যে কারণে মিন্নিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত - দৈনিকশিক্ষা

যে কারণে মিন্নিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে পরিকল্পনাকারী হিসেবে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আদালত।


রায়ে বিচারক বলেছেন, “আসামি রিফাত ফরাজী, রাব্বি আকন, সিফাত, টিকটক হৃদয়, মোহাম্মদ হাসান ও মিন্নি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম রিফাত শরীফকে হত্যার অভিন্ন উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এই মামলার ঘটনা ঘটাইয়া তাকে খুন করিয়া পেনাল কোডের ৩০২ ও ৩৪ ধারার অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছে বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হইয়াছে।”

ধারার ব্যাখ্যা দিয়ে বিচারক বলেন, “কতিপয় ব্যক্তি মিলিয়া তাহাদের অভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কোনো অপরাধজনক কাজ করিলে যেভাবে দায় ঠিক হইত, ঠিক সেইভাবেই দায়ী হইবে। তদানুসারে এই মামলার ভিকটিম রিফাত শরীফকে খুন করিবার দায়ে উক্ত আসামিগণ সমভাবে দায়ী।”

বরগুনার ঝড় তোলা এই হত্যাকাণ্ডে ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং চারজনকে খালাস দিয়ে বুধবার এই রায় দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান।

১৫ মাস আগে পুরো বাংলাদেশকে স্তম্ভিত করে দেওয়া ওই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জনের বিচার চলে এ আদালতে। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ছয় আসামির সবাইকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।


গত বছরের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রিফাত শরীফকে। ওই ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা।

এই হত্যাকাণ্ডের পর ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে জেলা শহরটিতে ‘কিশোর গ্যাং’য়ের দাপট, এলাকায় আধিপত্য, মাদক বাণিজ্য আর তাতে প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতার কথা।

প্রধান হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত হন সাব্বির আহমেদ নয়ন, যিনি ছোট্ট জেলা শহরটিতে নিজেকে ‘নয়ন বন্ড’ নামে পরিচিত করিয়ে দল পাকিয়ে নানা অপকর্ম চালাচ্ছিলেন।

হামলার ভিডিও দেখার পর সবার সহানুভূতির কেন্দ্রে ছিলেন রিফাত শরীফের স্ত্রী বরগুনা কলেজের ছাত্রী মিন্নি। কিন্তু ক’দিন বাদেই বেরিয়ে আসে, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক-আধিপত্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রেমের সম্পর্কও।

নয়নের মা দাবি করেন, তার ছেলে ও মিন্নি গোপনে বিয়ে করেছিলেন, পরে নয়নকে ছেড়ে তারই বন্ধু রিফাতকে বিয়ে করেন। সোশাল মিডিয়ায়ও নয়নের সঙ্গে মিন্নির জন্মদিন উদযাপনসহ নানা ছবি আসতে থাকলে ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়।

আবার হত্যাকাণ্ডের কিছু দিন আগে রিফাত শরীফ মাদকসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য নয়নকে দায়ী করেন তিনি। তা নিয়ে বিরোধে মিন্নি নয়নের পক্ষ নিয়ে বলে রিফাতের নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলে মামলার তদন্তকারীরা জানতে পারেন। তারা বলেন, মিন্নি আবার নয়নকে নালিশও দিয়েছিলেন।

তবে হত্যাকাণ্ডের দিনও এসব অজানা ছিল; সবাই নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ হামলাকারীদের কোপ থেকে স্বামী রিফাত শরীফকে রক্ষা করতে মিন্নির ছুটোছুটিই দেখছিল।


তাই রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ যে মামলাটি করেছিল, তাতে ১ নম্বর সাক্ষী ছিলেন মিন্নি। কিন্তু দুদিন পরই চিত্র পাল্টে যায়, যখন দুলাল শরীফ পুত্রবধূর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন।

তারপর পুলিশের তদন্তেও রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততা বেরিয়ে আসে। তদন্তকারীরা বলেন, মিন্নি সেদিন রিফাতকে রক্ষার ভান করছিলেন।

মিন্নি ও তার বাবা মোজাম্মেল হক কিশোর বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করে এলেও পুলিশ মিন্নিকে সাক্ষীর তালিকা থেকে সরিয়ে আসামির তালিকায় যোগ করে অভিযোগপত্র দেয়। আর কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় নয়ন বন্ড বাদ পড়েন আসামির তালিকা থেকে।

রায়ে বিচারক বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ড ‘মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও’ হার মানায়, তাই অপরাধীদের কোনো অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ ছিল না।

“প্রকাশ্য দিবালোকে সনাতনী অস্ত্র রামদা দ্বারা কোপাইয়া সংঘটিত এই নির্মম হত্যাকাণ্ড মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানাইয়াছে। দেশ-বিদেশের সব বয়সের মানুষ তাদের (আসামিদের) এই নির্মমতা প্রত্যক্ষ করিয়াছে। এমতাবস্থায় তাহাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হইলে তাহাদের পদাঙ্ক অনসরণ করিয়া যুবসমাজ ভুল পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা থাকিবে। তাই আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়।”

আদালতের রায়ে মিন্নির দোষ প্রমাণিত হয়েছে, যদিও মোজোম্মেল বলেছেন, তার মেয়ে ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’, তাই রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। অন্যদিকে পুত্রবধূকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে দেওয়া এই রায়ে সন্তোষ জানিয়েছেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ।

অভিযোগ গঠনের আগে গ্রেপ্তার হলেও উচ্চ আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত ছিলেন মিন্নি। বুধবার রায়ের আগে বাবার মোটর সাইকেলে চড়ে গিয়েছিলেন আদালতে, তবে ফেরা হয়নি।

ফাঁসির আসামি হিসেবে আদালত থেকেই মিন্নিকে নেওয়া হয়েছে জেলা কারাগারে। তার সামনে এখন ফাঁসির রশি; আপিলসহ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত তাকে থাকতে হবে কনডেম সেলে।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058600902557373