আমাদের দেশের শহর-শহরতলিতে বসবাসকারী বস্তিবাসীসহ রেলস্টেশন, টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, হাটবাজারে অস্থায়ী বা স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী পরিবারের অধিকাংশ শিশু অভিভাবকের সঙ্গে কাজে সহযোগিতা ছাড়াও রিকশা গ্যারেজ, গাড়ি গ্যারেজ, বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে এমনকি বালু, পাথর কোয়ারি ছাড়াও হোটেল, রেস্টুরেন্টে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রেও শিশুরা অবাধে শ্রম বিক্রি করলেও অল্প মজুরিতে শিশুরা খেটে যাচ্ছে। এদের ভবিষ্যত্ বলতে কিছুই নেই। এসব শিশু সামাজিকভাবে অবহেলিত। তারা তাদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। শনিবার (১৭ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন সুমনা ইয়াসমিন।
পরিসংখ্যান বিভাগের সর্বশেষ এক জরিপ অনুযায়ী দেশে মোট শিশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এর মধ্যে সব সেক্টর মিলিয়ে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। যেসব সেক্টরে শিশুরা কাজ করে, সেগুলোর মধ্যে আছে টেক্সটাইল, প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারি, পোশাকশিল্প, চামড়াশিল্প, জুতার কারখানা, ইটভাটা ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে বেশি শিশু কাজ করে কৃষিক্ষেত্রে এবং কলকারখানায়।
অনেক শিশু রিকশা-ভ্যান চলায়। শহর এলাকায় বিশেষ করে ঢাকা শহরের মাঝারি যানবাহনগুলোতে যেমন লেগুনা, টেম্পো ইত্যাদিতে ছোট ছোট ছেলেরা কাজ করে। চলন্ত অবস্থায় ঝুঁকির মধ্যে যাত্রী ওঠানো, ভাড়া আদায় করে তারা। অনেকে লেদ মেশিন চালায়। বিড়ি ফ্যাক্টরিতে অনেক ঝুঁকির মধ্যে বিষাক্ত তামাক পাতা হাতে নিয়ে কাজ করে। তাছাড়া শিশুদের একটা বিশাল অংশ ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র কুড়িয়ে কোনো রকমে জীবিকা নির্বাহ করে। অনেক শিশু বাসের হেলপার হয়। এই শিশুরা সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, বিনিময়ে ন্যায্য মজুরি পায় না। ঠিকমতো খেতে পারে না। প্রতিদিন তাদের জীবন-সংগ্রাম চলতেই থাকে।
শিশুশ্রম বন্ধে প্রকৃত সমাধান বের করতে হবে। শিশুদের পরিবারের কর্মক্ষম অভিভাবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ, শিশুদের ফ্রি চিকিত্সা, লেখাপড়ার সমস্ত খরচ বহন অর্থাৎ প্রতিটি পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ছাড়াও শিশুদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিশু কল্যাণে সরকারি বরাদ্দ ছাড়াও বেসরকারি সংস্থাসহ প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা পথশিশুসহ কর্মরত শিশুদের কল্যাণে প্রাথমিক কারিগরি ও কৃষি শিক্ষা দিতে পারলে তারা অল্প মজুরিতে শ্রম বিক্রি না করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। এই শিশুদের হাতেখড়ি হিসাবে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে তাদের মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে শিশুরা নানা শ্রমে নিয়োজিত হয়। জাতীয় শিশুনীতি অনুসারে ৫ থেকে ১৮ বছরের কোনো শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারবে না। ৫ থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুশ্রম নিয়োগকর্তার জন্য দণ্ডনীয়।
শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে কর্মজীবী শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। আইন করে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সবাইকে মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : ঢাকা।