যৌন নিপীড়নের দায়ে সেই শিক্ষকের লঘু শাস্তি! - দৈনিকশিক্ষা

যৌন নিপীড়নের দায়ে সেই শিক্ষকের লঘু শাস্তি!

জবি প্রতিনিধি |

যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও আব্দুল হালিম প্রামাণিক শিক্ষক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহাল থেকে যাবেন, তা মানতে চাইছেন না অভিযোগকারী দুই শিক্ষার্থী।

চাকরিতে বহাল রেখে তাকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে এই দুই শিক্ষার্থী ‘ন্যায়বিচার’ পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের কাছে নাট্যকলা বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান হালিম প্রামাণিক সম্রাটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের এক ছাত্রী।

পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের কথা জানানো হয়।

বরখাস্তের ওই ঘোষণা আসার পর প্রশাসনের কাছে হালিম প্রামাণিকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন তার বিভাগের আরেক ছাত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল’ প্রথমে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি করে।

তাদের সুপারিশে সিন্ডিকেট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে কেবল তিরস্কার ও পদোন্নতি দুই বছর বিলম্বিত করার শাস্তি দেয়। তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন করে তদন্ত কমিটি গঠন করে।

সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট হালিম প্রামাণিকের শাস্তি হিসেবে পদোন্নতি স্থগিতের মেয়াদ ৮ বছর পেছায়।

পাশাপাশি শাস্তি দেওয়া হয়, আগামী ১০ বছর তিনি প্রশাসনিক কোনো দায়িত্ব পাবেন না। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের কোনো কোর্স নিতে পারবেন না। তিনি নিজের কোর্সের বাইরে অন্য কোনো কোর্সের পরীক্ষায় সম্পৃক্তও হতে পারবেন না।

চূড়ান্ত তদন্তের পর যে শাস্তি এসেছে, তা নিয়ে কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুই অভিযোগকারী।

প্রথম অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বলেন, “এটা একেবারেই সন্তোষজনক রায় না। উচ্চ পর্যায়ের একটা তদন্ত কমিটি এত প্রমাণ পাওয়ার পরও কী বিবেচনা করে এ ফলটা দিল, তা মাথায় আসছে না।

“এমন না যে তাদের কাছে প্রমাণ নাই, অনেক প্রমাণ কিন্তু আছে। অবশ্যই তারা প্রমাণ পেয়েছে, এ কারণেই শাস্তিটা দিয়েছে। তার অপরাধের ক্ষেত্রে এ শাস্তি প্রযোজ্য না একেবারেই।”

তিনি বলেন, “তিন-তিনটা তদন্ত কমিটি হল। প্রথম যে কমিটি ছিল, উনারা প্রমাণ পাওয়ার ফলাফল দিয়েছিল। পরবর্তী যে কমিটিগুলো তারাও ভালোভাবে জানে প্রমাণ আছে, তাদের এ ফলাফল মেনে নেওয়ার মতো না।

“রেজাল্টটা এমন সময়ে দিল, আমাদের কোনকিছু জানানোও হয়নি। এ ধরনের বিচারে আমি খুব হতাশ। আমি চাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য নিতে, তাছাড়া মনে হচ্ছে না আর কোনো পথ আছে।”

“আমরা চাই না উনি ডিপার্টমেন্টে ফিরে আসুক। এ রকম মানুষ ‍শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না,” বলেন তিনি।

দ্বিতীয় অভিযোগকারী শিক্ষার্থী বলেন, “যে রায়টা হয়েছে এতে কিন্তু এক রকমভাবে প্রমাণিত সে দোষী। প্রমাণিত না হলে শাস্তি দেওয়া হত না। যৌন নিপীড়নের মতো একটা ঘটনায় মাত্র এটুকু শাস্তি! এটা কোনোভাবেই আশা করিনি। আমরা এটা মানব না।

“বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাথে না থাকে, এরপর আমরা প্রধানমন্ত্রী বরাবর এবং আরও যেখানে যেখানে করা দরকার, সেখানে সেখানে আবেদন করব।”

হালিম প্রামানিককে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে সে যে অন্য কোনো ছাত্রীর সাথে এমন করবে না, তার নিশ্চয়তা বা নিরাপত্তা কি ভিসি স্যার দেবেন?”

এদিকে শাস্তি কম হয়েছে- বিষয়টি মানতে নারাজ সিন্ডিকেটের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আমার তো মনে হয়, গুরুতর শাস্তিই হয়েছে।”

এ বিষয়ে সিন্ডিকেটের একজন সদস্য জানান, অভিযোগ ‘অকাট্যভাবে প্রমাণিত না হওয়ায়’ এই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতির মতো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।

“তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেখানে তারা বলেনি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ অমূলক নয়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এটা উঠে এসেছে।”

তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক শওকত জাহাঙ্গির বলেন, “আমরা তদন্তে যা পেয়েছি, রিপোর্টে দিয়ে দিয়েছি। সুতরাং প্রশাসন কীভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা উনাদের ব্যাপার।

“শাস্তির ব্যাপারে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি সিন্ডিকেটেও নাই যে সিন্ডিকেটের আলোচনা বা ওইগুলা বলতে পারব।”

যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে এর আগে কথা বলতে চাইলে শিক্ষক হালিম প্রামাণিক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043888092041016