সঞ্চয়পত্রে কমছে লাভের হার - দৈনিকশিক্ষা

সঞ্চয়পত্রে কমছে লাভের হার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এলো ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এ খাতে সুদহার না কমলেও উৎস কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বর্তমানে এ খাতে মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে কর কাটা হয়। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আগের চেয়ে কম মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। তাই উৎস কর বাড়ানোর ঘোষণায় হতাশা ব্যক্ত করেছে সাধারণ মানুষ। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর ফলে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের সঞ্চয়ের পথ সংকুচিত হয়ে পড়বে।

জানা যায়, সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে অর্থ আইন-২০১৯-এর আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫২(ডি) ধারা সংশোধনের মাধ্যমে। ওই ধারায় সঞ্চয়পত্রে ৫ শতাংশ উৎস কর নেওয়ার বিধান আছে। সেটি সংশোধন করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের সুদের ওপর কর শনাক্তকরণ নম্বর থাকলে ১০ শতাংশ এবং না থাকলে ১৫ শতাংশ হারে উৎস কর নেওয়া হয়। ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে নতুন হারে উৎস কর কার্যকর হবে। ব্যাংকে আমানতের ওপর আরোপ করা উৎস করের সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর কর বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ২৭ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত মোটেও যৌক্তিক হয়নি। কারণ সঞ্চয়পত্র যারা কেনে তারা নির্দিষ্ট আয়ের লোক। ফলে তাদের আয় আরো কমে যাবে। তাই সরকার যেটা করতে পারে তা হলো—অবস্থাসম্পন্ন যেসব লোক সঞ্চয়পত্র কিনছে তাদের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। তাই আমি মনে করি, সঞ্চয়পত্রে উৎস কর বাড়ানো ঠিক হবে না। এতে স্বল্প ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের বিনিয়োগের পথ আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।’

২০১১-১২ অর্থবছর থেকে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে কর কর্তনের বিধান করা হয়, যা ২০১১ সালের ১ জুলাই থেকে প্রযোজ্য হয়। তবে ২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রগুলোর মুনাফায় ১০ শতাংশ হারে উৎস কর কর্তনের বিধান ছিল। জানা যায়, ওই সময় ব্যাংকে আমানতের সুদ হারও বেশি ছিল। ফলে অবসরভোগী ও সাধারণ মানুষ তাদের জমানো টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বদলে ব্যাংকে রাখত। এ পরিস্থিতির বদল করতে ওই সময় উৎস কর অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। আর ২০১৬ সালে প্রাতিষ্ঠানিক তহবিল থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎস কর আদায়ের নতুন বিধান সংযোজন করা হয়েছে। আর ব্যক্তি খাতের পেনশন স্কিম সঞ্চয়পত্রের পাঁচ লাখ টাকার বিনিয়োগ উৎস করমুক্ত রাখা হয়েছে। তবে ব্যক্তি খাতের পেনশন স্কিমে পাঁচ লাখ টাকার অতিরিক্ত বিনিয়োগ হলেই পুরো মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎস কর আদায়ের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা নেওয়ার কথা থাকলেও সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু অর্থবছরের ৯ মাসেই ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকার বেশি নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। মূলত ব্যাংকে আমানতের সুদ হার কমে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। এতে এ খাতে সরকারের সুদের বোঝাও বাড়তে থাকে। তাই সঞ্চয়পত্রে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ঠেকাতে সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। আগামী ১ জুলাই থেকে অনলাইনে সঞ্চয়পত্র কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে, সঞ্চয়পত্র ক্রয়-বিক্রয় ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের উদ্দেশ্যে জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে সঞ্চয় স্কিমগুলোর বিক্রয়, মুনাফা নগদায়ন ইত্যাদি বিষয়ে রিয়েল টাইম তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এনআইডির ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। গ্রাহকের মুনাফা ও আসল ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং এ খাতে সুদ বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে আসবে।

ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033810138702393