সর্বশেষ ১৯৯২ সালে নির্বাচন। পরবর্তী বছর ২৯ জুলাই ছাত্র-শিক্ষক সংঘর্ষে বিলুপ্ত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু)। তারপর দীর্ঘ ২৭ বছর কেটে গেছে ছাত্রদের স্লোগান আর প্রশাসনের আশ্বাসে। কিন্তু আর দেখা মেলেনি জাকসু নির্বাচন। তাই হারানো ছাত্রসংসদ সম্পর্কে অনেক শিক্ষার্থীই এখন বেখেয়াল। তবে ‘মাস্টার’ দ্বারা বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার হলেই ছাত্রদের দীর্ঘশ্বাস আসে- ‘আজ যদি জাকসু থাকত!’ মূলত শিক্ষার্থীদের দাবি ও অধিকার আদায়ের গ্রহণযোগ্য, স্বাধীন ও শক্তিশালী মাধ্যম হল কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ-জাকসু। নানা জল্পনা-কল্পনা আর দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন এখন মাহেন্দ্রক্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে জোয়ার এসেছে। সবারই সদিচ্ছা আছে নির্বাচন অনুষ্ঠানের। তবে অদৃশ্য ‘কিন্তু’ও আছে। আর সদিচ্ছা সত্ত্বেও এ অদৃশ্য ‘কিন্তু’ই দীর্ঘ ২৭ বছর অকার্যকর রেখেছে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এ মঞ্চকে।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১১৯ জন প্রার্থীরই মূল ইশতেহার ছিল জাকসু নির্বাচনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। পরের বছর জুনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের একাংশের বাধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮তম সিনেট অধিবেশন পণ্ড হলে সেখানে ভিসি দ্রুত জাকসু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন। গতমাসে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন চলাকালে শিক্ষক নেতারা জাকসু কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দেন। এবার সব অদৃশ্য ‘কিন্তু’ উপেক্ষা করে এ বছরেই জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন প্রতিশ্রুতি প্রশাসনের। তবে জাকসু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা।
জাকসু নির্বাচন সম্পর্কে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেয়া। একই সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরামর্শের ভিত্তিতেই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়।’ জাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম সৈকত বলেন, আমরা সব সময়ই জাকসু নির্বাচনকে স্বাগত জানাই। তবে নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের প্রত্যেক হলে দল-মত নির্বিশেষে সব ছাত্রছাত্রীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। নির্বিঘ্নে ক্লাশ-পরীক্ষায় অংশগ্রহণের নিরাপত্তা দিতে হবে।’
সদিচ্ছার ও সহযোগিতার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ‘অংশগ্রহণ, প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য জাকসু নির্বাচন আমাদের একান্ত কাম্য।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের পদধারী নেতারাও যদি বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থী হয় এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত না থাকে তবে তারাও হলে থাকতে পারবে। এটা তাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে।’
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই জাকসু কার্যকর করা জরুরি। আমি মনে করি, ৩ মাসের মধ্যে জাকসু নির্বাচন হওয়া উচিত। তবে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ- হলগুলোতে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত করা।’ তবে সব প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অতিদ্রুত জাকসু কার্যকর হোক এটাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কামনা।
সূত্র: দৈনিক যুগান্তর