সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ প্রাপ্তির বয়সসীমা বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়েছে। গত জুলাইয়ে জারি করা ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণের বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৫৬ বছর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এ বয়সসীমা ৫৮ বছর করার একটি প্রস্তাব নাকচ করে দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবের ওপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মন্তব্য করেছেন, ‘এখন কোনো প্রস্তাব বাঞ্ছনীয় নয়।’ অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ প্রস্তাব নাকচের ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের যাদের বয়স ৫৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে তারা গৃহনির্মাণ ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। গত জুলাইয়ে জারি করা নতুন এ নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীরা ৫ শতাংশ সরল সুদে গৃহনির্মাণের জন্য সর্বনিম্ন ৩০ লাখ এবং সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর কাছে গৃহঋণ প্রাপ্তির বয়স বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ‘সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৩(খ)তে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতার অংশ বলা হয়েছে, ‘গৃহনির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছর।’ বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীদের চাকরি চলাকালীন বয়সসীমা ৫৯ বছর। নীতিমালা অনুযায়ী, ঋণ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছর হওয়া ১ জুলাই তারিখে ৫৬ বছর (পরিপত্র জারির তারিখে) অতিক্রান্ত হয়েছে এমন অনেক কর্মকর্তাই এ ঋণের সুযোগ গ্রহণ করতে পারছেন না। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা ঋণ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৬ বছরের পরিবর্তে ৫৮ বছর করা হলে সরকারি বহু কর্মচারী এ ঋণ সুবিধার মাধ্যমে উপকৃত হবেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।’
প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ‘এখানে উল্লেখ্য, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা অনুযায়ী কর্মকর্তাদের বিশেষ অগ্রিম প্রাপ্তির সুবিধা ৫৮ বছর নির্ধারিত রয়েছে। সে আলোকে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালায় বয়স ৫৮ বছর নির্ধারণ করা হলে উভয় ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রক্ষা করা সম্ভব হবে। ’
এ প্রস্তাব গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে তিনি সেখানে লিখেন, ‘এমন কোনো পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় নয়, নতুন সরকার আসলে সম্ভবত অবসরের বয়স ইত্যাদি সম্বন্ধে নয়া নীতিমালা আসবে। তখন এই বিষয়ে পরিবর্তন আনা যাবে’।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি প্রশাসনে কর্মরত অনেক অতিরিক্ত সচিবের বয়স ৫৬ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষাপটে বয়স বাড়ানোর একটি প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এ মতামত পাওয়ার পর আপাতত ঋণপ্রাপ্তির বয়স বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী বছরে নতুন যে সরকার আসুক না কেন বয়স বাড়ানোর প্রস্তাবটি আবার উত্থাপন করার সুযোগ রয়ে গেছে।
গত ৩০ জুলাই সরকারি কর্মচারীদের স্বল্পসুদে বর্ধিত হারে গৃহনির্মাণ ঋণ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে অর্থ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনের অনুসারে জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন একজন সরকারি চাকরিজীবী। এ ঋণের মোট সুদহার ১০ শতাংশ হবে। তবে এ ১০ শতাংশ সুদের ৫ শতাংশ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে এবং বাকি ৫ শতাংশ ঋণগ্রহীতা পরিশোধ করবে। ছয় মাস (ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে) থেকে এক বছরের (বাড়ি নির্মাণ) গ্রেস পিরিয়ডসহ (এই সময়ের মধ্যে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা লাগবে না) ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তবে কোনো সরকারি চাকুরের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় মামলা বা দুর্নীতির মামলা থাকলে ওই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই ঋণ পাবেন না। গতকাল অর্থবিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরেই প্রশাসনের উপসচিব পদে কর্মকর্তা সরকারের পক্ষ থেকে ৪৫ লাখ টাকা করে গাড়ি কেনার ঋণও অনুমোদন করা হয়। এ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা মাসে পাচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা। সাধারণ জনগণ যদি গৃহনির্মাণের জন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেন তবে তাকে সুদ গুনতে হয় ১১ শতাংশের ওপরে।