সাত শিক্ষার্থীর জন্য ১৮ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত! - দৈনিকশিক্ষা

সাত শিক্ষার্থীর জন্য ১৮ শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত!

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি |

ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার একটি এমপিওভুক্ত মাদরাসায় সাতজন শিক্ষার্থী মাত্র। এমপিওভোগ করছেন ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষার্থী সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়মিত এমপিও বাবদ সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করছেন। কাগজে কলমে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ৬০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তিও পাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেছেন, বছরের শুরুতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকলেও স্থানীয় দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থী কমছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ কাগজে কলমে বেশি শিক্ষার্থী দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরা এমপিওভোগ করছেন। সম্প্রতি ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দও পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

সব মাদরাসায় চলছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষায় মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নেয়ার কথা থাকলেও রানীশংকৈলের ভরনিয়া দাখিল মাদরাসায় পরীক্ষা দিচ্ছেন মাত্র সাত জন শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে জানা যায়, উপজেলা শহর থেকে মাদরাসার দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ভরনিয়া দাখিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আর এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। একসময় নামডাক থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন পরিণত হয়েছে সাত শিক্ষার্থীর মাদরাসায়। প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ১৮ জন। নিয়মিত বেতনও নিচ্ছেন তারা। ইবতেদায়ি থেকে দাখিল পর্যন্ত রয়েছে দশটি শ্রেণি কক্ষ। কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী রয়েছে ২৪৫ জন। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নেয়া সাত শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন ষষ্ঠ শ্রেণির একজন, সপ্তম শ্রেণির একজন এবং নবম শ্রেণির পাঁচজন। পরীক্ষা চলাকালে দেখা গেছে, শিক্ষকরা অফিসে বসে আড্ডা মারছেন, আর ৭ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন বই খুলে!

এদিকে, শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণের বরাদ্দও পেয়েছে। মাদরাসার নামে ১৫ বিঘা আবাদি জমি থাকলেও সেগুলো বন্ধক দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। 

ভরনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাদরাসায় নতুন সুপার আসার পর থেকে মাদরাসার অবস্থা করুন। ছেলেমেয়েরা মেট্রিক পাস করতে পারে না, সব ফেল করে। প্রতিষ্ঠানের অনেক পুরানো গাছ ছিল, সেগুলো কেটে ফেলা হয়েছে। মাদারাসায় এখন কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। মাদরাসার জমি আছে সেগুলোও বন্ধক দেয়া হয়েছে।

একই গ্রামের বাবুল হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকরা ঠিকভাবে ডিউটি পালন করে না, ছাত্রছাত্রীরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বলেন, ‘যেখানে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিতি বাড়াতে কারও কোনো পদক্ষেপ নাই। সেখানে কর্মচারী নিয়োগে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য এবং মাদরাসার জন্য ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন বরাদ্দ হয় কিভাবে?’

মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য আব্দুল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘কমিটির কোনো মিটিং হয় না। ছাত্র-ছাত্রী এখন ৬-৭ জন। শিক্ষকরা সময়মতো আসেন না। ৬০ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পায়। এই টাকা কোথায় যায়, কে পায়? একদিন মাদরাসায় গিয়ে দেখি ৫ জন শিক্ষক এসেছে, এর মধ্যে একজন ঘুমাচ্ছে।’

ভরনিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আতাউর রহমান সাতজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার তথ্য স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ছাত্র-ছাত্রীদের আসার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কাজ-কামের জন্য ছাত্ররা আসছে না। করোনার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে নাই। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী থাকলেও করোনার কারণে শিক্ষার্থী কমেছে। প্রতিষ্ঠানে ১৮ জন শিক্ষক কর্মচারী এমপিওভুক্ত আছেন নিশ্চিত করে সুপার আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের সুপার, সহকারী সুপারসহ ১৪ জন শিক্ষক ও ৪ জন কর্মচারী এমপিওভুক্ত।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্থানীয় জনগণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখি কোনো ছাত্র-ছাত্রী নেই। কয়েকজন শিক্ষক আছেন, সুপারও ছিলেন না। একটি ক্লাস রুমে প্রবেশ করে দেখি সেখানে ছাগল ও বাদুরের মল। যা আমাকে হতবাক করেছে। পড়ালেখাও হয় না, বিষয়টি আমি মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাতে জানিয়েছি। 

রানীশংকৈল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৈয়ব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি যোগদান করার প্রায় এক মাস হলো। এসে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে মতবিনিময় করেছি। কিন্তু মাদরাসা পর্যায় এখনো তা করা সম্ভব হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে যদি অনিয়ম পাওয়া যায়. তাহলে
ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE   করতে ক্লিক করুন।

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার - dainik shiksha ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা: শিক্ষক-শিক্ষার্থী বহিষ্কার অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের - dainik shiksha অবন্তিকার আত্মহত্যা: সাতদিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের আশ্বাস জবি উপাচার্যের হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের - dainik shiksha হয়রানির প্রতিকার চেয়েও ফল পাননি অবন্তিকা, অভিযোগ মায়ের নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম: শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়লে মিলছে না মূল্যায়ন মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা - dainik shiksha মূল্যায়ন বুঝলেও নৈপুণ্য অ্যাপে চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষকরা ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো - dainik shiksha ‘পড়তে ও লিখতে’ শেখা প্রকল্প কেনো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067009925842285