সনদে বয়স ১৯ হলেও মামলায় শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্তের বয়স ১৬! - দৈনিকশিক্ষা

সনদে বয়স ১৯ হলেও মামলায় শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্তের বয়স ১৬!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার ঘটনায় করা মামলার আসামি দশম শ্রেণির ছাত্রের বয়স জেএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত ছাত্রের বয়স উনিশের বেশি, জেডিসি পাস

বৃহস্পতিবার  দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।  গতকাল বুধবার র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-১ ও ৪ যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে।

গতকাল বুধবার শিক্ষা বিষয়ক ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম ও বৃহস্পতিবার শিক্ষা বিষয়ক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আমাদের বার্তায় ‘শিক্ষক হত্যায় অভিযুক্ত জিতুর বয়স ১৯, জেডিসি পাস’ শিরোনামে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও ছাত্রের বয়স নিয়ে অসংগতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। 

র‌্যাব জানিয়েছে, গত রোববার আশুলিয়া থানায় উৎপল কুমারের ভাই অসীম কুমার সরকারের করা মামলায় আসামির বয়স ১৬ বলে উল্লেখ করা হয়। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে ওই ছাত্রের ২০২০ সেশনের জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (জেডিসি) রেজিস্ট্রেশন কার্ডের কপি রয়েছে। এতে তার জন্ম ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৭ জানুয়ারি লেখা। এ হিসাবে বৃহস্পতিবার তার বয়স হয় ১৯ বছর ৫ মাস ১৩ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ওই ছাত্রকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, স্কুলের এক ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করছিল। এ ধরনের আচরণ থেকে ছাত্রকে বিরত থাকতে বলেছিলেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এতে ওই ছাত্র ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রীর কাছে হিরোয়িজম দেখাতে শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে।

গত ২৫ জুন স্কুলে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে দশম শ্রেণির ওই ছাত্র। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক উৎপল মারা যান। ঘটনার পরপরই ওই ছাত্র পালিয়ে যায়। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৫ জুন ওই ছাত্র ক্রিকেট স্ট্যাম্প নিয়ে স্কুলে আসে। শ্রেণিকক্ষের পেছনে সেটি লুকিয়ে রাখে। কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্ট্যাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে তাকে বেধড়ক আঘাত করে। ওই ছাত্র শিক্ষক উৎপলকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন উৎপল কুমার মারা যান।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ছাত্র এলাকায় অবস্থান করে। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় এলাকা ছাড়ে। প্রথমে বাসযোগে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাত্রিযাপন করে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে।

পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আতাইকুলা থেকে বাসে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে যায়। এরপর লঞ্চে আরিচাঘাট পৌঁছায়। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকেই ওই ছাত্রকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। 

ওই ছাত্র শিক্ষাজীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল পরে মাদরাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র‍্যাব কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ওই ছাত্র স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালে ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করত ওই ছাত্র। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত।’

ওই ছাত্রের নেতৃত্বে 'দাদা' নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানায় র‍্যাব। র‍্যাব বলেছে, গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে ওই ছাত্র যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করত। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো।

আল মঈন বলেন, নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। এর ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম, চুল-কাটা, ধূমপান করা ও ইভটিজিংসহ বিভিন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা পরিচালনা করাসহ শিক্ষার্থীদের সুপরামর্শ, মোটিভেশন ও কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা বিকাশে ভূমিকা রাখতেন।

ওই ছাত্রের পরিবার শিক্ষকের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে আল মঈন বলেন, ‘আমরা উৎপলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এমন কোনো হুমকি-ধমকির বিষয়ে তথ্য পাইনি।’

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.00701904296875