শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযানে দুদক - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযানে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক, প্রশাসনিক, একাডেমিক ও নিয়োগের অনিয়ম খুঁজছে সংস্থাটি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করা ছাড়াও ফাঁদে ফেলে ধরা হচ্ছে দুর্নীতিবাজ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের। তালিকা হচ্ছে ক্লাসে  বাইরে যেসব শিক্ষক কোচিং নিয়ে ব্যস্ত তাদের। প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেট ধরতে কাজ করছে তারা। পাকড়াও করছে জাল সনদে চাকরি করা শিক্ষকদের। আর এসব কাজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তর, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ), জেলা প্রশাসকের সহাযোগিতা নিচ্ছে দুদক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুদক সূত্র জানায়, এর মধ্যে সারা দেশে কোচিং নিয়ে ব্যস্ত শিক্ষকদের তালিকা সংগ্রহ, জাল সনদে চাকরি করা শিক্ষক-কর্মচারীদের ধরা, ফাঁদ পেতে ঘুষখোরদের হাতেনাতে ধরা, শিক্ষাভবনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি খুঁজতে অনুসন্ধান, ভর্তিতে দুর্নীতি-অনিয়ম ধরা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ স্থাপন, সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট খোঁজে বের করতে কাজ করছে সংস্থাটি।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষায় আর্থিক অনিয়ম, নিয়োগ ও ভর্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বহুগুণ বেড়ে গেছে। প্রতি দিন এ সংক্রান্ত প্রচুর অভিযোগ আসছে দুদকের কাছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে শিক্ষাকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে দুদক। এ ব্যাপারে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ  বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। এই খাতে নিয়োগসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে আমরা এখানে একটা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করতে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। দুদকের এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করছে তাদের ব্যাপারে সরকার জিরো টলারেন্স দেখাবে। সেখানে দুদক এগিয়ে এসেছে আমরা সেটাকে সাধুবাদ জানাই। এসব অভিযানে আমাদের যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দরকার হয় আমরা দিতে প্রস্তুত।  গত মাসে ঘুষের দুই লাখ টাকাসহ পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) এক কর্মকর্তাকে হাতেনাতে আটক করে সংস্থাটি। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের অভিযান আরো  চলবে। বিভিন্ন কৌশলে যারা ঘুষ লেনদেন করে তাদের ধরা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সততা স্টোর’ চালু করতে সুপারিশ করে দুদক। বিষয়টি বাস্তবায়ন করে গত মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ তৈরির জন্য দেশব্যাপী ‘সততা সংঘ’ পরিচালিত করছে দুদক। এরই আলোকে গঠিত হচ্ছে সততা স্টোর। দেশে প্রত্যেক উপজেলায় একটি বয়েস স্কুল একটি গার্লস মাধ্যমিক স্কুলে এই সততা স্টোর স্থাপনের কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের খুঁজছে দুদক। কমিশন থেকে চিঠি দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। প্রায় দেড় ডজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুদকের এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা জানান, এ ধরনের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট ৫৭৫ জন শিক্ষকের নাম দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কারা কোচিং করাচ্ছে তা আমাদের চিহ্নিত করা মুশকিল। এটা দুদকের পক্ষে খুঁজে বের করা সহজ। জাল সনদের চাকরি করা শিক্ষকদের তালিকা করতে শুরু করেছে দুদক। সমপ্রতি দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ চারটি মহানগরীতে জাল সনদে ৫৫৬ জন শিক্ষকের তথ্য চাওয়া হয়েছে। একই চিঠিতে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুর জেলায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিএড সনদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ভুয়া সনদের চাকরি করার শিক্ষকদের তালিকা চাইবে দুদক।

তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজতে এবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে দুদক। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ৬৪ জেলা প্রশাসকের কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়। বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদেরও পরের শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ দেয়। এ ধরনের কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের ফি আদায় করে। দুদক মনে করছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের প্রবণতা দুর্নীতির প্রসার ঘটাচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমি যোগদানের পর পরই বলেছিলাম, এ ধরনের কাজে যারা জড়িত তাদের ছাড় নয়। এরই অংশ হিসেবে আমরা এই চিঠি দিয়েছি।

এক সময় শিক্ষার দুর্নীতির দুর্গখ্যাত শিক্ষা ভবনের নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। এ ছাড়াও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সরকারি অর্থের অপচয় এবং শিক্ষা ভবন এর আইন ও পরিচালন পদ্ধতি অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। এজন্য দুই সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা, সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি, দুর্নীতির কারণসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখে দায়ী ব্যক্তিদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্যও চেয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিবে দুদক। গত ২৯শে মে কমিশনের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ কথা বলা হয়। এ ছাড়াও টেন্ডারে অনিয়ম, ঠিকাদার নির্বাচনে সঠিকভাবে কার্য বিধি-বিধান অনুসন্ধান করা হয়েছে কি-না এবং সঠিকভাবে কাজ সম্পাদন হয়েছে কি-না তা পর্যবেক্ষণ করবে দুদক।

এ ব্যাপারে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা আনার যেসব উদ্যোগ দুদক নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ডিআইএ এসব বিষয়ে নিয়েই মূলত কাজ করে। জাল সনদ ধরা থেকে থেকে শুরু করেন নিয়োগে স্বচ্ছতা, আর্থিক অনিয়ম সব আমরা দেখি। কিন্তু আমরা সুপারিশ করার পর তা বাস্তবায়ন হয় না এ জন্য অনেক উদ্যোগ থেমে যায়। দুদক এ কাজটি করলে খুবই ভালো হয়। আরো বেশি অ্যাকশন হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, দুদক যে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাইবে আমরা করতে প্রস্তুত। এর আগেও দুদকের চাহিদা মোতাবেক সকল তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছি।

 

শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.01462197303772