সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার ঘটনায় রাজধানীর স্কুলগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারও প্রবেশে যেমন কড়াকড়ি রয়েছে, তেমনি স্কুলের অভ্যন্তরেও নেওয়া হয়েছে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তবে এসব উদ্যোগ নেওয়ার পরও শঙ্কা কাটছে না বলে জানিয়েছেন অভিভাবক ও স্কুলপ্রধানরা।
ঈদুল ফিতরের ছুটির পর অধিকাংশ বাংলা মাধ্যম স্কুলে ক্লাস শুরু হলেও রাজধানীর নামকরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর অধিকাংশই এখনো খোলেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কলাসটিকা, মাস্টারমাইন্ড, সানিডেল, গ্রিন হেরাল্ড, দিল্লি পাবলিক স্কুল, টার্কিশ হোপ স্কুলসহ বেশ কিছু ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে অনির্ধারিত ছুটি চলছে। স্কুল বন্ধ থাকার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুল খোলা হচ্ছে না।ধানমন্ডিতে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ঈদের ছুটির পর ২৪ জুলাই ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এরপর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে ৩১ জুলাই স্কুল খুলবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এরপরও ক্লাস শুরু হয়নি। বুধবার স্কুলটিতে গেলে এক শিক্ষক বলেন, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস আগামীকাল রোববার শুরু হবে। আর পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে মঙ্গলবার থেকে।
ধানমন্ডির কয়েকটি স্কুলে শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গিয়ে শুধু বাড়ির কাজ (হোমওয়ার্ক) করছে। অভিভাবকদের ই-মেইল ও খুদে বার্তার মাধ্যমে স্কুলে ডেকে এনে এক সপ্তাহের ‘বাড়ির কাজ’ দেওয়া হচ্ছে। অভিভাবকেরা সন্তানদের বাড়ির কাজ নিজে স্কুলে গিয়ে জমা দিয়ে আসছেন।
মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড স্কুল খোলার কথা ছিল ৮ আগস্ট। কিন্তু ছুটি অনির্ধারিত সময়ের জন্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক।
স্কলাসটিকা খোলার কথা ছিল ২৪ জুলাই। এখনো তা খোলা হয়নি। কিছু নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়ার পর আগস্টের কোনো এক সময় স্কুল খুলবে বলে জানানো হয়।
গত বুধবার বিকেলে স্কলাসটিকার গুলশান ক্যাম্পাসে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সভা করেন। বিভিন্ন ইংলিশ মাধ্যম স্কুলের প্রধান বা স্কুলের প্রতিনিধিরা ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা থেকে স্কুলগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি ছাত্রদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়। সভায় ডিএমপির কমিশনার সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানান।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, স্কুলের অভ্যন্তর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে এবং দেয়ালে বিষয়টি লিখে উল্লেখ করে দিতে হবে। আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া ছাড়া কাউকে যেন স্কুলের ভেতর প্রবেশ করতে দেওয়া না হয় এবং প্রয়োজনে যেন তল্লাশি করা হয়। স্কুলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখার ওপরও জোর দেন তিনি।
তবে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোর ক্লাস পুরোদমে চলছে। স্কুলগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। বুধবার মোহাম্মদপুরের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস চলাকালীন প্রধান ফটক পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। বাইরের কাউকে এমনকি অভিভাবকদেরও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল রবি পিউরিফিকেশন সাংবাদিকদের বলেন, আগে ছাত্ররা স্কুল শেষ হওয়ার পর স্কুলের মাঠে অনেকক্ষণ খেলাধুলা করত। কিন্তু এখন অভিভাবকেরা এতটাই চিন্তিত থাকেন যে, স্কুল শেষ হওয়ার পর ছাত্রদের আর বেশিক্ষণ স্কুলে থাকতে দেওয়া হয় না। সব সময় একটা শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
স্কুলের সামনে পুলিশি পাহারার বিষয়ে তিনি বলেন, আগেও পুলিশ ছিল। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাদের আরও সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি। গতকাল প্রতিষ্ঠানটির ইকবাল রোডের বালিকা শাখায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের প্রধান ফটকের দুই পাশে দাঁড়িয়ে দুজন নিরাপত্তারক্ষী। শিক্ষার্থী ছাড়া আর কাউকে তাঁরা ঢুকতে দিচ্ছেন না।
প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, প্রয়োজন হলে শিক্ষার্থীদের ব্যাগও তল্লাশি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সবকিছুই করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ধানমন্ডির কাকলী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে কথা হয় অভিভাবক নাজনীন সুলতানার সঙ্গে। নিজের সন্তানকে স্কুলে ঢুকিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। প্রথম আলোকে বলেন, সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার পর সারাক্ষণ উদ্বেগ কাজ করে। স্কুল ছুটির পর বাসায় ফিরে মন কিছুটা শান্ত হয়।
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশে সাময়িকভাবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সব অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা অনুকূলে এলে শিগগিরই আবার সব ধরনের কার্যক্রম চালুর আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বুধবার ব্রিটিশ কাউন্সিল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। তবে এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল এক্সামিনেশন’ এর নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল গণমাধ্যমে ছাপানো এক বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে। এ ক্ষেত্রে স্কুলের পরীক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র স্কুল প্রার্থী নিবন্ধন লিংকের জন্য নিজেদের স্কুল এবং প্রাইভেট পরীক্ষার্থীদের ব্রিটিশ কাউন্সিলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিবন্ধন করার জন্য বলা হয়েছে।