এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেই। যারা টিউশনি করে নিজের খরচ চালাত, পরিবারকে সহায়তা করত, এরাও বেকার। এ অবস্থায় হাওরাঞ্চলের গ্রামে গ্রামে ধান কাটতে শিক্ষার্থী ভাগালো গ্রুপ (শেয়ারের ভিত্তিতে ধান কাটা-মাড়াই) গঠিত হয়েছে। এসব শিক্ষাসংগ্রামীরা নিজের পরিবারের ধান কাটা, মাড়াইয়ের পাশাপাশি, অন্যদের ধানও অপেক্ষাকৃত কম টাকায় কেটে দিচ্ছেন। ফলে একদিকে নিজেরা কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারছেন, অন্যদিকে কৃষকরা কম খরচে গোলায় ধান তুলতে পারছেন।
শাল্লার ডুমরা গ্রামের বাসিন্দা রিংকু তালুকদার। সিলেট মদন মোহন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিংকু টিউশনি করেই পড়াশোনার খরচ চালান। জানালেন, প্রায় এক বছর ধরে টিউশনি নেই তার। গত বৈশাখেও বাড়িতে থেকে ধান কাটার কাজ করেছেন। এবার গ্রামের অন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহে রীতিমতো ভাগালো গ্রুপ করেছেন তারা।
রিংকু জানান, তাদের ১৪ জনের গ্রুপ। সবাই বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সকাল ৬টা থেকেই তাদের ১৪ জনের দল ধান কাটা শুরু করে। দুপুরে কাটা ধান খলায় (মাড়াই করার স্থানে) নিয়ে যায়। খলায় খাওয়া দাওয়া শেষে আবার হাওরে ধান কাটা শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এরপর আবার খলায় গিয়ে বোমা মেশিনে রাত ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মাড়াইয়ের কাজ হয়।
সদস্যদের নিজেদের ক্ষেতে ধান পাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাটার সিদ্ধান্ত রয়েছে। অন্যদের ধানও অপেক্ষাকৃত কম ভাগে কেটে দিচ্ছেন তারা।
শাল্লার ডুমরা গ্রামের কৃষক অবিনাশ দাশ বললেন, এবার লকডাউনের জন্য অনেক শ্রমিকের আসা হয়নি এই এলাকায়। তাতেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। গ্রামের শিক্ষিত তরুণরাই নেমেছেন ধান কাটায়। ব্যাপারীরা ৬-৭ মণ ভাগে ধান কাটছেন। কিন্তু আমাদের শিক্ষিত তরুণরা ধান কাটছেন ৪-৫ মণ দরে।
শাল্লার উদগল হাওরে মিলল একই ধরনের ভাগালো গ্রুপের। কৃষ্ণপুর কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লিপু দাশের নেতৃত্বে এই ভাগালো গ্রুপেও ১৪ জন সদস্য রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০ একর জমির ধান কেটেছেন তারা। ১২ দিন হয় ধান কাটতে নেমেছেন। প্রত্যেকে ধান কেটে ২০-২২ মণ ধান ঘরে নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, শিক্ষার্থীরা নেমেছেন প্রত্যেকটি হাওরে, ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ফরিদুল হাসান বললেন, ক্রান্তিকালে শিক্ষার্থীরা হাল ধরছে বহুকাল আগে থেকেই। এবার লকডাউনের সময়ে হাওরে গেলে গর্ব হয় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরিশ্রম দেখে। অভিবাদন তাদের। সুনামগঞ্জে এবার তিন লাখ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষাবাদ হয়েছে।