সরকার নির্ধারিত হারে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি নেয়ার দাবিতে চার শিক্ষককে ৫ ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে লোহাগাড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে কলেজের দুই কক্ষে তালা দিয়ে এ চার শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে বিকালে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদেরকে উদ্ধার করেন।
জানা যায়, সরকারি নির্ধারিত হারে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি করার দাবিতে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিল শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি আদায় না হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে কলেজের দুটি কক্ষে ৪ জন শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে দরজায় তালা দেয় বিক্ষুব্ধরা। এসময় তারা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। পরে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর বিকাল সোয়া ৪টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে বন্দি দশা থেকে মুক্তি পান শিক্ষকেরা।
অবরুদ্ধ চার শিক্ষক হলেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তোজাম্মেল, জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সেলিনা, হিসাবরক্ষণ বিভাগের শিক্ষক প্রনয় সাহা ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অশোক সাহা।
লোহাগাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম, রুমা দেব নাথ, জাহাঙ্গীর ও মুন্নিসহ অনেকেই অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়েছে। এ বছর ১৮২ জন শিক্ষার্থী এ কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। কলেজ কতৃপক্ষ ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়াও বেতন বাবদ ১ হাজার ২০০ টাকা ও সেশন চার্জ বাবদ ৪০০ টাকাসহ আনুষাঙ্গিক ফি মিলিয়ে মোট ৬ হাজার টাকা ফি নির্ধারণ করে। এতে, অসন্তোষ দেখা দেয় পরীক্ষার্থীর মাঝে। তারা অন্যান্য ফি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি নির্ধারিত ফি দিয়েই ফরম পূরণের সুযোগ চেয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেন। এতে ১২ ডিসেম্বর ফি কমিয়ে ৫ হাজার ১০০ টাকা ফি পুনঃনির্ধারণ করলেও সরকার নির্ধারিত হরে ফি নিচ্ছিল না কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাই, শিক্ষার্থীরা ৫ হাজার ১০০ টাকা ফি দিয়ে ফরম পূরণ না করে ১৫ ডিসেম্বর কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে। এরপর সেদিনই আবারো ১ হাজার টাকা কমিয়ে ৪ হাজার ১০০ টাকা ফি ধার্য করে কলেজের ফরমপূরণ কমিটি। এরপর ১৭ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে আবারো বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এবার কলেজ কর্তৃপক্ষ আবারো ফি পুনঃনির্ধারণ করে ৩ হাজার ৯৭০ টাকা ধার্য করেন।
তারা আরও জানান, এদিকে ১৯ ডিসেম্বর ফরম পূরণের শেষ দিন হওয়ায় বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের ওই দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় অধ্যক্ষ আজাহারুল ইসলাম সরকার কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। দাবি আদায়ে কোনো সুরাহা না পেয়ে কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক তোজাম্মেল, জীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সেলিনাকে কলেজের অফিস কক্ষে এবং হিসাব রক্ষণ বিভাগের শিক্ষক প্রনয় সাহা ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অশোক সাহাকে কলেজের অপর একটি কক্ষে তালাবন্দি করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করতে থাকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পীরগঞ্জ থানা পুলিশ কলেজে যায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে।
পরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম ও ইউএনও রেজাউল করিমসহ কর্মকর্তারা কলেজে উপস্থিত হন। তারা কলেজের অধ্যক্ষ আজাহারুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে তালা খুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আজাহারুল ইসলাম সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন।
ইউএনও রেজাউল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি অধ্যক্ষ নেই। তাকে ডেকে নিয়ে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান করা হয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি মেনে নিয়ে বিকাল ৪টায় কলেজের তালা খুলে দেয়া হয়েছে। এখন সরকার নির্ধারিত হারে ফি দিয়েই ফরম পূরণ করতে পারবে পরীক্ষার্থীরা।