দিনাজপুরের কাহারোলে মোস্তাকিমা খাতুন নামে এক সহকারী গ্রন্থাগারিকরে বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে কাহারোলের জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের মোস্তাকিমা খাতুন নামে ওই সহকারী গ্রন্থাগারিকের এমপিওভুক্তির জন্য রংপুর শিক্ষা অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তার জোগসাজশের অভিযোগও করা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায় সহকারী গ্রন্থাগারিক মোস্তাকিমা খাতুনের ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট থেকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুন পর্যন্ত মোট তিন ধাপে তার এমপিও আবেদন বাতিল করা হয়। আর সর্বশেষ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৭ ফেব্রুয়ারি তার এমপিও আবেদন মঞ্জুর করে তাকে এমপিওভুক্ত করা হয়। যার এমপিও ইনডেক্স নম্বর N1130093 এবং প্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড নম্বর ih_7809031302| ।
কিন্তু অভিযোগ করা হয় মোস্তাকিমা খাতুন এমপিওভুক্তির জন্য বেসরকারি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের যে স্নাতক এবং ডিপ্লোমা সনদ উপস্থাপন করেছেন তার দুটোই জাল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোস্তাকিমা খাতুনের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগকারী অভিযোগ করেন, তিনি বিবিএ সনদপত্রটি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার মিরপুর-১০ শাখা ক্যাম্পাস থেকে ২০১০ খ্রিস্টাব্দে অর্জন করেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ০১০৭০৪১১০২ এবং রোল নম্বর ১০০২। তবে সনদের ভেতর দেয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট www.diubd.ac.bd থেকে ওইরেজিস্ট্রেশন নম্বর ও নামের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
একই ভাবে তিনি দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকার ধানমন্ডি শাখার একটি ক্যাম্পাস থেকে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে এক বছর মেয়াদী একটি ডিএলআইএস ডিপ্লোমা সনদ উপস্থাপন করেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ১৩০৬০১২০০৫৭ এবং রোল নম্বর ০০৫৭ দেখানো হয়েছে। এবং দেখা যায় সর্বশেষ এই সনদের উপর ভিত্তি করেই তাকে এপিওভুক্ত করা হয়। তবে ওই সনদের মধ্যে দেয়া প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইট www.diu-edu.info থেকেও এ সনদের কোন অস্তিত্ব পাওয়া জায়নি। ফলে দেখা যায় মোস্তাকিমা খাতুন দুটিই জাল সনদ ব্যবহার করেছেন। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানেও ওই ওয়েবসাইট দুটি সনদ দুটির বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে জাল সনদের উপর ভিত্তি করে মোস্তাকিমা খাতুন কিভাবে এমওিভুক্ত হলেন। তাছাড়া দেখা যায় তার প্রথমবার এমপিও আবেদনের প্রত্যাখ্যান করা ফাইলে দারুল ইহসানের মিরপুর শাখার ডিএলআইএস সনদ পত্রটি উপস্থাপন করে নিয়োগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ওই সনদটি পরিবর্তন করে ধানমন্ডি শাখার ডিএলআইএস সনদ ব্যবহার করতে দেখা যায় তাকে। যা বর্তমান অনলাইন আবেদনের ফাইলে www.application.emis.gov.bd সাইটে দেয়া আছে বলে দাবি করেন ওই অভিযোগকারী।
তিনি বলেন সরকারি বিধি অনুযায়ী নিয়োগ সনদপত্র পরিবর্তন করতে হলে আবার পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে নতুন নিয়োগ নিতে হয়। কিন্তু সে প্রক্রিয়া এখানে অনুসরণ করা হয়নি।
এসময় তিনি আরো অভিযোগ করেন যে, মোটা টাকার বিনিময়ে রংপুর মাধ্যমিক আঞ্চলিক অফিসের (ডিডি) মো. মোস্তাক হাবিব এবং রংপুরের আইএস ফিমেল মোছা. খালেদা আক্তারের যোগসাজশে মোস্তাকিমা খাতুনকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ওই দুই কর্মকর্তা দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন অভিযোগকারী। তবে তিনি ওই দুই কর্মকর্তার টাকা নেয়ার বিষয়ে কোন সত্যতা তুলে ধরতে পারেননি।
মোস্তাকিমা খাতুনের এমপিওভুক্তির বিষয়ে রংপুর শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বিষয়টি এরিয়ে যান। এবং তিনি জানান তার এলাকায় মন্ত্রী এসেছেন তাই তিনি ব্যাস্ত আছেন বলে পরে ফোন করার জন্য অনুরোধ করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কিন্তু পরে একাধিকবার তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।
একইভাবে এ বিষয়ে আইএস ফিমেল খালেদা আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান মোস্তাকিমা খাতুনের এমপিওভুক্তির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এবিষয়ে তিনি উপ-পরিচালক মোস্তাক হাবিবের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।