শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরীর জেরার মুখে পড়েছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তিন ঘণ্টা আলোচনার পরও দুই মন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে পারেননি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ্আজ মঙ্গলবার দৈনিক কালেরকন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠকে বসেন দুই মন্ত্রী। আলোচনায় মন্ত্রীরা যেটুকু জেনেছেন এবং তা থেকেই যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাতেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অস্বস্তি শুরু হয়েছে। পুরোপুরিভাবে সব বিষয় জানতে শিগগিরই বিভাগের সব শাখাপ্রধান এবং এর আওতাধীন সব দপ্তর, অধিদপ্তর, শিক্ষা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ছয়টি শাখা ও দুটি প্রশাখার কাজ সম্পর্কে কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রীদের পাল্টা প্রশ্নের জালে তাঁরা আটকে পড়েছেন। তবু হাল না ছেড়ে কর্মকর্তারা মন্ত্রীদের সাধ্যমতো বুঝিয়েছেন। কিন্তু তাতে মন্ত্রীরা কতটুকু ‘তৃপ্ত’ হয়েছেন, তা বোঝা যায়নি। বস্তুতপক্ষে বৈঠক শেষে কোনো কর্মকর্তাই মুখ খুলতে চাননি। প্রায় সবাই বলেছেন, শিক্ষার সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো হবে।
নাম প্রকাশ না করে একজন কর্মকর্তা বলেন, বেশ আগ্রহভরে সচিব উপস্থাপনা শুরু করলেও তাতে ভাটা পড়ে। মন্ত্রীদের প্রশ্নের মুখে বারবার তাঁকে থামতে হচ্ছিল। কারণ এ উপস্থাপনার মধ্যেই মন্ত্রীরা সচিবকে নানা প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছিলেন কোথায় কী? উত্তরে কখনো সন্তুষ্ট হয়েছেন আবার কখনো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন মন্ত্রীরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যাক্রো’ লেভেলে শিক্ষার সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ‘মাইক্রো’ লেভেলে পরে আলোচনা হবে। কোচিং ব্যবসা, অতিরিক্ত ফি নেওয়া, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা, নোট-গাইড বইয়ের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার সব বিষয় আমরা মাননীয় মন্ত্রীদ্বয়কে অবহিত করেছি। তাঁরা অবহিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো হবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চাঁদপুরের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথা আলোচনায় টেনে এনে বলেছেন দেশের আর কোথায় কোথায় কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হয়—এমন তথ্য কারো কাছে আছে কি না। তখন সচিব বলেন, ‘আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) বলেছি, দেশের কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে তার তালিকা করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে। পুরো তালিকা মন্ত্রণালয়ে আসার পর খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কোচিংসংক্রান্ত আলোচনাও হয়েছে বৈঠকে। কিভাবে তা বন্ধ করা যায়, সেই বিষয়ে করণীয় জানতে চান মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষা বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) জনবান্ধব করতে নজরদারিতে রাখার কথাও বলেছেন। শিক্ষা আইন না হওয়ার বিষয় সম্পর্কে মন্ত্রী জানতে চান। তখন সচিব মন্ত্রীকে সর্বশেষ তথ্য জানান।
উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বহু বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গত ১০ বছরে শিক্ষায় বড় সাফল্য রয়েছে। এ সাফল্য ধরে রাখার জন্য আমরা কাজ করছি। আমরা ধারাবাহিকতায় বিশ্বাসী। শিক্ষায় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ‘রেসপনসিবল’ হওয়া। পাশাপাশি শিক্ষা খাতে মনিটরিং বাড়াতে হবে। এসব করতে পারলে আমরা শিক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে পারব।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ