দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৯ মার্চ সকাল থেকে সংসদ টিভিতে ‘আমার ঘরে আমার ক্লাস’ শিরোনামে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাস সম্প্রচার করছে। দীর্ঘ ছুটিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার মধ্যে রাখার সরকারি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তবে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্বত্র কেবল নেটওয়ার্ক (ডিশ লাইন) না থাকায় সম্প্রচারিত ক্লাসগুলো দেখতে পাচ্ছে না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ফলে সরকারের দেয়া এ সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ঘরবন্দি এসব শিক্ষার্থীরা অলস সময় পার করছে। বিঘ্নিত হচ্ছে তাদের লেখা পড়া। বিশেষ করে পিছিয়ে পরা শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মির্জাগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২৮টি মাদরাসার প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ১৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনার বন্ধে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টিভিতে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটুআই ও ব্যানবেইসের সহযোগিতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়নে মাধ্যমিকের ক্লাস প্রচারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং পরবর্তী সময়ে প্রাথমিকের ক্লাস প্রচারের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
টেলিভিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত বিষয়ভিত্তিক ক্লাস দেখলেই কাজ শেষ নয়। টিভিতে প্রচারিত প্রতিটি ক্লাসের পর দেয়া হয় বাড়ির কাজ। আর প্রতিটি বিষয়ের আলাদা খাতায় সেই বাড়ির কাজ শেষ করতে হবে শিক্ষার্থীদের। করোনার তাণ্ডব শেষ হলে যখন স্কুল খোলা হবে তখন শিক্ষকদের সেই বাড়ির কাজের খাতা দেখাতে হবে। বাড়ির কাজের প্রাপ্ত নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা রয়েছে।
উপজেলার বেশ কয়েকজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, টেলিভিশনে ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ শিরোনামে ক্লাস প্রচার করা সরকারের একটি প্রশংসনীয় উদ্যেগ। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু ডিস লাইন (ক্যাবল নেটওয়ার্ক) ছাড়া সংসদ টেলিভিশনের প্রোগ্রাম দেখতে না পেয়ে অনেকটাই হতাশ মির্জাগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
মির্জাগঞ্জ উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝাটিবুনিয়া মোজাফ্ফর ইসহাক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. সাকিব আল হাসানের অভিভাবক স্কুল শিক্ষিকা আয়শা আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার বাসায় ডিস লাইন না থাকায় সংসদ টিভি দেখতে পাচ্ছি না। এমনিভাবে বিপাকে পড়েছেন এলাকার সিংহভাগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
রামপুর মাধ্যমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় ৩শ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজনের বাড়িতে ডিস সংযোগ রয়েছে তারা দূরশিক্ষন পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলেও বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী।
একই কথা জানালেন উপজেলার চরখালী সমবায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আব্দুল মালেক। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৫শ শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের আশে পাশে নদী বেষ্টিত চরখালী, গোলখালী, মেহিন্দিয়াবাদ গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের বাড়িতেই ডিস সংযোগ নেই।
প্রত্যন্ত এসব অঞ্চলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা সংসদ টেলিভিশনের পরিবর্তে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) ক্লাসগুলো প্রচার করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা দিনার সিয়াম কেবল নেটওয়ার্কের সত্ত্বাধিকারী মো. তারেক মুন্সী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। এর মধ্যে কমপক্ষে ৫০ হাজার পরিবার বসবাস করছে। কিন্তু ডিস লাইন রয়েছে মাত্র ৩ হাজার টেলিভিশনে।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী সাইফুদ্দীন ওয়ালীদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনা ভাইরাস যখন পুরো বিশ্বটাকে তছনছ করে দিয়েছে তখন সরকার শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মধ্যে রাখতে টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করছে। এটি একটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ। কিন্তু মির্জাগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডিসের সংযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত ক্লাসগুলো দেখতে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছি। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ ডিজিটাল এ ক্লাসের সুযোগ বঞ্চিত হচ্ছে। ক্লাসগুলো সংসদ টিভিতে প্রচারের পাশাপাশি বিটিভিতে প্রচার করতে পারলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী উপকৃত হতো।