সর্বজনীন পেনশন: তিন মাস চাঁদা না দিলে হিসাব স্থগিত - দৈনিকশিক্ষা

সর্বজনীন পেনশন: তিন মাস চাঁদা না দিলে হিসাব স্থগিত

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগণকে পেনশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকরা এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। আজীবন পেনশন সুবিধা পেতে ন্যূনতম ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হবে। পরপর তিন মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হয়ে যাবে। হিসাবটি সচল করা করতে জরিমানাসহ সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ করতে হবে।

১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর জেলা ও সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস। এর পরই বিধিমালা কার্যকর হবে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত (অনানুষ্ঠানিক খাত) ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’– এ চারটি স্কিমের কথা উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়।

এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।

বেসরকারি কর্মচারীরা মাসিক দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। প্রবাস স্কিমে মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫ হাজার, সাড়ে ৭ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা। সুরক্ষা স্কিমে কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সমতা স্কিমে চাঁদা মাসে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে গ্রাহক প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকার পরিশোধ করবে।

বিধিমালায় বলা হয়, চাঁদাদাতা যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁর অনুকূলে চালু করা স্কিমের পরিবর্তে অন্য স্কিম বা স্কিমের চাঁদা দেওয়ার হার পরিবর্তন করতে পারবেন। স্কিম রূপান্তরের ক্ষেত্রে রূপান্তরিত স্কিমে নতুন চাঁদার হিসাব পৃথক রেখে লভ্যাংশ ও পুঞ্জীভূত জমার অর্থের হিসাব করতে হবে, যা পূর্বতন স্কিমের পুঞ্জীভূত জমার সঙ্গে যুক্ত হবে। স্কিম রূপান্তরের কারণে মেয়াদপূর্তিতে মাসিক পেনশনের পরিমাণ পুনর্নির্ধারিত হবে।

দেশের নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে কোনো স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। যেসব প্রবাসীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা পাসপোর্টের ভিত্তিতে প্রযোজ্য স্কিমে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি পেনশন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়ন করা বা পুনঃইস্যু করা পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে।

বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ব্যক্তিরাও প্রযোজ্য স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে পেনশন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সব সুবিধা সমর্পণ করতে হবে। কোনো স্কিমে নিবন্ধনের জন্য দেশে ও প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফরম অনলাইনে পূরণ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ইউনিক আইডি নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে এবং অনিবাসী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে ই-মেইলের মাধ্যমে ইউনিক আইডি নম্বর, চাঁদার হার ও মাসিক চাঁদা প্রদানের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।

সোনালী ব্যাংকে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একটি কেন্দ্রীয় অ্যাকাউন্ট থাকবে। এ ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন স্কিমের আওতায় প্রত্যেক চাঁদাদাতার নামে একটি পৃথক পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। কর্পাস নামে এ অ্যাকাউন্টেই চাঁদাদাতার টাকা হিসাব করা হবে। কর্তৃপক্ষ প্রতি অর্থবছর শেষে সর্বজনীন তহবিলের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কর্পাস হিসাবের স্থিতির ওপর লভ্যাংশ ঘোষণা করবে। লভ্যাংশ পুনরায় কর্পাস অ্যাকাউন্টে জমা হবে। চাঁদাদাতার কর্পাস অ্যাকাউন্টে পুঞ্জীভূত জমার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ মাসিক পেনশন নিরূপণ করবে।

নিবন্ধনের পর অংশগ্রহণকারী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বা তপশিলি ব্যাংকের কোনো শাখার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা দেবেন। প্রবাসীরা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা দেবেন।

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়াই জমা দেওয়া যবে। তবে এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে জরিমানা গুনতে হবে। কিন্তু কোনো চাঁদাদাতা যদি ধারাবাহিকভাবে তিন মাস চাঁদা পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর পেনশন হিসাবটি স্থগিত হয়ে যাবে। এরপর জরিমানাসহ সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।

চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখপূর্বক যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা দিতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে একত্রে পেনশন তহবিলে জমা দিতে হবে। সব স্কিমের জন্য চাঁদার কিস্তি চাঁদাদাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।

কোনো চাঁদাদাতা চাঁদা প্রদানকালে শারীরিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে স্থায়ী বা সাময়িকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্মহীন ও উপার্জনে অসমর্থ হলে তাঁকে অসচ্ছল চাঁদাদাতা হিসেবে ঘোষণার জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন। অসচ্ছলতা নির্ণয়ে কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথক পৃথক মেডিকেল বোর্ড গঠন করবে। এ ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের দায়িত্বে থাকবে অর্থ বিভাগ। কোনো চাঁদাদাতা অসচ্ছল হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা পরিশোধ না করলেও তাঁর পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে না।

এ ছাড়া কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন চাঁদাদাতার নমিনি বা উত্তরাধিকার চাঁদার কিস্তি নিয়মিত জমা দিয়ে স্কিমটি চালু রাখতে পারবেন। মেয়াদ শেষে ওই স্কিমের বিপরীতে পেনশনের অর্থ নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা তুলতে পারবেন। চাঁদাদাতা নিখোঁজ হওয়ার সাত বছর অতিক্রান্ত হলে পেনশনের প্রাপ্যতা অর্জিত হওয়া সাপেক্ষে তাঁকে নিখোঁজ পেনশনার হিসেবে গণ্য করে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। পেনশনার তাঁর বয়স ৭৫ বছর হওয়ার আগেই নিখোঁজ হলে সাত বছর পর নমিনি বা উত্তরাধিকারীদের মাসিক ভিত্তিতে পেনশন প্রদান করা হবে। যদি পেনশনভোগী ৭৫ বছরের আগে মারা যান, তাহলে তাঁর নমিনি সেই বয়স (৭৫) পর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন। 

 

একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014024972915649