রাবিতে টাকায় মেলে গবেষণাপত্র - দৈনিকশিক্ষা

রাবিতে টাকায় মেলে গবেষণাপত্র

রাবি প্রতিনিধি |

সম্প্রতি প্রকাশিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৩-২০১৪) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলে নাম আসেনি ওই বর্ষের তিন শিক্ষার্থীর। যাদের মধ্যে রয়েছেন গত দুই বছর প্রথম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থীও। কারণ তাদের গবেষণাপত্রে জালিয়াতির সন্দেহ করা হচ্ছে। তাই সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে। এখন কমিটির প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে ওই তিন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ।

শুধু নৃবিজ্ঞান বিভাগ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগেই গবেষণাপত্র এভাবে জালিয়াতি কিংবা নকল করার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকানে টাকার বিনিময়ে মিলছে গবেষণাপত্র ও ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন মানসম্মত মৌলিক গবেষণা হচ্ছে না, তেমনি ‘শর্টকাট’ পন্থা বেছে নেওয়ায় গবেষণা কাজে অদক্ষই থেকে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষকরা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান বলেন, ‘এটা তো জানতামই না! অবশ্যই বিষয়টি উদ্বেগজনক। একজন কষ্ট করে গবেষণা করবে, অন্যজন চুরি করে নিজের নামে চালাবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ সম্পর্কে খুব তাড়াতাড়িই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই স্নাতকোত্তর পর্যায়ে থিসিস, রিসার্চ মনোগ্রাফ ও ইন্টার্নশিপের কাজ করতে হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও কৃষি অনুষদে গবেষণা বাধ্যতামূলক।

গবেষণাপত্র নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় তা শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানোর কথা স্বীকার করে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. আদিল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শৃঙ্খলা কমিটিই এখন সিদ্ধান্ত নেবে গবেষণাপত্রগুলো মৌলিক নাকি নকল। বিভাগের পক্ষ থেকে এখন এ বিষয়ে কিছু বলার নেই।’

বিষয়ভিত্তিক গবেষণাপত্র, রিসার্চ মনোগ্রাফ, ইন্টার্নশিপ রিপোর্টসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রবন্ধ প্রিন্ট ও বাঁধাই করতে শিক্ষার্থীরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, স্টেডিয়াম মার্কেট, স্টেশন বাজারের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে যান। এ সময় দোকানিরা সেগুলো কৌশলে কপি করে নেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমন কয়েকজন দোকানি জানান, এভাবে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক গবেষণাপত্র ও ইন্টার্নশিপ রিপোর্টের সফট কপি সংগ্রহ করেন তারা। শিক্ষার্থীরা এগুলোর বিষয় তালিকা দেখে ইচ্ছেমতো বিষয় বেছে নেন। একেকটি গবেষণাপত্রের মূল্য বিষয়ভেদে দুইশ’ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হয়। সফট কপি পেনড্রাইভে দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা দাম বেশি রাখেন। অনেক শিক্ষার্থীই কোনো গবেষণা না করে এভাবে সংগ্রহ করা গবেষণাপত্রের কিছু অংশ পরিবর্তন করে শিক্ষকদের কাছে উপস্থাপন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও স্টেডিয়াম মার্কেটের দোকানগুলোতে অনুসন্ধান করা হলে সাকসেস কম্পিউটার্স, আল-আকসা ইন্টারন্যাশনাল, বর্ণমালা কম্পিউটার সেন্টার, আমার আইটি জব কর্নার, কম্পিউটার পয়েন্ট, শাকিক কম্পিউটার, জান্নাত কম্পিউটারসহ বেশ কয়েকটি দোকানে এ ধরনের গবেষণাপত্র, ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট ও রিসার্চ মনোগ্রাফ পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন গবেষণামনা শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘এ রকম জালিয়াতির কারণে প্রকৃত গবেষক শিক্ষার্থীরা স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক গবেষণার উদ্দেশ্য ও মান নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের উচিত, এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া। আর আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনোভাবেই গবেষণাপত্র এ ধরনের কম্পিউটারের দোকানগুলো সংগ্রহ করতে না পারে।

এমন জালিয়াতির মূল কারণ হিসেবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয়কে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক ড. ফয়জার রহমান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমে গেছে। তারা শুধু রেজাল্টের পেছনে ছুটছে। আবার অনেক শিক্ষকেরও গাফিলতি আছে। শিক্ষার্থী কী গবেষণা করছে, তা ভালোভাবে না দেখেই তারা স্বাক্ষর করছেন।’

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066080093383789