সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের কলেজ অংশের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখা প্রসঙ্গে - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের কলেজ অংশের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখা প্রসঙ্গে

মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন |

প্রথমেই সারাদেশে সরকারি কলেজবিহীন উপজেলাসমূহে ১টি করে কলেজ সরকারিকরণ করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সরকারিকৃত কলেজসমূহের শিক্ষক-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর এই ঐতিহাসিক ও মহতি উদ্যোগের ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা কম খরচে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। গ্রাম ও শহরে শিক্ষাখাতে বিরাজমান বৈষম্য দূরীভূতসহ সারাদেশে উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের আমূল পরিবর্তন হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতি গঠনের কারিগর। ৩০০টি কলেজ সরকারি হওয়ার পর পত্রিকাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, কলেজ ফান্ডে পর্যাপ্ত অর্থ থাকার পরেও কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অনেক কলেজের এমপিও, নন-এমপিও সকল শিক্ষকের কলেজ অংশের বেতন-ভাতা বিভিন্ন খোঁড়া অজুহাতে হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার অনেক কলেজের সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও এবং জেলা সদরের কলেজের ডিসিরাও নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ফাইলপত্রে স্বাক্ষর করতে অনীহা প্রকাশ করছেন।

এ সমস্যা সমাধানের জন্য ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন ভাতা পূর্বের ন্যায় বহাল রাখার দাবিতে নতুন সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদ-বাসকশিপ/জাকশিপ এর একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ধারাবাহিকভাবে সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে আসছেন।

এ ছাড়া গত ২৮ আগষ্ট ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ডিজি ও অতিরিক্ত সচিবের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় দ্রুত পদসৃজন ও অ্যাডহক নিয়োগ নিশ্চিতকরণ, নিবন্ধন সনদ, রেজুলেশন ও স্মারক বইসহ অন্যান্য কাগজপত্রাদি যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া যথাসম্ভব সহজীকরণ, জিও জারির তারিখে যে সকল অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হয়েছে তাদেরকেও আত্তীকরণের আওতায় আনার দাবির পাশাপাশি সদ্য সরকারিকরণকৃত কলেজসমূহের নন-এমপিও শিক্ষকদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রাখার জোরালো সুপারিশ করেন।

অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা শিক্ষক নেতাদের বলেন, সরকারিকরণকৃত কলেজের ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ সার্বিক বিষয়াদি বেসরকারি আমলের মতোই অধ্যক্ষ ও জেলা প্রশাসক বা ক্ষেত্রমতে ইউএনওর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে এবং যতদিন পর্যন্ত এসব কলেজের শিক্ষকরা আত্তীকৃত না হবেন ও সরকারি বেতন ভাতা না পাবেন ততদিন তাঁদের বেতন-ভাতা পূর্বের ন্যায় চলমান থাকবে। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কলেজ প্রদত্ত অংশ ও ননএমপিও শিক্ষকদের বেতন-ভাতা অব্যাহত রাখতে শিক্ষক নেতারা সম্ভব হলে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের লিখিত আদেশ বা পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশনা চাইলে  উত্তরে কর্মকর্তারা বলেন, যেহেতু এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বন্ধের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো লিখিত নির্দেশনা কলেজগুলোতে পাঠানো হয়নি, সেহেতু এসব শিক্ষকদের বেতন-ভাতা চালু রাখার জন্য আলাদা কোনো নির্দেশনা বা পরিপত্রের প্রয়োজন নেই।

এদিকে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট ২০১৯ শনিবার মাউশি অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ-উল-হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে সরকারিকৃত ৩০০টি কলেজ থেকে মাত্র আটটি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়। দিনভর এই বৈঠকে আটটি কলেজের নথি যাচাই শেষ হলেও ফের মন্ত্রণালয়ে আরেকদফা যাচাই হবে বলে খবরে প্রকাশ। তারপর নথিগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ ছাড়াও দৈনিক শিক্ষার সূত্রমতে, ২৯ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ-উল-হকের সভাপতিত্বে আরো ৭টি কলেজের পদ সৃজনের অগ্রগতি নিয়ে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবার কথা।

এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, এবছরের মধ্যেই ৩০০টি কলেজের পদসৃজনের কাজ সম্পন্ন করার যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল, তা সুদূরপরাহত। আর দ্রুত সরকারি আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তির আশায় তো গুঁড়েবালি। তা আগামী দুই তিন বছরের মধ্যেও সম্ভব কিনা কে জানে।

সদ্য সরকারিকৃত কলেজসমূহের নন-এমপিও ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষকরা বর্তমানে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারের কাছ থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না। আবার সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের কোচিংয়ের ওপর কড়াকড়ির কারণে এ সকল কলেজের, ইংরেজি, আইসিটি, একাউন্টিং ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকরা সরকারি প্রজ্ঞাপন মেনে কোচিং করিয়ে যে দু’চার পয়সা আয় করে পরিবার-পরিজনের দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করতেন, তাও বন্ধ হবার উপক্রম। আবার এমন অনেক বিষয়ের শিক্ষক রয়েছেন, যাদের সাবজেক্টে ছাত্র-ছাত্রীরা কোচিং করতে খুব একটা আগ্রহী হয় না। ফলে তারা কোচিং ও প্রাইভেট পড়িয়েও দু-চার পয়সা বাড়তি ইনকাম করতে পারেন না।

আবার সরকারি কলেজে পরীক্ষার ডিউটি বাবদ যে নামমাত্র সম্মানি দেয়া হয় তার চেয়ে ডিউটির জন্য কলেজে যাওয়া আসা আর খাবারের খরচের পেছনে খরচের পরিমাণ বেশি হয়ে যায়। বর্তমানে পানি, বিদ্যুৎ গ্যাস ও বাড়ি ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে সকল কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে অবহেলিত শিক্ষক সমাজসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকজন যেখানে তাদের মাসিক আয় দিয়েই পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে বিশ্বায়নের এ যুগে বেতনবিহীন চাকরি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার কষ্ট যে কতটা নির্মম ও হৃদয় বিদারক তা কেবল ভুক্তভোগী নন-এমপিও শিক্ষক সমাজ ও তাঁদের পরিবার-পরিজনরাই বুঝতে পারে।

বর্তমানে বেতনবিহীন চাকরির এ দুঃখ কষ্ট বইবারও নয় সইবারও নয়। এমতাবস্থায় কলেজগুলো সরকারি হওয়ার পর যদি তারা কলেজ থেকে এতদিন যে ন্যূনতম আর্থিক সুবিধা পেতেন তা যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা কীভাবে মোটা ভাত, মোটা কাপড়ে জীবনযাপন করবেন? এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় তাদের কলেজ থেকে প্রাপ্ত এতদিনের ন্যূনতম আর্থিক সুবিধা সরকারি বেতন-ভাতা পাওয়ার আগ পর্যন্ত অব্যাহত না রাখলে নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হবে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে।

তাই ভবিষ্যতে প্রাপ্য সরকারি বেতন ভাতা ও আর্থিক সুবিধা থেকে কর্তন করে নেয়া বা কোনো কারণে দুর্ভাগ্যবশত কেউ আত্তীকরণ প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলে তার কলেজ হতে গৃহীত বেতন-ভাতাদি কলেজ ফান্ডে  ফেরত দেবার শর্ত মেনে হলেও এমপিও ও নন-এমপিও সকল শিক্ষক কর্মচারীর কলেজ অংশের বেতন-ভাতা ও আর্থিক সুবিধাদি পূর্বের ন্যায় অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য মাদার অব হিউম্যানিটি, মানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সিনিয়র সচিব মহোদয়সহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন : প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ সরকারি কলেজ শিক্ষক পরিষদ, বাসকশিপ/জাকশিপ কেন্দ্রীয় কমিটি।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087270736694336