শিক্ষকদের বেতন না বাড়িয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব না - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষকদের বেতন না বাড়িয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা সম্ভব না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সদ্য প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণে যা দাঁড়ায় তা হলো, পাসের হার অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি এবং জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেকে বেড়েছে। গত এক বছরে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা না বাড়লেও আসনের কোনো কমতি নেই। বরং বিষয়টি এমন যে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ আসন বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খালি থাকার সম্ভাবনা। ধারণা করা হচ্ছে, সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হবে না। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জনা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায় গত শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। বেশ কয়েকবার অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হচ্ছে। এমনও হতে পারে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন খালি থাকবে। এমন অবস্থায় সদ্য পাস করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়েও সমস্যা হতে পারে।

কেন উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না, তা ভাবার বিষয়। যখন আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম ছিল তখন ভর্তি হওয়া ছিল বড় প্রশ্ন। কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠান ও আসনের সমস্যা নেই, কিন্তু শিক্ষার্থী সংকট। প্রশ্নটি কি মানের, নাকি উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে যাওয়া, নাকি আর্থিক সমস্যার কারণে অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের পড়াতে পারছেন না। সরকার, শিক্ষাবিদ, নীতিনির্ধারক ও সচেতন মহলকে ভাবতে হবে আমাদের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট মানসম্মত কি না। পরিসংখ্যান দিয়ে চিন্তা করতে হবে আমাদের উচ্চশিক্ষা কার্যকর কি না। বিষয়গুলো বিবেচনায় না আনলে একটা সময় উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে।  

মানবসম্পদের চাহিদা দেশে যেমন বড় তেমনি আমাদের শিক্ষার্থীরা বিদেশেও লেখাপড়া ও কাজের সুযোগ পাচ্ছে। ক্রমাগত শিল্পায়নের দিকে ধাবমান আমাদের দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ তৈরি করছে। আমাদের প্রয়োজন পড়ছে প্রকৌশলী, ডাক্তার ও ব্যবসায় শিক্ষায় পারদর্শী জনবল। আমরা প্রয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তৈরিও করছি উপরোক্তদের, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশি। যদি ভুল বলে থাকি তাহলে এমনও বলা যায়, প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্পন্ন জনবল আমরা তৈরি করতে পারছি  না। ফলে অনেক সময় বাইরে থেকে আমাদের জনবল নিয়োগ দিতে হচ্ছে। আমাদের এত এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এত শিক্ষিত জনবল থাকা সত্ত্বেও কেন বাইরের দেশের লোকদের আমাদের নিয়োগ দিতে হয়।

এখানেই প্রশ্ন, আমরা মানসম্মত জনবল তৈরি করতে পারছি কি না। আমরা তৈরি করছি কিন্তু যথাযথ মান বজায় না রেখে; ফলে অনেক সময় বিদেশে গিয়েও আমাদের জনবল ভালো সুবিধা করতে পারে না। অবশ্য বিদেশে পড়াশোনা করে চাকরি করা লোকদের কথা ভিন্ন। তারা অনেক সময় অন্যদের চেয়েও ভালো করতে পারেন। আমাদের সচেতনভাবে ভাবতে হবে আমরা উচ্চশিক্ষাকে কোথায় নিয়ে যেতে চাই। উচ্চশিক্ষিত বেকার জনবল তৈরির কারখানা তৈরি না করে প্রয়োজনমাফিক দেশ ও দেশের বাইরে প্রয়োজনীয় মানসম্মত জনবল তৈরির দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। প্রয়োজনে দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ভর্তি আসন কমিয়ে দিচ্ছে, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়কেও আসন ও বিষয় কমানোর বিষয়টি ভাবতে হবে। এক ধাপ এগিয়ে প্রয়োজনে মানহীন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথাও ভাবতে পারি। বড় ভাবনা বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান কিভাবে বাড়ানো যায় এবং প্রয়োজনে টেকনিক্যাল ও প্রযুক্তি শিক্ষা প্রসারের জন্য নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা।

এখন সরকারের পক্ষে যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সহজ, তেমনি বেসরকারি পর্যায়ে তা আরো সহজ। আগে গ্রামে একটি বিদ্যালয় কিংবা কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো। মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এ কাজ করতে হতো। সময় অনেক বদলে গেছে। এখন অনেকেই নিজস্ব অর্থ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। কিন্তু আমাদের চোখ বিদ্যালয় কিংবা কলেজের মধ্যে বেশি সীমাবদ্ধ নয়, আমরা চাই মেডিক্যাল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে। গুরুত্বকে অস্বীকার করছি না, কিন্তু আমরা কি গুণগত শিক্ষাকে মাথায় রেখে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করছি; নাকি গুণগত মান বজায় রাখতে পারছি। যদি তা-ই হতো, তাহলে আমাদের আসন ফাঁকা থাকার কথা নয়। বরং শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিযোগিতা থাকার কথা ছিল।

কিন্তু আমরা দেখছি গুটিকয়েক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির চাপ ও প্রতিযোগিতা। আমার টাকা থাকলে আমি রাতারাতি ভবন তৈরি করে মেডিক্যাল কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে পারি এবং অনেক উদ্যোক্তা তা করছেন। কিন্তু দেখা যায় সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে না। কেননা এখনকার শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনেক সচেতন। এ কথা সত্য, আমরা রাতারাতি মান উন্নত করতে পারব না কিন্তু মান উন্নত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারব। এ জন্য মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।

শিক্ষাকে ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা এবং উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। অন্যান্য দেশে নয়, আমাদের দেশে শিক্ষকদের পারিশ্রমিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কাজেই লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকলে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করা সহজ হবে না। আর তা করতে না পারলে শিক্ষার গুণগত মান কোনোভাবেই উন্নত করা সম্ভব নয়।

আমাদের মনে হয় প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আর না বাড়িয়ে কিভাবে বিদ্যমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান বাড়াতে পারি তার দিকে নজর দেওয়া উচিত। তবে আমাদের টেকনিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘাটতি রয়েছে। সেদিকে বেশি নজর দিতে হবে। উচ্চশিক্ষাকে একটি উন্নত ও মানসম্মত জায়গায় নিয়ে আসতে হলে প্রায় একই ধরনের কারিকুলাম প্রণয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও পদোন্নতিকেও একই মানে নিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শিক্ষাকে দেখতে হবে। সবার আগে দরকার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া, বরাদ্দ বাড়ানো এবং শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদার দিকে নজর দেওয়া। নইলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা কখনো সম্ভব হবে না।   

 লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032849311828613