রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ, উজ্জ্বল হলুদের গুড়া না কেনার পরামর্শ - দৈনিকশিক্ষা

রপ্তানি বন্ধের নির্দেশ, উজ্জ্বল হলুদের গুড়া না কেনার পরামর্শ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নয়টি জেলার বাজার থেকে সংগ্রহ করা হলুদের নমুনার ২০ শতাংশে সীসা সনাক্ত করেছে। বাংলাদেশে বাজারে যে হলুদের গুড়ো বিক্রি হয় তাতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক সীসার উপস্থিতি পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে হলুদ রপ্তানি বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শাহনাজ পারভীন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বিষয়ক গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআর, বি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা এক গবেষণায় হলুদে সীসা সনাক্ত হয়েছে যা মানবদেহের ক্ষতি করে বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও তার শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে।

সেই পটভূমিতে আজ (সোমবার) সরকারের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দেশের মশলা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর সাথে এক সভা করেছে।

কীভাবে হলুদে সীসা মেশানো হয়?

বাজারে গিয়ে খালি চোখে আপনি কী বুঝতে পারবেন কোন হলুদটি আসলে ভালো? আইসিডিডিআর, বি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণায় বাংলাদেশের নয়টি জেলার বাজার থেকে গুড়ো করার আগে সংগ্রহ করা হলুদের নমুনার ২০ শতাংশে সীসা বা লেড ক্রোমেট সনাক্ত করেছে।

সীসার উপস্থিতি প্রথম সনাক্ত করেছিলেন আইসিসিডিআর, বি সংস্থাটির গবেষক ড: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলছেন, বিক্রির আগে হলুদের গায়ে ঘষে সেটি উজ্জ্বল করা হয়। আর এটি হচ্ছে আড়তদার পর্যায়ে।

বিক্রির আগে হলুদের গায়ে ঘষে সেটি উজ্জ্বল করা হচ্ছে আড়তদার পর্যায়ে।
তিনি বলছেন, "হলুদকে আরও উজ্জ্বল করার জন্য সীসা ব্যবহৃত হচ্ছে। আস্ত হলুদের গায়ে সীসা ঘষা হয়। জেলা পর্যায়ে যে আড়তদার বা পাইকারি ব্যবসায়ী আছেন তাদের কাছে এমনকি হলুদ পাঠানো হয় যে আমাকে সীসা দিয়ে এটা আরও উজ্জ্বল করে দাও।"

একটি ভিডিওতে দেখানো হয়েছে কিভাবে বড় ঝুড়িতে এক ধরনের গুড়ো ছিটিয়ে পায়ে এক ধরনের বিশেষ জুতো পরে হলুদগুলো ঘষা হচ্ছে।

আর তাতে রঙ পরিবর্তন হয়ে হলুদের বাইরের দিক উজ্জ্বল হলুদ হয়ে যাচ্ছে। আড়তদারদের চাহিদার কারণে কৃষক পর্যায়েও এটি কিছুক্ষেত্রে মেশানো হচ্ছে। স্থানীয় ভাষায় এর অনেক নামে পরিচিত।

যেমন পিউরি, বাসন্তী রং, কাঁঠালি বা ফুল রং। এসব হলুদ উজ্জ্বল করে পাইকারি বিক্রির পরই গুড়ো করা হয়। যাতে রয়ে যায় মাত্রারিক্ত সীসা। উজ্জ্বল হলুদ নয় বরং তার রং কিছুটা হালাক হওয়াই স্বাভাবিক।

এই গবেষণায় আরও দেখা গেছে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ  পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করা ১৭ টি ব্রান্ডের প্যাকেট-জাত হলুদের গুড়ো নয়বার ফেরত দিয়েছে। এসব কোম্পানির বেশিরভাগই ভারত ও বাংলাদেশের। ফেরত আসা পণ্য কী করা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে আবার বিক্রি করা হয়েছে কিনা সেটি স্পষ্ট নয়।

স্বাস্থ্যগত প্রভাব: গর্ভবতী মা ও শিশুর যে ক্ষতি

শরীরে সহনীয় পরিমাপ হল প্রতি গ্রামে ২.৫ মাইক্রোগ্রাম। গবেষণায় ৬ হাজারের মতো নারীর রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ড: রহমান বলছিলেন এমন সীসাযুক্ত হলুদের গুড়ো স্বাস্থ্যের বড় ধরনের ক্ষতি করে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও তার শিশুকে তা বিশেষভাবে আক্রান্ত করে।

তিনি বলছেন, "গর্ভবতী মায়ের রক্তে যদি অতিরিক্ত সীসা পাওয়া যায় তা শিশুর শরীরে চলে যায়। এতে শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শিশুর বুদ্ধি কম হয়।"

শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও শিশুর ওজন কম হওয়া সহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। মায়ের গর্ভকালীন জটিলতা হতে পারে। তিনি আরও বলছেন, এটি মানবদেহে হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে, রক্তের উচ্চচাপ দেখা দিতে পারে, মস্তিষ্কের স্নায়ু-জনিত রোগ দেখা দিতে পারে।

ঠেকাতে কী করছে কর্তৃপক্ষ?

গবেষক ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা ছাড়াও এসিআই, স্কয়ার, প্রাণ ফুডস সহ দেশের প্যাকেট-জাত গুড়ো মশলা উৎপাদনকারী বড় কোম্পানিগুলোর প্রায় সবার প্রতিনিধি সোমবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন।

মশলা যেভাবে বিলিয়ন ডলারের শিল্প হলো সীসার ব্যবহার ঠেকাতে কী করা যায় সেজন্য এটি একটি মত বিনিময় সভা ছিল। তাদের সবার বক্তব্য মোটামুটি একই রকম - পরীক্ষা করে সীসার নমুনা পাওয়া গেলে পুরো লট ধরে হলুদ ফিরিয়ে দেয়া হয়।

প্রাণ গ্রুপের মান নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রধান এস এম মারুফ কবির বলছেন, "প্রতিটা স্যাম্পল আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা হবে। সেটি করার পর হলুদ গুলো নেয়া হবে। আমরা কালার দেয়া নেই শুধু এমন হলুদই আমরা নেই। সীসা পাওয়া গেলে আমরা ভেন্ডরের কাছে তা ফেরত দেই।"

কিন্তু যা তারা ফিরিয়ে দিচ্ছেন তার কী হচ্ছে? সেই প্রশ্নের জবাবে প্রতিনিধিরা বলেন এটি তাদের কাছে যারা বিক্রি করেন তাদের দায়িত্ব। এরপর তাদের আর কিছু করার নেই।

তাহলে সেই হলুদ কী আবারো বাজারেই চলে যাচ্ছে?

সভা থেকে যে তথ্য উঠে এলো তা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায় ছোট কোম্পানি বা বাজারে খোলা গুড়ো মশলা হিসেবেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে বাজারে যে কেউই সীসা কিনতে পারছে যদিও এটির মুল ব্যাবহার শিল্প খাতে হওয়ার কথা।

সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের প্রধান সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলছেন তারা এই বিষয়টি বন্ধ করতে চান। তিনি বলছেন, "আমরা চিঠি দিয়েছি, এটা যাতে কমার্শিয়ালি বিক্রি না হয়। যতদূর জানি বাজারে দশ টাকা দিলেই অনেকগুলো লেড ক্রোমেটের গুড়া কিনতে পাওয়া যায়।"

কোম্পানিগুলোর বাতিল হলুদগুলো বাজারে পৌঁছানোর আগেই তারা নষ্ট করে ফেলতে চান। তিনি বলছেন, "কোম্পানিগুলোর উচিৎ হবে টেস্ট করে যদি কিছু পায় তাহলে যেন আমাদের খবর দেয়। একেবারে কিছুই যদি তারা না করতে চায় তাহলে হলুদগুলো আটকে রেখে আমাদের খবর দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।"

তিনি আরও বলছেন শুরুতে আড়তদার, বিক্রেতা ও কোম্পানি পর্যায়ে সচেতন ও সতর্ক করা হচ্ছে। তবে এরপর থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে যা তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন।

ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039730072021484