়নি। যার কারণে পরবর্তীতে ভারতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য আর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঢাকাসহ খুলনা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে এ বিরল রোগের চিকিৎসা করতে গিয়েও চিকিৎসকদের অবহেলায় ফিরতে হয়েছে বাড়িতে। কারণ কোন চিকিৎসকই তার এ রোগ নির্ণয় করতে পারেননি। সবশেষ ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ডাক্তাররা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর তারা আমাকে পিজি হাসপাতালে পাঠান। সেখানে গিয়েও রোগ সম্পর্কে জানতে পারিনি।

রাজীবের মা মমতা রানী সরকার  বলেন, জন্মের পর থেকেই ওর বাম হাতের কব্জি ফুলে উঠে। আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে। সাতক্ষীরা, খুলনায় ডাক্তার দেখিয়েও কোন সুফল মেলেনি। কোন ডাক্তার রোগের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেননি। কি রোগ হয়েছে ছেলের সেটিও আমরা জানি না। রাজীবের বাবা মাদুরের ব্যবসা করেন। সেটাতে খুব বেশি রোজগার হয় না। কোন মতে সংসারটা চলে যায়। ছোট বেলায় যখন ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন তারা বলেছিল ১৫ বছর পর আসতে। শুধু অর্থের অভাবে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। এখন তো বাংলাদেশেও চিকিৎসা করার অর্থ নেই আমাদের কাছে। শুনেছি সরকারের সহযোগিতায় অনেক বড় রোগে আক্রান্ত রোগীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছেন। আমার ছেলে অনেক মেধাবী ছাত্র। সে চায় সুস্থ হয়ে আরও পড়ালেখা করবে, চাকরি করবে।

রাজীব জানান, ‘আমাদের পরিবার অসহায় জেনে বড়দল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আমাকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছেন। প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ দিয়েই আমি আমার পড়ালেখার খরচ চালাই।’

এদিকে, সম্প্রতি সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মোঃ তাওহিদুর রহমান রাজীবের এ বিরল রোগের কথা জেনে তার বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন। এ বিষয়ে তিনি  বলেন, রাজীবের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি আবুল কালাম আজাদ স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে ফোনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশও দিয়েছেন। রাজীবের বিষয়ে সবকিছু জেনে আবুল কালাম আজাদ বলেছেন তাকে আগামী ১৮ তারিখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। ইতোমধ্যে রাজীব গাইনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তারা চিকিৎসার জন্য ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন বলে জানান সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন মোঃ তাওহিদুর রহমান।

রাজীব গাইন বলেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন স্যার আমাকে ফোন করে মঙ্গলবার বিকেলে দেখা করতে বলেছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর তিনি বললেন শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে যেতে হবে। শনিবার সেখানকার ডাক্তার আমাকে দেখবেন। এবার হয়তো আমার চিকিৎসার একটা উপায় হবে। রাজিব সবার দোয়া কাছে চেয়েছেন।

ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060021877288818