শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) বিভিন্ন পদে নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায় চলছে টাকার খেলা। বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজে নিজেই ঠিক করছেন কোন পেপারে কবে কত কমিশনে বিজ্ঞাপন দেবেন। আর এখানেও তার রয়েছে কমিশন বাণিজ্য। টাকার বিনিময়ে মৌখিক পরীক্ষায় পাসের নিশ্চয়তা মিলছে। নিয়োগ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের পাশ কাটিয়ে তিনি সব কাজে মাদবরি করছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া বিভাগীয় পদোন্নতি, ৮ সহকারী প্রকৌশলীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব পালনের ফাইল মন্ত্রণালয়ে আটকে যাওয়া, নিয়োগসহ নানা ইস্যুতে বেপরোয়া আচরণের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির নেতাদের বিরুদ্ধে। অযোগ্যতার কারনে মন্ত্রণালয়ে ফাইল আটকে গেলেও তার দায় ইইডি কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়ে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে তাদের কর্মকাণ্ডে সম্মান রেখে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উর্ধতন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা। সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত প্রধান প্রকৌশলীকে ধমকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সম্মান রক্ষায় বিভাগীয় পদোন্নতি/নির্বাচন কমিটি’র সদস্য সচিবের পদ থেকে বুধবার (৬ এপ্রিল) অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আসাদুজ্জামান।
জানা গেছে, উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বিভাগীয় পদোন্নতি/নির্বাচন কমিটির সভাপতি ও পরিচালকের (প্রশাসন ও অর্থ) কাছে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান কোন কথা বলতে অপারগত প্রকাশ করলেও তার চিঠির একটি কপি দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে এসেছে। দীর্ঘ এ চিঠিতে তিনি তুলে ধরেছেন ইইডির চলমান সংকটের কথা।
তিনি লিখেছেন, ‘আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) হিসেবে পদাধীকারবলে বিভাগীয় পদোন্নতি/নির্বাচন কমিটি’র সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছি মর্মে আপনি অবগত আছেন। ১৮/১২/২০১৬ তারিখ অত্র দপ্তরে যোগদানের পর হতে অদ্যাবধি নিষ্ঠা ও সততার সাথে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিভাগীয় পদোন্নতি/নির্বাচন কমিটি’র একাধিক সভায় বিতর্কহীনভাবে সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনসহ এ দপ্তরের রাজস্বখাতে ১৮৪৭টি পদ সৃজন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা, ২০২০ প্রণয়নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উন্নয়ন শাখার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। এ ছাড়া আমার ওপর অর্পিত অন্যান্য প্রশাসনিক দায়িত্ব স্বচ্ছতার সাথে পালন করেছি। দীর্ঘদিন ধরে উপপরিচালক (অর্থ) এর পদটি শূন্য থাকায় নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত উক্ত পদেরও দায়িত্ব পালন করছি।’
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমি জানতে পারি গত ০৪/০৪/২০২২ তারিখ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর আলী সিকদারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান প্রকৌশলী ও আপনার সাথে সাক্ষাৎপূর্বক বর্ণিত নিয়োগ কার্যক্রমে আমার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও অসাধুতার ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও অসত্য অভিযোগ আনে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংবাদ কর্মীদের কাছেও আমার বিরুদ্ধ মানহানীকর অভিযোগ প্রদান করে মর্মে আপনার মাধ্যমে জানতে পারি।’
‘তারা আমার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ করছে যে, সম্প্রতি ৮ জন সহকারী প্রকৗশলীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের নথিটি আমি মাননীয় সচিব এবং মন্ত্রী মহোদয়ের মাধ্যমে আটকে দিয়েছি। একজন অধস্তন কর্মচারী হিসেবে কিভাবে আমার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব তা আমার বোধগম্য নয়। এ ছাড়া, তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমার ক্যারিয়ার ধ্বংস, এমনকি বড় ধরণের ক্ষতি করার হুমকি প্রদান করছে। ইতোপূর্বে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বদলিজনিত বিষয় নিয়ে একাধিকবার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি আমার ওপর চড়াও হয় এবং আমাকে মোবাইল ফোনে ও বিভিন্ন সময় হুমকি প্রদানপূর্বক অশালীন, অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বর্ণিত অবস্থায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
‘শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তা লিখেছেন, ‘যেহেতু, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে একটি বিরাট সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ হবে যা হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থীর ভাগ্য এবং সরকারের ভাবমূর্তির সাথে জড়িত; যেহেতু, আমার বিরুদ্ধে অসত্য, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক হলেও স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে; যেহেতু, এহেন পরিস্থিতিতে ডিপিসি কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ আমার উপস্থিতিতে নিয়োগের মত একটি সংবেদনশীল বিষয়ে কাজ করতে বিব্রত বোধ করতে পারেন। যেহেতু, এখনও নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়নি, সেহেতু, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং নিয়োগ কার্যক্রমকে বিতর্কহীন রাখার জন্য আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি।’
‘আমার বিরুদ্ধে কথিত কাল্পনিক, ভিত্তিহীন ও অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করে আমার ব্যক্তিগত, দাপ্তরিক ও সামাজিক সম্মানহানী এবং আমার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয় যথাযথ তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং নিয়োগ কার্যক্রমকে বিতর্কহীন রাখার জন্য আমাকে সদস্য সচিবের দায়িত্ব হতে অব্যাহতি প্রদানের অনুরোধ করছি।’
ঘটনার বিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও পারা যায়নি। তবে সভাপতি মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘ আমরা তার বিরুদ্ধে (আসাদুজ্জামান) কোন অভিযোগ করিনি। আমরা আমাদের কথা বলেছি। তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি।’ এক প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম প্রধান প্রকৌশলী ও পরিচালকের সঙ্গে তাদের দেখা করার কথা স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, ‘আমরা কোন অভিযোগ দেইনি। আসলে এটা হচ্ছে নিজেদের দোষ আড়াল করে অন্যদের ঘাড়ে চাপানো চেষ্টা।’
আপনাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রধান প্রকৌশলীকে শাসিয়েছেন কিনা? এমন এক প্রশ্নে সভাপতি বলেন, ‘ এ বিষয়ে সে বলতে পারবে।’ আপনি সভাপতি হয়ে সাধারণ সম্পাদকের দায় নেবেন না? এমন প্রশ্নে সভাপতি বলেন, ‘ প্রধান প্রকৌশলীর আদেশেইতো বলা আছে ২ মাসের কথা। আমরা বলেছি এখন পদে থাকার বৈধতা নিয়ে।’
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।