শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং জনগণ যাতে যথাযথ স্বাস্থ্য সেবা পায়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে দৃঢ় ভূমিকা রাখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) পরামর্শ দেন তিনি।
সোমবার (১৩ মে) দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের বার্ষিক রিপোর্ট-২০১৮ পেশ করেন। এর পর বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান কমিশন চেয়ারম্যান ।
এ সময় দুদকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কমিশনার (তদন্ত) এএফএম আমিনুল ইসলাম, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত। বঙ্গভবন প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রপতি বিশেষভাবে বলেছেন, শ্রেণি কক্ষে যাতে মানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে দুদক জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের মধ্যে যেন দুর্নীতির প্রকোপ সৃষ্টি না হয় সেদিকেও নজর রাখতে বলেছেন রাষ্ট্রপতি।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে থাকে। তারা ডিসি, এসপির কাছে যেতে পারে না। তারা মনে করে তহসিলদারই তাদের সমস্যার সমাধান করবে। ওইসব তহসিলদার এবং আরও ছোট পর্যায়ের কর্মচারীদের দুর্নীতি যাতে বন্ধ হয়, সে ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে দুদককে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দুদক দুর্নীতি কমাতে পারেনি। যতক্ষণ না দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন শুরু হবে, ততক্ষণ এটি সম্ভব নয়। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, গত দু'বছর ধরে শুনে আসছি, বেসিক ব্যাংক আর বেসিক ব্যাংক। মামলার কারণেই বেসিক ব্যাংকের দেড় হাজার কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
দুদকের এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে কমিশন ভূমি ব্যবস্থাপনা, পাসপোর্ট প্রদান সহজ করা, স্বাস্থ্য, আয়কর, হিসাবরক্ষণ অফিস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, সরকারি নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা, মন্ত্রণালয়ের কার্য উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জনহয়রানির সম্ভাব্য উৎসসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানি বন্ধে ১২০টি সুপারিশ করা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পদ্ধতিতে কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁস, অনুদান, উন্নয়ন তহবিলের নামে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ থাকে। এর পরিবর্তনের সুপারিশ করছে দুদক। তারা মনে করে, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়গুলোর বিদ্যমান ভর্তি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। একইভাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত একক পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন একটি সমন্বিত ভর্তি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চালাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ম্লান করে দিচ্ছে বলে মনে করে দুদক। এ জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সকল সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দুদকের বক্তব্য, সর্বোচ্চ মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীরই কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ পাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ভর্তি নিয়োগ-নীতিমালা প্রণয়ন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যেতে পারে।
সংবিধান অনুসারে একাধিক কর্ম কমিশন সৃষ্টি করে এর মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা যেতে পারে। এতে নিয়োগ প্রত্যাশীদের হয়রানি, নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার শ্রম, সময় ও অর্থ এবং দীর্ঘসূত্রতা সর্বোপরি দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি নেতিবাচক কর্মকাণ্ড কমে যাবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ পাওয়ারা নিজেদের আত্মমর্যাদাশীল কর্মচারী হিসেবে প্রজাতন্ত্রের কাজে আত্মনিয়োগ করতে পারবেন।