ছয় বছর বয়সী মেয়ের স্কুলে যাওয়ার জন্য ৪ কিলোমিটার রাস্তা বানালেন তুরস্কের এক বাবা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এই রাস্তায় বানিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মুওলা প্রদেশের ঘটনা এটি। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) ডেইলি সাবাহ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়
প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, শিশু গামজে করকুতের স্কুলে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা বানিয়ে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন বাবা রামাজান করকুত।
কিন্তু রামাজানের ঘর পাহাড় ও জঙ্গলের ভেতরে এত দুর্গম অঞ্চলে যে, অতদূর পর্যন্ত রাস্তা বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় স্থানীয় পৌরসভা এবং প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ঘটনা এটি। কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার কথা শুনে মেয়ের স্কুলের রাস্তা বানাতে তখন নিজেই নেমে পড়লেন রামাজান। কারণ এর মধ্যে তার মেয়ে মেন্তেসে জেলা সদরে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন তিনি। আশপাশে সেটিই একমাত্র স্কুল।
সপ্তাহে পাঁচ দিন জঙ্গলের পাশে প্রধান সড়কে অপেক্ষমান স্কুলের গাড়ি ধরতে মেয়েকে নিয়ে রামাজানের পাড়ি দিতে কয়েকটি পাহাড়। আবার স্কুল থেকে ফিরতে একই কষ্ট করতে হতো তাদের। এখন পাহাড়ি ও জঙ্গলঘেরা দুর্গম পথ দিয়ে মেয়েকে নিয়মিত স্কুলে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছিল না রমজানের। ছোট শিশুটির জন্য তো সেটি আরও ছিল কষ্টকর। তখন তিনি নিজেই নেমে পড়লেন পাহাড় কেটে ও জঙ্গল সাফ করে রাস্তা বানানোর কাজে।
তিনি একটি মাটি খননের বেলদার এবং চারটি ট্রাক ভাড়া করেন। এসব দিয়েই তিনি রাস্তা বানানো শুরু করলেন। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষও তাকে সহায়তা করে। রামাজানকে তারা একটি ট্রাক এবং একটি গ্রেডার মেশিন দেয়।
অবশেষে টানা এক সপ্তাহ কঠোর পরিশ্রম শেষে রামাজান মেয়ের জন্য বানিয়ে ফেললেন একটি রাস্তা। এখন শিশু গামজেকে আর স্কুলের বাস ধরতে দৌড়তে হয় না প্রধান সড়ক পর্যন্ত। গাড়ি এখন তার ঘরের সামনে এসেই নিয়ে যায়।
এদিকে রামাজানের এমন কর্মকাণ্ড সাড়া ফেলে দিয়েছে তুরস্কে। মেয়ের প্রতি বাবার এমন ভালোবাসার কথা সংবাদ শিরোনাম হয়েছে গণমাধ্যমে।
তিন বছর আগে রামাজানের ঘর আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। সেই ঘর ঠিক করতে তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ করেছিলেন। যা এখনও শোধ করতে পারেননি তিনি। এরমধ্যে নিজের খরচেই এই রাস্তা বানালেন, যার জন্য খরচ হয়ে ৪২ হাজার তুর্কি লিরা।
কিন্তু রামাজানের এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সুপ্রসন্ন হয় তার ভাগ্য। জেলা গর্ভনর চেনার ইলদিজ তার ঘরেই এসে হাজির হন। তিনি জানান, প্রাদেশিক গভর্নরের নির্দেশে রামাজানের সকল ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রাস্তা বানাতে রামাজানের যে খরচ হয়েছে সেটিও পরিশোধ করে দেবে কর্তৃপক্ষ।