রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো শামসুদ্দীন |

রোহিঙ্গা সমস্যা দিনদিন জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে, প্রতি বছর প্রায় ৩৫ হাজার নতুন শিশুর জন্মের কারণে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বছর বছর বেড়ে চলছে। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলো অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের কারণে নানা ধরনের নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি করছে। এই সমস্যা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেনি, তবে এটা ক্রমেই আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হচ্ছে যা নিয়ন্ত্রন সহজ হবে না। রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের যেকোনো উদ্যোগে পাশে থেকে সমর্থন ও সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সৌদি আরব, ইরান, প্যালেস্টাইন, তুরস্ক, কাতার, কুয়েত ও চীন তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। জিসিসি প্লাস ফোরামের সভায় বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদানের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে সম্প্রসারিত সাময়িক আবাসন তৈরিতে বাংলাদেশ এই বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। জুন মাসে অনুষ্ঠিত নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেনেভাভিত্তিক সেন্টার ফর হিউম্যানিটারিয়ান ডায়ালগ আয়োজিত  ‘অসলো ফোরাম’ সম্মেলনে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতের অবসানের জন্য আসিয়ানসহ আঞ্চলিক দেশগুলোর সক্রিয় ভূমিকা আশা করে। ১০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা এই সম্মেলনে অংশ নেয়।

বাংলাদেশে  আশ্রয় নেয়া  রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ, জাতিসংঘ ও দাতা সংস্থাগুলো ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। জাপান রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে (ডব্লিউএফপি) ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান দিয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ একটি টেকসই সমাধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাপান কাজ চালিয়ে যাবে এবং রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য উন্নত জীবনযাপনের পরিস্থিতি উন্নয়নে ডব্লিউএফপিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করবে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার শুরু থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য জাপানের সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। জাপান ডব্লিউএফপি ও জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশে কাজ করা এনজিওগুলোতে ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি এবং জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন উভয়েরই মিয়ানমারে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে। জাপান  বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্টের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, জ্বালানি খাত এবং যোগাযোগ খাতে আর্থিক প্রতিশ্রুতি বাড়াচ্ছে। সেই সঙ্গে মিয়ানমারে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনর্বাসন প্রকল্পে ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। জাপান মিয়ানমারের রাজনীতিতেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাপান সরকার মিয়ানমারকে ২০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সাহায্য ও উন্নয়ন তহবিল দিয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকট জাপানের জন্য একটি  হুমকি এবং এই সংকট সমাধানে জাপান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করা মিয়ানমারের জন্য অপরিহার্য। জাপান রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে আরো জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানায় এবং এই সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাপান সরকার মিয়ানমারকে এই অনুরোধ জানিয়ে যাবে। 

মিয়ানমারের উপর চীনের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি। মিয়ানমারে অবকাঠামো এবং জ্বালানি খাতে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ আছে। তাছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হচ্ছে মিয়ানমার। চীন রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কয়েক শ’ কোটি ডলার প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। রাখাইনের চকপিউ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের তিনটি বৃহৎ প্রকল্পে চীনের স্বার্থ জড়িত। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হচ্ছে চকপিউ গভীর সমুদ্র বন্দর। এই বন্দরটি চীনের বেল্প অ্যান্ড রোড উদ্যোগের জন্য কৌশলগভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্য থেকে  আমদানি করা তেল বঙ্গোপসাগর হয়ে চকপিউ বন্দরে আসে। রাখাইনের উপকূল থেকে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশে পর্যন্ত ৭৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইনের ৫১ শতাংশ মালিকানা চীনের এবং মিয়ানমারের ৪৯ শতাংশ। এই পাইপলাইন দিয়ে ২২ মিলিয়ন টন তেল ও ১২ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন করা যাবে। বর্তমানে এই পাইপলাইন দিয়ে ১৩ মিলিয়ন টন তেল পরিবহন করা হচ্ছে। চীনের সহযোগিতায় চকপিউতে ২৩০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে শিল্পাঞ্চলে কৃষি, ইকোট্যুরিজম এবং শিল্প-কারখানা স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো মিয়ানমারের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং রাখাইনের অবকাঠামোগত উন্নতিতে অবদান রাখবে। চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়নে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত রেল সংযোগ, রাখাইনে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সীমান্তে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ইয়াঙ্গুনে নতুন নগর প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতা নেবার পরবর্তী এক বছরে দেশটি ৩৮০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদন করেছে।এর মধ্যে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয় করে একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস প্লান্ট করবে চীন। চীনের বিআরআই প্রকল্পগুলো সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য সীমান্ত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা  প্রয়োজন।

প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো মিয়ানমারের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং কৌশলগত গুরুত্বের কারণে দেশটির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারছে না। চীন, জাপান, রাশিয়া এবং ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের সম্পর্ক বেশ ভালো। মিয়ানমার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক জোট আসিয়ানের সদস্য এবং আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের ভালো সম্পর্ক। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আসিয়ান জোট মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক কারণে শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আসিয়ান এই অঞ্চলের  সবচেয়ে কার্যকরী অর্থনৈতিক জোট, আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর মিয়ানমারে শীর্ষ বিনিয়োগকারী। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সিঙ্গাপুরের বিনিয়োগ।

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং তাদের কর্মকর্তাদের উপর আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলো কিছু নিষেধাজ্ঞা দিলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।এসবের পেছনে দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে বলে অনেকে মনে করেন। পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারকে পুরোপুরি ছেড়ে দিতে চায় না। চীন, থাইল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের পরে মিয়ানমারের চতুর্থ ব্যবসায়ী অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। উভয় পক্ষের মধ্যে বছরে ২৫০ কোটি ডলারের বেশি বাণিজ্য হয়। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস তেল ও গ্যাস খাত এবং রাজস্ব আয়ের অর্ধেক আসে এই খাত থেকে। মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীরা দেশটির তেল-গ্যাস ফান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা দেবার দাবি তুললেও মিয়ানমারে থাকা পশ্চিমা কোম্পানিগুলো এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এসব আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান প্রলম্বিত হচ্ছে।

রাখাইনের পরিস্থিতি উন্নত হলে সেখানে কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হবে, হিংসা ও বিদ্বেষ কমে আসবে এবং রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। জাতিগত শত্রুতা কমাতে আলোচনার মাধ্যমে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য গ্রহণযোগ্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এই দুই জাতির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, যা বহু যুগ ধরে চলছিলো। রাখাইন রাজনীতিবিদরা বহু বছর ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মোকাবিলা করে আসছে। তারা শিক্ষিত, বুদ্ধিমান এবং বাস্তববাদী। তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। যে ধরনের জাতিগত ঘৃণা ছড়ানোর ফলে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিলো তা বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। মিয়ানমার সরকার, রাখাইনের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো রোহিঙ্গাদেরকে বোঝা মনে না করে রাখাইনের উন্নয়নের সহশক্তি হিসেবে গ্রহণ করলে এই সমস্যা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এই ধরনের পরিস্থিতি সমাধানে সক্ষম ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দেশ ও মানবিক সংস্থাগুলোকে একাজে এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশ প্রান্তে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রেষণা দিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যেতে প্রস্তুত করতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় এখন ত্রাণ সহায়তা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকরী ব্যবস্থা, দীর্ঘমেয়াদী রূপরেখা প্রণয়ন অত্যাবশ্যক। এর পাশাপাশি মিয়ানমারের পরিস্থিতি উন্নয়ন, রোহিঙ্গাদেরকে প্রেষণা প্রদান, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে গেলে রাখাইনের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। ক্রমাগত ত্রাণ সহায়তা হ্রাস, বৈশ্বিক অন্যান্য সংকটের কারনে রোহিঙ্গাদের থেকে মনোযোগ সরে গেলে বাংলাদেশের জন্য জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে যা কাম্য নয়। অভিবাসী রোহিঙ্গা নেতাদের এবং রোহিঙ্গাদের স্বার্থ দেখভাল করা সংস্থাগুলোকে আরো সোচ্চার হতে হবে। তাদের ভূমিকা এখন পর্যন্ত তেমন জোরালোভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি পায়নি। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিকতা দেখিয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশ ও মানবিক সংস্থাগুলো এখন তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের চলমান কূটনৈতিক উদ্যোগের কারণে রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে এখন বিশ্বের বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী ও শক্তিধর দেশগুলো জড়িত। আমেরিকা, জাপান, কানাডা, ইইউ’র পাশাপাশি চীনের ভূমিকা ও সারা বিশ্বে সুবিদিত। চীন এশিয়া ভূখণ্ডে নতুন কূটনীতিক সাফল্যের পথে হাঁটছে। এর ধারাবাহিকতায় চীন রোহিঙ্গা সমস্যার বর্তমান স্থিতাবস্থা থেকে প্রত্যাবাসন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রত্যাবাসন শুরু করলে বিশ্ব পরিমণ্ডলে চীনের সফলতা জাজ্বল্যমান হবে। রাজনীতি,অর্থনীতি, সামরিক ও কৌশলগত বিষয়ে চীনের ভূমিকা স্বীকৃতি পাবে।

প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত চুক্তিকে কার্যকর ও প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ করার জন্য প্রয়োজনে তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মাধ্যমে সমন্বয় করা যেতে পারে। দীর্ঘ ছয় বছরে এই চুক্তির অগ্রগতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এটাকে বাস্তবমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য করতে হবে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতা সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমার ও বাংলাদেশে একই সঙ্গে কাজ করতে হবে। সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সাহায্য ও ত্রাণ চলমান রাখতে হবে। কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোর উপর থেকে চাপ কমাতে হবে।ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর ও আবাসনে দাতাগোষ্ঠীর সহায়তার হাত বাড়াতে হবে। কক্সবাজারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীল করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের শিক্ষা নিশ্চিত করে রাখাইনে তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সেখানে বিনিয়োগকারী দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক তাদের এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিতে হবে। 

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট উদ্বাস্তু সমস্যা পুরো ইউরোপ মিলে মোকাবিলা করছে, আর মিয়ানমার সৃষ্ট এই রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশকে একা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের একার পক্ষে এই বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান ও অনির্দিষ্টকাল এই বোঝা বহন করা সম্ভব না। একটা জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে সহযোগিতা করার জন্য জাতিসংঘ, বিশ্ব সম্প্রদায়, দাতা সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার  জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে প্রকৃত অর্থে কী পদক্ষেপ নিতে হবে তা নিরূপণ করে সম্মিলিতভাবে প্রয়োজনীয় সমন্বয়পূর্বক কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো শামসুদ্দীন, মিয়ানমার ও রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক

 

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল কাল - dainik shiksha এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল কাল কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে নিয়োগের ভাইভা শুরু এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল জানবেন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ঢাবিতে মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে: ভিসি - dainik shiksha ঢাবিতে মাস্টার্সেও পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা ভাবা হচ্ছে: ভিসি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় ফের বৃদ্ধি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.020309925079346