দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। এ অঙ্গনে আইন চর্চা করতে অনুমতি আছে প্রায় দশ হাজার আইনজীবীর। মেধাবী ও বিচক্ষন আইনজীবীদের নেতৃত্ব দিতে রয়েছে একটি সমিতিও। যেটি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি হিসেবেই পরিচিত। এ সংগঠনটি কাজ করছে বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় ও আইনজীবীদের কল্যানে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচন করবেন আইনজীবীরা। দল-মতের উর্দ্ধে উঠে এ সমিতির নেতৃত্ব দিতে হয়। মূলত পেশাগত দিকটাই এখানে মুখ্য।
ফলে ২০২১-২২ সেশনের নির্বাচনে সম্পাদক পদে লড়তে কাজ শুরু করেছেন বাংলাদেশ সনাতন হিন্দু আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর।নির্বাচিত হলে বারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডই হবে তার মূখ্য উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে তার একটি সাক্ষাতকার নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম মল্লিক।
দৈনিক শিক্ষা: নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নে আপনার ভূমিকা কি থাকবে?
গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর: নেতা নির্বাচিত হলে সুপ্রিম কোর্ট বারে পেশাগত মান-উন্নয়নের জন্য অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সেই ব্যাপারে আমি অনেক আগে থেকে ভূমিকা রাখছি। বিশেষ করে আরও ১২/১৪ বছর আগে আমি আইনজীবীদের মর্যাদা নিয়ে একটি সংগঠন করেছিলাম। সেই সংগঠনে ৫ শত আইনজীবী সদস্য আছেন। আইনজীবীদের অবস্থা ও মর্যদা কোথায় এবং বাস্তবে তাদের কতটুকু সমাজিক মর্যাদা আছে সেই ব্যাপারে আমরা উন্নয়নের চেষ্টা করছি।
আমরা (আইনজীবীরা) কোর্ট অফিসার যা বিভিন্ন জাজমেন্ট বা রায়ে প্রকাশ করা হয়েছে। আমাদের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে আমরা ফাস্ট ক্লাস সিটিজেন। কোর্ট অফিসার। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। শুধু সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনের ভিতরে বিজ্ঞ শব্দটি বলা হয়। বাইরে কিন্তু আমাদের অবস্থা সেটি না।
দৈনিক শিক্ষা: আদালতের রায়ে আইনজীবীদের মর্যাদা নিয়ে কি বলা হয়েছে?
গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর: সুপ্রিমকোর্টের জাজমেন্ট বলা হয়েছে যে আইনজীবীরা দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক। আমাদের দেশের আদালতে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউসুফ ও রহিমা বেগম এবং অন্যান্য প্রতিপক্ষ একটি মামলায় আইনজীবীদের এমন মর্যাদা দেয়া হয়েছে। আইনজীবীর অবস্থান ও ভূমিকা উল্লেখ করে তাদের মর্যাদা বা সম্মান আরও সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত।
আমি মনে করি একজন আইনজীবী শুধুমাত্র মক্কেল বা ভূক্তভোগী মানুষের আইন পরিচালনায় সহযোগিতা করেন না। বিজ্ঞ কোর্টকেও সহযোগিতা করেন। আইনজীবীদের সহযোগিতার কারণেই আদালত বিভিন্ন মামলার রায় দিতে সুবিধা পান। সেই সাথে বিভিন্ন পাবলিক লিটিগেশন মামলায় আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকাও আছে।
আইনজীবীদের ভূমিকার কারনেই ভূক্তভোগী মানুষ উপকৃত হচ্ছে। সংসদে আইন পাশ হচ্ছে এবং মাননীয় আদালত অনেক দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়ে আসছেন । বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্য থেকে অনেকেই মন্ত্রী হয়েছেন, সংসদ সদস্য হয়েছেন, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি একজন বিজ্ঞ আইনজীবী। স্পীকার ডেপুটি স্পীকার বিজ্ঞ আইনজীবী, মাননীয় আইন মন্ত্রী একজন আইনজীবী, রেল মন্ত্রী ও গণপূর্ত বিষয়ক মন্ত্রী, বিমান মন্ত্রী সবাই আইনজীবী। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা আছে। তাদের সামাজিক কর্মকাণ্ড আছে।
কিন্তু বিজ্ঞ আইনজীবীগণ সবাই সমানভাবে আয় করতে পারছেন না। যারা ভালো আইনজীবী তাদের অনেক মামলা আছে তারা লাভবান হচ্ছেন। আবার অনেক আইনজীবী আছেন তাদের ইনকাম অনেক কম। এমনকি তারা নিজের বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। করোনার কারণে বেশি অসুবিধা হয়েছে নবীন আইনজীবীদের। সেই কারণে আমি মনে করি বারের সাম্পদক নির্বাচিত হলে আমি তাদের জন্য কাজ করব। যাতে করে তাদের দৈনিক আয়টা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় বা তাদেরকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় আমি সেই প্রচেষ্টা করবো। তারা আর্থিকভাবে বা স্বাস্থ্যগতভাবে যদি কোনো সম্যসার সম্মুখীন হন তাহলে তাদের পাশে দাড়াবে।
বিজ্ঞ আইনজীবীদের জন্য প্রচুর আবাসিক প্লট দরকার সেই ব্যাপারে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সহযোগিতা চাইবো। অনেক বিজ্ঞআইনজীবী বেনাভোলেন ফান্ড পাচ্ছেন না। বিশেষ করে যাদের বয়স ৩৫ বছরের উর্ধ্বে। তারা যেন বেনাভোলেন ফান্ডের টাকা সহজেই পান এবং সেটা যেন জীবন্ত অবস্থায় পান সেই ব্যাপারে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
দৈনিক শিক্ষা: আইনজীবীদের বসার জায়গার সংকট, পূরণ করবেণ কিভাবে?
গৌরাঙ্গচন্দ্র কর: আমি জানি কোর্টে অনেক আইনজীবীর বসার স্থান নেই। আইনজীবী কোথায় বসে মামলা করবেন সেটার কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্তমান পরিস্থিততিতে আনলাইনে মামলা করার সময় অনেক সমস্যায় পড়ছেন আইনজীবীরা। কিন্তু কিউবিক্যাল বা বসার জায়গা না থাকায় আইনজীবীর সঠিকভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারছেন না। হলরুমে বসে আনলাইনে মামলা করা যায় না। অনলাইনে মামলা পরিচালনা করতে নিরিবিলি পরিবেশের প্রয়োজন। আমি নির্বাচিত হলে প্রত্যেক আইনজীবী যেন চেম্বার পান সে ব্যাপারে আমি গুরুত্বর্পূন ভূমিকা রাখবো। আমি দেখেছি একটা স্মাট মোবাইল কেনার টাকা না থাকায় অনলাইনে মামলা করতে পারছেন না।
আমি অনেককেই জিজ্ঞাসা করেছি আপনার মোবাইল আছে? উত্তরে তারা জানিয়েছে না আমার মোবাইল নেই এজন্য অনলাইনে মামলার কার্যাক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। যে সব আইনজীবী ১৫/২০ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল কিনে কোর্ট করার সামর্থ রাখেন না তারা কিভাবে কম্পপিউটার কিনে আনলাইনে কোর্ট করবেন? নির্বাচিত হলে আমি এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
দৈনিক শিক্ষা: আইনজীবীদের প্রার্থনা ও খেলাধুলার জন্য কি ধরনের পরিকল্পনা আছে আপনার?
গৌরাঙ্গচন্দ্র কর: সুপ্রিম কোর্টে একটি বড় মসজিদ করা প্রয়োজন। যেটা আমি দীর্যদিন যাবত লক্ষ করছি। নামাজিরা যারা নামাজ পরেন তাদের কষ্ট হচ্ছে। কাজেই বহুতল ভবন করে একটি মসজিদ নির্মাণ হওয়া দরকার। সেই সাথে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সরস্বতী পূজা করতে মন্দিরের জায়গা করার ব্যাপারে উদ্দ্যোগ নিব। আমাদের এখানে ব্যাটমিন্টন খেলারমত বা অন্যান্য খেলাধুলার জায়গা নেই। আমি নির্বাচিত হলে এ গুলো করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করবো।
দৈনিক শিক্ষা: বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয় করবেন কিভাবে?
গৌরাঙ্গচন্দ্র কর: দেখুন মামলা নিষ্পতিতে ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আদালত ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে সমন্বয় করা খুবই প্রয়োজন। কারণ বার (আইনজীবী সমিতি) ও বেঞ্চ (আদালত) এর মধ্যে পারস্পারিক সমন্বয় না থাকলে কোনো সুফল বয়ে আসবে না।
দৈনিক শিক্ষা: মুক্ত চর্চার জায়গা সুপ্রিম কোর্ট, আইনজীবীদের আনন্দ বিনোদনের জন্য আপনার পরিকল্পনা কি?
গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর: বিজ্ঞ আইনজীবীদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধতা প্রয়োজন। বিশেষ করে আমি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনেন সঙ্গে জড়িত। আমি দেশীয় সাংস্কৃতিক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
এই সংগঠনের পক্ষ থেকে টেন্ডার নাম্বারের প্রস্তাব করা হলে তা বাস্তবায়িত হয়।
বাংলায় রায় দেয়ার প্রস্তাব আমাদের সংগঠন খেকে করেছিলাম। তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
আমি ১৫ বছর যাবত বারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে আসছি। অনেকেই কিন্তু এই সাংস্কৃতিক সংঘটনের সাথে জড়িত। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল আছেন এবং বারের নেতাবৃন্দ আছেন তাদের সঙ্গে জড়িত থেকে এই অঙ্গনে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আরও উন্নতি করতে চেষ্টা করব।
গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর ২০ বছর যাবত সুপ্রিম কোর্টে আইনী পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি বাংলাদেশ সনাতন হিন্দু আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এই সংগঠনটি পুরোপুরিভাবে তাকে সমর্থন দিয়েছে। জানা গেছে সুপ্রিম কোর্ট বারে প্রায় ৬শ হিন্দু আইনজীবী আইনী পেশায় নিয়োজিত আছেন। বঙ্গবন্ধু ফাইনডেশন সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। মানবাধিকার সংগঠন এলার্ট এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন গৌরাঙ্গ চন্দ্র কর।