লাগামহীন মেসের ভাড়ায় জিম্মি রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

লাগামহীন মেসের ভাড়ায় জিম্মি রাজশাহীর শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় আবাসন ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবাসন সংকটের কারণে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তার উপরে মেসগুলোর নির্ধারিত ভাড়া নেই। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে নগরীর মেস মালিকরা। মেস মালিকদের কাছে শিক্ষার্থীদের জিম্মি হয়ে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, মূলত রাজশাহীতে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আবাসন ব্যবস্থা না থাকার কারণেই এ দুরাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে মেস মালিক সমিতির নেতাদের দাবি, এমন অভিযোগ নেই।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে শুরু করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজশাহী কলেজ, নিউ গভ ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান সরকারি কলেজ ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। এছাড়াও বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়েও সংকট শিক্ষার্থীদের আবাসনের। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখের উপর। প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই শহরের বাইরের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা। উচ্চ শিক্ষা নিতে আসা এসব ছাত্র-ছাত্রীদের থাকতে হচ্ছে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা মেস ও ভাড়া বাসায়।

ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজে প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ জনের। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। এরমধ্যে আবাসন রয়েছে মাত্র ৯ হাজার শিক্ষার্থীর। এরমধ্যে মেয়েদের জন্য রয়েছে ৬টি হল ও ছেলেদের জন্য হল রয়েছে ১১টি হল। আবাসন সংকটের সুযোগে রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ের চারপাশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছাত্রবাস ও ছাত্রীনিবাস তথা মেস। হলে জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মেসে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

এদিকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসন সংকটকে পুঁজি করে প্রতিবছরই ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছেন মেস মালিকরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা মধ্যবিত্ত ও অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে মেস ও বাড়ি মালিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সারমিন সুলতানা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো আবাসন সুবিধা না থাকায় তাকে মেসে থাকতে হচ্ছে। এ জন্য শুধু ভাড়াই গুনতে হচ্ছে মাসে ৩ হাজার টাকা। সাথে কয়েক মাস পরপর ভাড়া বাড়ানোর ভয় তো থাকেই। এছাড়াও মেসে ইচ্ছা মতো কোন কিছু করা যায় না। মেসে কোন গেস্ট আসা যাবে না। আসলে রাত প্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। রাজশাহী কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রেবেকা বালা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজে যে পরিমাণ ছাত্রীর আবাসন সুবিধা রয়েছে তাতে গাদাগাদি করে মোট শিক্ষার্থীর ৫ শতাংশ হোস্টেলে থাকতে পারে। আবার অনেক থাকতে হয় মেঝেতে।

রাজশাহী নিউ গভ ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, মেসে থাকার কারণে প্রতিমাসে মেস ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবার। সচ্ছল পরিবারের ছেলেরা যোগান দিতে পারলেও দরিদ্র পরিবারের ছেলেদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মহা. হবিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রাজশাহী নগরী হচ্ছে শিক্ষা নগরী। এখানে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ আবাসন ব্যবস্থা থাকা উচিৎ। কিন্তু সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে তা হয়ে উঠে না। তারপরও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন এবং উদ্যোগও নিয়েছেন প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ আবাসন তৈরির জন্য।

তিনি বলেন, বর্তমানে রাজশাহী কলেজে প্রায় ২৭ হাজার রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। তবে, কলেজে আরও নতুন একটি হল তৈরি করা হচ্ছে। যা চালু হলে সেখানে শিক্ষার্থীরা থাকতে পারবেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর এস এম জার্জিস কাদির দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কলেজে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কারো জন্য কোন সিট নেই। এখানে দুটি হোস্টেল রয়েছে ছেলেদের, মেয়েদের একটি। ছেলেদের দুটি হোস্টেল মিলে ৩০০ শিক্ষার্থী থাকেন এবং মেয়েদের হোস্টেলে ২০০ জন থাকেন। এছাড়া বাকি সকল শিক্ষার্থীই বাইরে মেসে থাকেন বলে জানান তিনি।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরীক্ষার সময় পরীক্ষার্থীরা থাকলে বিভিন্ন কারণে ১০০ টাকা নেয় মেস মালিকা। এই টাকা নেয়ার কারণ বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খরচ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজশাহীতে মেসের ভাড়া নির্ধারণ নেই। তবে, আগামীতে ভাড়া নির্ধারণ করার বিষয়টি চিন্তা করা হচ্ছে।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065670013427734