কোটি কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ ওঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিদায়ী মহাপরিচালকের শেষ সাত কর্ম দিবসে করা সব বদলিসহ কেনাকাটার আদেশ স্থগিত করেছেন নব নিযুক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: মাহাবুবুর রহমান। ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে নতুন মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক স্থগিতাদেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়। গত ৪ জানুয়ারি ছিলো বিদায়ী মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের শেষ কার্য দিবস।
২৬ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন শতাধিক বদলির আদেশ করেন বিদায়ী মহাপরিচালক। ৭ জানুয়ারি যোগদান করেন নব নিযুক্ত মহাপরিচালক মাহাবুব। ৮ জানুয়ারি শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র অনলাইন জাতীয় পত্রিকা দৈনিকশিক্ষায় ‘মহাপরিচালকের শেষ কর্ম দিবসে বদলির হিড়িক, লেনদেনের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটির তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন মহাপরিচালক গত সাত দিনের সব বদলির আদেশ স্থগিত করেন। ৮ জানুয়ারি গভীর রাতে স্থগিতাদেশের কপি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়।
জানা যায়, সবচাইতে বেশি টাকা লেনদেন হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বদলিতে। প্রতিটি বদলিতে দুই থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়।
কোনো দপ্তর প্রধান তার শেষ কর্মদিবসে বদলীর আদেশ জারি করেন না। এমন রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ যাবত। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সদ্যবিদায়ী মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান তাঁর শেষ কার্যদিবসে রেওয়াজ ভেঙ্গেছেন। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে তিনি মহাপরিচালকের চলতি দায়িত্ব পান। গত বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) ছিল তাঁর শেষ কার্যদিবস। এদিন তিনি রেকর্ড সংখ্যক বদলীর আদেশ করেছেন। একদিনেই বদলী করা হয়েছে ৭৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে। এছাড়াও শেষ দিনে কেনাকাটারও বেশ কিছু ফাইল অনুমোদন করেছেন তিনি। এসব বদলী ও কেনাকাটার সঙ্গে অনৈতিক লেনদেন জড়িত বলে দৈনিকশিক্ষার কাছে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
মহাপরিচালকের শেষ কার্যদিবসে ২৯ জন কর্মচারিকে বদলী করা হয়। একই দিন সরকারি কলেজে ২৫ জন বিসিএস ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকের বদলীর আদেশ জারি করা হয়। এই বদলিতে অভিযোগের তীর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান ও উপ-পরিচালক ড. মোস্তফা কামালের দিকে।
গত বৃহস্পতিবার ১৫ জন সহকারি শিক্ষক ও আট জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়। গত ২৭ ডিসেম্বর ১৯ জন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ২৬ ডিসেম্বর ১৯ জন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা, ২২ ডিসেম্বর ৬৪ জন কর্মচারি, ২১ ডিসেম্বর ১৯ জন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তা, ১৪ ডিসেম্বর ১৭ জন কর্মচারি, ৭ ডিসেম্বর চারজন কর্মকর্তাসহ আরো বেশকিছু বদলী করা হয়। অর্থাৎ মহাপরিচালকের শেষ কর্মমাসেও প্রায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি বদলী করা হয়। যা অন্যান্য মাসের তুলনায় রেকর্ড বলে জানিয়েছেন মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মহাপরিচালকের শেষ কর্মদিবসে বদলির হিড়িক, লেনদেনের অভিযোগ