শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিয়ে বার বার কেন অশান্তি? - দৈনিকশিক্ষা

শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিয়ে বার বার কেন অশান্তি?

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিয়ে অশান্তি দূর করার মানসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জানুয়ারি প্রাথমিকের ছুটির তালিকা সংশোধনের নিমিত্তে একটি আবেদনপত্র দিয়েছিলাম, যা প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। কিন্তু বিষয়টি প্রতিমন্ত্রীসহ শিক্ষক নেতাদের সদয় দৃষ্টি কাড়তে ব্যর্থ হয়।

প্রাথমিক শিক্ষকদের এ সমস্যা দীর্ঘ ৮ বছর ধরে চলে আসছে। শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রদানের আদেশ জারি হওয়ার পরও প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে ৩ বছরের পরিবর্তে ৪-৫ বছর পর প্রাপ্তির মানসিক যন্ত্রণা।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল কাসেম ফজলুল হকের আবেদনক্রমে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর পর সময়মতো প্রাপ্তির নিশ্চয়তার জন্য গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন নির্ধারণ করার আদেশ জারি হয়। সে মোতাবেক ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রাথমিকের শিক্ষকেরা শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পর পর সরকারি কর্মচারীদের মতো বিধি মোতাবেক পেয়ে আসছেন। তারপর থেকে শুরু হয় বাৎসরিক ছুটির তালিকায় গ্রীষ্মের ছুটি ১৫ দিন না রাখার মানসিকতা। প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাগ্যে আবারও নেমে আসে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা না পাওয়ার অশান্তি। প্রতিবছর পত্রপত্রিকায় ও সংশ্লিষ্টদের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখে যাচ্ছি। তারপরও বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের নেতা-নেত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের মনের মাঝে দাগ কাটতে পারিনি। তারপর ভাবলাম গ্রীষ্মের ছুটি সাময়িক সমাধান। পরে স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজে পেলাম।

অবসরের কারণে সমিতির নেতৃত্ব হারা। নতুন নেতৃত্বের মাঝে শিক্ষকদের নিয়ে ভাবনার পরিবর্তে সংশ্লিষ্টদের তেল দিয়ে স্বীয় স্বার্থ উসুলের প্রবণতা লক্ষ করলাম। প্রাথমিক শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষায় গড়ে তুললাম প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম নামে আরেকটি সংগঠন। কর্মরত শিক্ষকদের অসংখ্য সংগঠনের মাঝে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করলাম। শিক্ষকদের পদোন্নতি, ননভ্যাকেশনাল চাকরি ঘোষণা, ঢাকা শহরের সাময়িক বদলি বন্ধ। বাইরে থেকে শিক্ষক বদলি নিয়ে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিলাম। ঢাকা শহরে সাময়িক বদলি ও আজকে চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে মিলেছে সফলতা। চলতি দায়িত্বের ভাতা প্রদানে আইনি নোটিশ প্রদানে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে ভাতা প্রদান। তারপর দেখলাম প্রাথমিক শিক্ষকদের সাথে সরকারি কর্মচারীদের ছুটির কোনো ব্যবধান নেই। অথচ তারা ভ্যাকেশনাল কর্মচারীর মতো ১৫ দিন ছুটিসহ ৩ বছর পর পর ভাতা থেকে বঞ্চিত। অর্জিত ছুটি কম পেয়ে বর্তমান সময়ের হারে লামগ্র্যান্ড ৪-৫ লাখ টাকা কম পায়। আর পিআরএলয়ে ১ বছরের অর্ধেক বেতন পেয়ে থাকেন।

আমার ক্ষুদ্র সংগঠন, বার্ধক্যের যাতনা, সমিতির নেতাদের সহযোগিতার অভাব সবকিছু মিলিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের নন-ভ্যাকেশনাল ও ভ্যাকেশনাল নিয়ে পড়াশোনা করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করি। রিট পিটিশন নং ১১০৬৮/২০১৫। রিটটি প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং বিচারপতি আমির হোসেনের বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারিত ছিল। ওই তারিখে শুনানি না হয়ে অদ্যাবধি তৈলাক্ত বাঁশের মতো রিটটি চূড়ান্ত শুনানিতে উঠা নামা করছে।

আমার রেখে আসা সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি এক সভায় ঘোষণা দিলো, ‘সিদ্দিক স্যারের রিটের দায়িত্ব বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গ্রহণ করবে।’ আমার বার্ধক্য ও অসহায়ত্বের মাঝে অনেক যৌবনের আলো ভেসে উঠলো। অবশেষে নানাবিধ কারণে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে পেলাম। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক ননভ্যাকেশন সুবিধা না পেয়ে সুবিধা বঞ্চিত হলো তার দায় আমাদের সকলের ওপর বর্তায়। তাদের না পাওয়া আত্মার কষ্ট আমাকে ব্যথিত করেছে। তাই রমজান মাসে অসহায় ক্লান্তিভরা মন নিয়ে অ্যাডভোকেট সাহেবকে ফোন করলাম। তিনি আশ্বাস দিলেন হাইকোর্ট খুললে তিনি বিষয়টি চেষ্টা করবেন। মহামান্য হাইকোর্ট চূড়ান্ত শুনানি ও রায়ের ব্যাপারে আমাদের আর কী করার আছে?

মহান সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভর করছি। আল্লাহ তুমি মহান, রহমানুর রাহিম। প্রাথমিক শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার তুমি কায়েম কর। প্রাথমিক শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি তারা আগামী প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে আরও যত্নবান হবে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হোক শিক্ষকদের অধিকার। প্রত্যা শা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006364107131958