শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বিতর্ক - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বিতর্ক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত কয়েক বছরের মতো আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত মিলিয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৫.২ শতাংশ। খাতভিত্তিক বরাদ্দ হিসেবে এটি সর্বোচ্চ। কিন্তু শিক্ষা থেকে প্রযুক্তি আলাদা করা হলে শুধু শিক্ষায় এই বরাদ্দ ১১.৬৮ শতাংশ। আবার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুধু শিক্ষা বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নয়, শিক্ষা নিয়ে অনেক মন্ত্রণালয়ই কাজ করে। সে হিসেবে শিক্ষায় আগামী অর্থবছরে ব্যয় হবে জিডিপির ৩.০৪ শতাংশ। কিন্তু আগামী অর্থবছরে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যে বরাদ্দ তা জিডিপির ২.২ শতাংশ। ফলে শিক্ষায় বরাদ্দ নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। মঙ্গলবার (১৮ ‍জুন) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষায় বরাদ্দ বলতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দকেই বোঝায়। অন্য মন্ত্রণালয় শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো কাজে ব্যয় করলে তা সেই মন্ত্রণালয়েরই কাজের অংশ। ওই বরাদ্দকে শিক্ষার সঙ্গে মেলালে চলবে না। যেমন মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে, যা স্বাস্থ্য খাতেরই অংশ। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ আরো কিছু মন্ত্রণালয়ে প্রশিক্ষণসংক্রান্ত কিছু কাজ হলেও সেগুলোকে শিক্ষার সঙ্গে মেলানো উচিত নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি মিলিয়ে বরাদ্দ ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ৬১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। প্রযুক্তি অংশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৬ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে এক হাজার ৯৩০ কোটি টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক  বলেন, ‘মূলত শিক্ষা নিয়ে কাজ করে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তথ্য বা প্রযুক্তি শিক্ষার সঙ্গে সরাসরি যোগ করা ঠিক হবে না। শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিলে দুই মন্ত্রণালয়কে ধরেই সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকা উচিত। আমাদের মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্পন্ন শিক্ষক দরকার। বিশেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক থেকেই গড়ে তোলা দরকার। এ জন্য শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে একই সঙ্গে এই বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষায় বরাদ্দ পরিমাণে বাড়লেও শতকরা হারে বাড়েনি। আমাদের দাবি, শিক্ষায় মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হবে। তবে এটা কয়েক বছরকে টার্গেট করে পর্যায়ক্রমে উন্নীত করা যেতে পারে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে অন্য মন্ত্রণালয় শিক্ষাসংক্রান্ত কাজে কী ব্যয় করছে, সেটা যোগ করা। তবে শিক্ষাসংক্রান্ত সব ব্যয়ই শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমন্বয় করতে পারে। এ ছাড়া শিক্ষানীতি বাস্তবায়নেও জাতীয় বাজেটে প্রতিফলন থাকতে পারত। সেটা না থাকায় বোঝা যায়, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারেরও পরিকল্পনা নেই।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে শিক্ষার প্রত্যক্ষ ব্যয়ই শিক্ষায় বরাদ্দ হিসেবে ধরা হয়। আশপাশের সব দেশই শিক্ষা খাতে আমাদের চেয়ে জিডিপির অনুপাতে বেশি বরাদ্দ করছে। গত কয়েক বছরে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে, শিক্ষার্থী বেড়েছে। সেই অনুপাতে বরাদ্দ বাড়েনি। গবেষণাকে আমরা এখনো বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে পারিনি। আমরা বারবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের হিসাবটাকে সামনে আনছি। কিন্তু উন্নয়নটা যেই কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে, সেদিকে খেয়াল রাখছি না।’

ইউনেসকো শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ অথবা মোট বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেদিক থেকে শিক্ষায় বরাদ্দ এখনো অনেক কম। গত পাঁচ-সাত বছর ধরেই এই বরাদ্দ ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ছাড়া শিক্ষা খাতে বরাদ্দের বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে অনুন্নয়ন খাত অর্থাৎ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বরাদ্দ তেমন থাকে না। প্রতিবছর বাজেটে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ কিছু বাড়লেও শিক্ষার্থীদের মানের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। তাদের আগের মতোই দৌড়াতে হচ্ছে কোচিং ও প্রাইভেটের পেছনে। স্কুলগুলোতেও ক্লাসের পাশাপাশি আয়োজন করা হয় কোচিংয়ের। অভিভাবকদের কিনতে হচ্ছে একগাদা নোট-গাইড বই।

প্রস্তাবিত বাজেটেও নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের শিক্ষাব্যয় কমানোর কোনো উপায় বলা হয়নি। স্কুল-কলেজে মাসিক বেতন-ফিতে বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় না হলেও কয়েক গুণ বেশি চলে যাচ্ছে প্রাইভেট-টিউশনির পেছনে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে প্রাইভেট-কোচিংয়ে যেতে। কিন্তু বাজেটে এই অনিয়ম থেকে মুক্তির উপায় নেই। এমনকি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ রাখা হলেও সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রাইভেট-কোচিং চালিয়ে যেতে কোনো বিধিনিষেধ রাখা হয়নি।

২০১০ সালে ঘটা করেই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এবং মাধ্যমিক শিক্ষা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠন, শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতনকাঠামোসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু গত ৯ বছরে এর কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় বাজেটেই এর পরিকল্পনা থাকতে হবে। কারণ প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত করতে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন অর্থের। কিন্তু বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।

জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের মতো অবস্থানে থাকাকালে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দিত শিক্ষায়। অনেক দেশই জিডিপির ৪ শতাংশেরও বেশি বরাদ্দ দিত। এর সুফল এখন পাচ্ছে তারা। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকভুক্ত (এসকাপ) দেশগুলোর মধ্যে কম্বোডিয়াই শুধু বাংলাদেশের চেয়ে কম বরাদ্দ করে জিডিপি অনুপাতে।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047991275787354