তাসনুভার বয়স ছয় বছর। মা-বাবার ইচ্ছা ওকে ভালো একটি স্কুলে ভর্তি করার। সে ক্ষেত্রে পছন্দের প্রথমেই রয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিন্তু সন্তানের জন্ম সনদের অভাবে তাঁরা আবেদনই করতে পারছেন না। কারণ সার্ভার জটিলতায় আটকে গেছে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অফিসের ভর্তি সনদ প্রদান কার্যক্রম। আর আজ শনিবারই শেষ হয়ে যাচ্ছে আবেদনের সময়সীমা। ঢাকার পাশাপাশি সারা দেশেই সার্ভার জটিলতায় জন্ম সনদ প্রদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকায় জন্ম সনদ দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ দুই সিটি করপোরেশন, তবে ১৫ দিন ধরে সার্ভার ডাউনের কারণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৩ অফিস জন্ম নিবন্ধন সনদ দিতে পারছে না। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন তাসবিনের মতো আরো সাত শতাধিক শিশুর অভিভাবকরা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে এমন অঞ্চল আছে ১০টি। সব অফিসের চিত্র একই।
ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ অফিসে গতকাল শুক্রবার তাসনুভার মামা আবুল হায়াত বলেন, ‘তিন দিন আসলাম, কিন্তু এখনো সনদ পাইনি। আগামীকালের (শনিবার) মধ্যে না পেলে ভাগ্নির জন্য এবার ভিকারুননিসায় আবেদনই করতে পারব না। কারণ শনিবার আবেদন করার লাস্ট ডেট।’
আরেক অভিভাবক লিয়াকত আলীও গতকাল সকাল ১০টা থেকে এসে বসে ছিলেন ডিএনসিসি অঞ্চল-৩ অফিসে। উদ্দেশ্য, সন্তানের জন্ম সনদ সংগ্রহ করা। কিন্তু তাঁকেও বিফল মনে ফিরে যেতে হয়। তিনি বললেন, ‘গত বুধবার থেকে রোজ আসছি, কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন সমস্যাটা বিবেচনায় নিয়ে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ ভর্তি আবেদনের সময়টা বাড়ালে ভালো একটি বিকল্প হতে পারত।’
জন্ম সনদ নিতে এসে অপেক্ষায় থাকা আরেক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত বছরও এই সময়ে জন্ম সনদ নিতে এসে একই ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ে এসেই কেন সার্ভারের এই সমস্যা হবে সেটি একটি প্রশ্ন বটে। এবার বলা হচ্ছে যে আপডেট করার কাজ চলায় সার্ভার ডাউন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কাজটি অন্য সময়েও করতে পারতেন। স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম চলার এই সময়ে জন্ম সনদের চাহিদাটা তাঁদের মাথায় রাখা উচিত ছিল।
ডিএনসিসি অঞ্চল-৩-এ কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমরাও ভোগান্তিতে আছি। সারা রাত কম্পিউটার বন্ধ করি নাই। রাতে যেগুলা ইনপুট দিছি, এখনো বাইর হয় নাই। আমরা বাসায়ও যাই নাই। এত যে কষ্ট করলাম লাভ হইলো কই? সকাল থেইক্যা এখন পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) একটা কাজও করতে পারি নাই।’
জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্তদের একজন ডিএনসিসির অঞ্চল-৩-এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে আমাদের সেন্ট্রাল সার্ভারের কাজ চলছে। ফলে সার্ভারের গতি ধীর হয়ে গেছে। দুই দিন আগে পুরো এক দিন কোনো কাজই হয়নি। ফলে এত আবেদন জমে গেছে। বাস্তবতা বিবেচনা করেই আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমরা অফিস খোলা রেখেছি। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরই মধ্যে আমরা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-২-এর নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জো বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে আমাদের সার্ভার ডাউন। ফলে দক্ষিণের পাঁচটি অঞ্চলেই জন্ম সনদের অনেক আবেদন জমা পড়ে গেছে। আমরা দিন-রাত কাজ করছি। যখনই সার্ভারে গতি আসছে তখনই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে জন্ম নিবন্ধন সনদ দেওয়া রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের প্রগ্রামার ফাহমিদা শিরিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি উল্টো অভিভাবকদের দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সন্তান জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম সনদ সংগ্রহ করা উচিত। অভিভাবকরা সন্তান স্কুলে ভর্তির আগে একসঙ্গে সনদের জন্য ভিড় জমালে আমাদের ওপরও বাড়তি চাপ পড়ে। তার পরও আমরা বসে নেই। সার্ভারে কাজ চলছে। আর সার্ভার ডাউন হওয়ার বিষয়টি আমরা আগেই দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।’ কবে নাগাদ সার্ভারের এই সমস্যা কাটতে পারে সে সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান।
এদিকে সমস্যাটি শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সার্ভারে ধীরগতির কারণে সারা দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় জন্ম সনদ প্রদান কার্যক্রম একপ্রকার থেমে আছে। সন্তানের ভর্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রমে জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যথারীতি ভোগান্তিতে পড়ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।