করোনা মহামারিজনিত পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ক্লাস-পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল বন্ধ থাকলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ বিভাগেই চলছে বিভিন্ন বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। অন্যদিকে সরকারি কলেজগুলোর হোস্টেল কেবল উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খোলা থাকায় অন্যদের থাকতে হচ্ছে নগরীর বিভিন্ন মেসে।
এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ৪ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এবার এক লাখ ২৭ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থী এখানে আবেদন করেছেন। অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষার সময় অভিভাবকসহ দেড় লক্ষাধিক মানুষ আসবেন রাজশাহীতে। আবার ১ ও ২ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এই বিভাগীয় অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষাও হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা চাইছেন, দ্রুত আবাসিক হলগুলো খুলে দিয়ে কর্তৃপক্ষ আবাসন সংকট কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখুক। গত রোববার ভর্তি পরীক্ষার আগেই হল খোলার দাবিতে আন্দোলন করেন রাবির শিক্ষার্থীরা। তবে প্রশাসন এই দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় হল খোলা থাকলে রাবির ১৭টি হলে কয়েক হাজার ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবক অবস্থান করতে পারতেন।
এ প্রসঙ্গে রাবির উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর একাডেমিক কাউন্সিল হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ভর্তি পরীক্ষার আগে হল খুলছে না, এটা নিশ্চিত। কেননা হল খোলা এখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। করোনার কারণে এবার ভর্তিচ্ছুদের হলে রাখা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। এখানে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ১৭টি আবাসিক হল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের তথ্যমতে, রাবিতে আবাসন সুবিধা রয়েছে সাড়ে আট হাজারের মতো শিক্ষার্থীর। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) পাঁচ হাজার ৬০০-এর বেশি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে সাতটি আবাসিক হল। এগুলোতে আবাসন সুবিধা রয়েছে দুই হাজার দুইজনের।
রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজ, সিটি কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মহিলা কলেজে আবাসন সুবিধা আছে দুই হাজার ৫৪৮ জনের। তবে রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কারও জন্য কোনো সিট নেই। এখানে ছাত্রছাত্রীদের তিনটি হোস্টেলে সিট রয়েছে ৫০০টি। রাজশাহী কলেজে ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র চারটি হোস্টেল। এখানে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র এক হাজার ৬০০ জনের। রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে আবাসিক ছাত্রীর সংখ্যা ৩৬০ জন। এ ছাড়াও রাজশাহী সিটি কলেজে ৪৮টি এবং কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪০টি আবাসন সুবিধা আছে। কিন্তু এসব হল ও হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের বর্তমানে অবস্থান করতে হচ্ছে মেসে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কামরুল হাসান বলেন, 'অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষার রুটিন দেওয়ায় ভার্সিটিতে এসেছি। কিন্তু হল বন্ধ, অনেক খুঁজে মেসে একটা সিট পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের চাপ থাকায় অনেক মেসেই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। সবাইকে মেস খুঁজতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।'
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া খাতুন বলেন, পরীক্ষা দিতে রাজশাহী এসেছি। হলে থাকাই আমাদের জন্য নিরাপদ। কিন্তু হল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে মেসে থাকছি। কিছু কিছু মেসে তিনজনের জায়গায় চারজন করে রাখছেন মেস মালিকরা। তারাও কেউ সুযোগ বুঝে, কেউ বাধ্য হয়ে সিট ও ভাড়া বাড়াচ্ছেন। হলগুলো খুলে দিলে চাপ কিছুটা হলেও কমত।
রুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেন বলেন, রুয়েটের হল খোলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে দ্রুতই হল খুলে দিতে আমরা কাজ করছি।
রাজশাহী মহানগর মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, নগরীতে প্রায় পাঁচ হাজার মেস রয়েছে। তবে পুরোপুরি বাণিজ্যিক মেস ৪০০-এর মতো। বাকিগুলোতে হয়তো কোনো অংশ মেস, অন্য অংশে বাসা বা অফিস। শিক্ষার্থীসংখ্যার তুলনায় এ নগরে মেসের সংখ্যা এমনিতেই কম, তার ওপর হল বা হোস্টেলগুলোও বন্ধ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় নগরীতে বাড়তি দেড় থেকে দুই লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আসেন। এ অবস্থায় এত মানুষকে জায়গা দেওয়া কঠিনই হবে।