শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কান্না - দৈনিকশিক্ষা

চতুর্থ বিষয়ের ফল যোগ না হওয়ায় বিপর্যয়শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কান্না

রুম্মান তূর্য |

রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি আরিয়ান। করোনার কারণে শুধু গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ের ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার দাবি, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে তার চতুর্থ বিষয়ের ফল আসেনি, তাই ফল প্রত্যাশার চেয়ে খারাপ হয়েছে। 

গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে কথা হয় আরিয়ানের। শুধু তিনিই নন, ফল প্রকাশের পরদিন (সোমবার) তার মতো অনেক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক নানা অভিযোগ নিয়ে বোর্ডে ভিড় করেছেন। বোর্ডে আসা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে চতুর্থ বিষয়ের ফল যোগ হয়নি। তাই তাদের ফল খারাপ হয়েছে।

আরিয়ান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মোট তিনটি বিষয়ে এ প্লাস আসেনি। এর মধ্যে দুইটি বিষয়ের গ্রেড আসলেও চতুর্থ বিষয়ের গ্রেড ফলে যোগই হয়নি। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ের ফল সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও তা হলো না কেন বুঝতে পারছি না। জেএসসি ও এসএসসিতে এ দুই বিষয়ের ফল ভালো ছিল। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ের গ্রেড না দিয়েই আমার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল দেয়ায় আমার ফল আসেনি। এ বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কারভাবে শিক্ষার্থীদের জানানোও হয়নি। বোর্ডে এসেছি এ বিষয়ে কথা বলতে। 

সকাল ১০ টায় রাজধানীর বকসি বাজারে বোর্ড অফিসে আসলেও দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি বলেও জানান এ শিক্ষার্থী। এ সমস্যা সমাধান হবে কি না প্রশ্ন রেখে আরিয়ান বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে অপেক্ষা করেও কাউকে অভিযোগই জানাতে পারলাম না। আমার অভিযোগ তো যৌক্তিক।’ এটার সমাধান হবে কিনা প্রশ্ন তার। চোখে মুখে হতাশা নিয়ে এ শিক্ষার্থী বলেন, কলেজও আমাদের সমস্যা শুনতে চাচ্ছে না, তারাও আমাদের নিয়ে ভাবছে না। এখানেও কাউকে সমস্যার কথা বলতে পারছি না। জানি না চতুর্থ বিষয়ের ফল পাবো কি না।’ 

দুপুরে বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস কক্ষের সামনে ফল নিয়ে অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় দেখা যায়। সে সময় কথা হয় গাজীপুর থেকে ঢাকা বোর্ডে আসা ইয়াসিনের সঙ্গে। রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া এ শিক্ষার্থীর ফলেও চতুর্থ বিষয়ের গ্রেড যুক্ত হয়নি।  

তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ‘আমার সব বন্ধুর সাত বিষয়ের ফল আসলেও আমার চতুর্থ বিষয়ের গ্রেড যোগ হয়নি। ছয় বিষয়ের গড় বিবেচনায় জিপিএ এসেছে ৪ দশমিক ১৭। কিন্তু এ বিষয়ের ফল এলে তার গ্রেড আরও ভালো হতো। সকাল সাড়ে দশটা থেকে অপেক্ষা করেও কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে বিষয়টি জানাতে দেখা করতে পারিনি। তারা আমার সমস্যা শুনলে সমাধান হতো।’

ফল যোগ না হওয়ার জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিংকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমার জেএসসি ও এসএসসিতে চতুর্থ বিষয়ের ফল ভালো ছিল। কিন্তু তা যোগ হয়নি। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে তা যোগ হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা এর সমাধান চাই।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক ছাত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। সববিষয়ে এ প্লাস পেলেও চতুর্থ বিষয়ে তার এ প্লাস আসেনি। তিনি বলেন, ‘জেএসসি ও এসএসসিতে চতুর্থ বিষয়ে এ প্লাস পেলেও এইচএসসিতে চতুর্থ বিষয়ে এ প্লাস আসেনি। কিন্তু বোর্ড যে নিয়ম সাবজেক্ট ম্যাপিং করেছে সে হিসেবে আমার চতুর্থ বিষয়ে এ প্লাস আসার কথা। কিন্তু কী হিসেবে ম্যাপিং করা হয়েছে, তা বুঝতে পারছি না।’

চতুর্থ বিষয়ের ফল যোগ না হওয়ায় বিপর্যয় :

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার পর ফলে অসন্তুষ্ট পরীক্ষার্থীরা সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলেছেন। শুধু আরিয়ান বা ইয়াসিন নন, বোর্ডে আসা অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও জানান, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের ফলে তাদের অনেকের চতুর্থ বিষয়ের ফল যোগ হয়নি। কিন্তু তারা জেএসসি ও এসএসসিতে এ বিষয়ে ভালো করেছিলেন। বোর্ডে সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পর এসব শিক্ষার্থী কোনো সমাধান পাননি। 

প্রক্রিয়া নিয়ে ধোঁয়াশা :

গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়া এক শিক্ষার্থীর মা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়ের ফল খুব ভালো হয়নি। রসায়নে এ প্লাস পায়নি, বাংলাতে গ্রেড কম এসেছে। কিন্তু বাংলায় এসএসসি ও জেএসসিতে মেয়ের ফল ভালো ছিল। কিন্তু কেন বাংলায় জিপিএ ফাইভ এল না তা জানতেই বোর্ডে আসা। 

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে পরীক্ষা নেয়া হয়নি, তা ঠিক আছে। কিন্তু কোন হিসেবে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে ফল দেয়া হচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। অনেকে বোর্ডে এসেছেন তাদের বেশিরভাগের অভিযোগ সাবজেক্ট ম্যাপিং নিয়ে। অনেকের চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ হয়নি। কী উপায়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং হচ্ছে, তা আমাদের কাছে এমন কী শিক্ষকদের কাছেও পরিষ্কার নয়। 

আরিয়ান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা অনেকে চতুর্থ বিষয়ের গ্রেড পাইনি। কী উপায়ে সাবজেক্ট ম্যাপিং করে আমাদের চতুর্থ বিষয়ের ফল দেয়া হলো না, তাও আমরা জানি না। বিষয়টি বোর্ড কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের কাছে এবং সাধারণ শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের কাছে পরিষ্কার করেনি।’

চতুর্থ বিষয়ের ফল না পাওয়া ইয়াসিন আলী বলেন, পরীক্ষা নিতে না পারায় সাবজেক্ট ম্যাপিং হয়েছে। কিন্তু এর ফলে আমার চতুর্থ বিষয়ের নম্বর যোগ হয়নি। কী কারণে যোগ হয়নি, তা আমরা জানি না।  

সমাধানের আশ্বাস শিক্ষা প্রশাসনের :

এদিকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সার্বিক সমস্যা পর্যালোচনা করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা। এসব শিক্ষার্থীর জটিলতা নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম আমিরুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি যৌক্তিক কারণে জটিলতায় পড়েন, তাহলে তা অবশ্যই সমাধান করা হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেব সব কাগজপত্রসহ তাদের অভিযোগ বোর্ডকে জানাতে। আমরা সার্বিকভাবে তাদের বিষয় পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063250064849854